ধর্ম ডেস্ক
১১ অক্টোবর ২০২২, ০৩:৪৯ পিএম
দুনিয়ায় ভালো কর্মের প্রতিদান জান্নাত। মুমিন বান্দা সেখানে যেসব নেয়ামত ভোগ করবে তা দুনিয়ার কর্মের ভিত্তিতেই হবে। আর তা হবে চিরস্থায়ী। পবিত্র কোরআনের বহু আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর ঈমানদার বান্দাদের জান্নাত দানের ঘোষণা দিয়েছেন, যেখানে দুঃখ-কষ্ট বলতে কিছু থাকবে না। যেখানকার নেয়ামতগুলো কল্পনার চেয়েও সুন্দর হবে।
পবিত্র কোরআনে অনিন্দ্য সুখের জান্নাতকে মুমিনদের মহাসফলতা বলে অভিহিত করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ মুমিন পুরুষ ও নারীদের জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন, যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে নহর, তাতে তারা চিরদিন থাকবে এবং (ওয়াদা দিচ্ছেন) স্থায়ী জান্নাতে পবিত্র বাসগৃহের। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে সন্তুষ্টি সবচেয়ে বড়। এটাই মহাসফলতা।’ (সুরা তাওবা: ৭২)
জান্নাতের সেই দালানগুলো কিসের তৈরি হবে, তা জানতে মুমিনের হৃদয় ব্যাকুল হওয়াই স্বাভাবিক। সেই ব্যাকুলতা থেকেই হয়ত আনাস (রা.) প্রিয়নবী (স.)-কে জান্নাতের বাসগৃহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। প্রিয়নবী (স.)-ও তাঁর প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। জান্নাতের প্রাসাদে ব্যবহৃত ইট, সিমেন্ট, কঙ্কর ইত্যাদির বর্ণনা রয়েছে সেই জবাবে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমাদের কী হলো যে আমরা আপনার কাছে থাকা অবস্থায় আমাদের অন্তর খুবই নরম হয়ে যায়, আমরা দুনিয়ার প্রতি উদাসীন হয়ে যাই এবং নিজেদের পরকালবাসীদের অন্তর্ভুক্ত মনে করতে থাকি। তারপর আপনার কাছ থেকে সরে গিয়ে পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে গিয়ে পার্থিব কাজে জড়িয়ে পড়ি এবং সন্তানাদির সুগন্ধি পেতে থাকি, তখন আমাদের অবস্থা সম্পূর্ণ উল্টো হয়ে যায়।
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমরা যে অবস্থায় আমার কাছ থেকে বেরিয়ে যাও, সবসময় যদি সেই অবস্থায় থাকতে, তাহলে ফেরেশতারা তোমাদের বাড়িতে গিয়ে তোমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করত। আর তোমরা অপরাধ না করলে আল্লাহ নতুন প্রাণী সৃষ্টি করতেন, যাতে তারা অপরাধ করে আর তিনি তাদের ক্ষমা করেন।’ আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসুল, কী দিয়ে প্রাণী সৃষ্টি করা হয়েছে? তিনি বলেন, ‘পানি দিয়ে।’ আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, কী দিয়ে জান্নাত তৈরি করা হয়েছে? তিনি বলেন, ‘সোনা-রুপার ইট দিয়ে। একটি রুপার ইট, তারপর একটি সোনার ইট, এভাবে গাঁথা হয়েছে। এর গাঁথুনির উপকরণ (চুন-সুরকি-সিমেন্ট) সুগন্ধি মৃগনাভি এবং কঙ্করসমূহ মণি-মুক্তার ও মাটি হলো জাফরান। জান্নাতে প্রবেশকারী লোক অত্যন্ত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে থাকবে, কোনো দুঃখ-কষ্ট ও অভাব-অনটন তাকে স্পর্শ করবে না। সে অনন্তকাল এতে অবস্থান করবে আর মৃত্যুবরণ করবে না। না তার পরনের পোশাক পুরনো হবে আর না তার যৌবনকাল শেষ হবে।’
তিনি পুনরায় বলেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না; ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া, রোজাদারের ইফতারের সময়কালীন দোয়া এবং মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা একে (মজলুমের দোয়া) মেঘমালার ওপর তুলে নেন, তার জন্য আকাশের দরজাগুলো উন্মুক্ত হয়ে যায় এবং আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার ইজ্জত ও সম্মানের শপথ! কিছু দেরিতে হলেও আমি তোমাকে সাহায্য করব।’ (তিরমিজি: ২৫২৬)
এছাড়া বিভিন্ন হাদিসে জান্নাতিদের মণি-মুক্তার তাঁবু দেওয়ার ঘোষণাও এসেছে। আবদুল্লাহ ইবনু কায়স (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘জান্নাতে মুমিনদের জন্য ভেতর ফাঁকা মুক্তার তাঁবু হবে। এর প্রস্থ হবে ৬০ মাইল। এর প্রত্যেক প্রান্তেই পরিবার (স্ত্রী) থাকবে। তারা ঘুরে ঘুরে তাদের সঙ্গে মেলামেশা করবে, অন্যদের দেখতে পাবে না।’ (সহিহ মুসলিম: ৬৮৯৫) আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জান্নাতের সুমহান মর্যাদা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।