ধর্ম ডেস্ক
০৭ অক্টোবর ২০২২, ১১:০৭ এএম
ফেরেশতা নূরের তৈরি আল্লাহর শক্তিশালী এক সৃষ্টির নাম। সাধারণত তাদের বাসস্থান আসমানে। তারা নিষ্পাপ। নিজস্ব জগতে তাদের আকার-আকৃতি আছে কিন্তু মানুষের কাছে অপ্রকাশ্য। মহান আল্লাহ ফেরেশতাদের বিশেষ শক্তি ও সামর্থ্য দিয়েছেন। ফলে তারা বিভিন্ন রূপ ধারণ করতে পারেন এবং যেকোনো স্থানে সহজে যেতে পারেন। ফেরেশতাদের ওপর বিশ্বাস রাখা ঈমানের ছয়টি রুকনের অন্তর্ভুক্ত। ঈমান সম্পর্কে জিব্রাইল (আ.)-এর প্রশ্নের জবাবে নবী (স.) বলেছেন, ‘তুমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করবে ১) আল্লাহর ওপর ২) তাঁর ফেরেশতাদের ওপর ৩) তাঁর কিতাবসমূহের ওপর ৪) তাঁর রাসুলদের ওপর ৫) আখেরাত বা শেষ দিবসের ওপর এবং ৬) তাকদিরের ভালো-মন্দের ওপর।’ (সহিহ মুসলিম: ৮, কিতাবুল ঈমান)
ফেরেশতারা মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে নবী ও রাসুলদের কাছে বিভিন্ন বার্তা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘সব প্রশংসা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহরই, যিনি বাণীবাহক করেন ফেরেশতাদের, যারা দুই দুই, তিন তিন অথবা চার চার পাখাবিশিষ্ট। তিনি সৃষ্টিতে যা ইচ্ছা বৃদ্ধি করেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।’ (সুরা ফাতির: ১)
আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) উল্লেখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, আল্লাহ ফেরেশতাদের তাঁর ও রাসুলদের মধ্যে বাণীবাহক হিসেবে প্রেরণ করেন। তারা ডানাবিশিষ্ট এবং এর সাহায্যে তাঁরা উড়ে দ্রুততম সময়ে নির্দেশিত স্থানে পৌঁছে যান। তাদের কারো ডানা দুটি করে, কারো ডানা তিনটি করে এবং কারো ডানা চারটি করে। তবে তাদের কারো কারো ডানার সংখ্যা চারের চেয়েও বেশি। (তাফসিরে ইবনে কাসির: ৬/৫৩২)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (স.) জিবরাইল (আ.)-কে ৬০০ ডানাবিশিষ্ট অবস্থায় দেখেন। (সহিহ বুখারি: ৪৮৫৭)
অবশ্য ফেরেশতারা তাদের ডানা শুধু ওড়ার কাজে ব্যবহার করেন না; বরং এর মাধ্যমে তারা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের প্রতি সম্মান প্রকাশ করে থাকেন। যেমন রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যখন আল্লাহ তাআলা আকাশে কোনো বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেন, তখন ফেরেশতারা তাঁর কথা শোনার জন্য অতি বিনয়ের সঙ্গে নিজ নিজ পালক ঝাড়তে থাকেন মসৃণ পাথরের ওপর শেকলের শব্দের মতো। এভাবে আল্লাহ তাঁর বাণী ফেরেশতাদের পৌঁছান। যখন ফেরেশতাদের অন্তর থেকে ভয় দূর হয়, তখন তারা একে অপরকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমাদের প্রভু কী বলেছেন? তখন তারা বলেন, যা সত্য তিনি তাই বলেছেন, এবং তিনি অতি উচ্চ মহান।’ (সহিহ বুখারি: ৪৭০১)
জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, উহুদের যুদ্ধ শেষে আমার পিতাকে নবী (স.)-এর কাছে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাটা অবস্থায় আনা হলো এবং তাঁর সামনে রাখা হলো। আমি তাঁর চেহারা খুলতে চাইলাম। আমার গোত্রের লোকেরা আমাকে নিষেধ করল। এমন সময় তিনি কোনো বিলাপকারিণীর বিলাপ ধ্বনি শুনতে পেলেন। বলা হলো, সে ‘আমরের কন্যা বা ভগ্নি। অতঃপর নবী (স.) বললেন, সে কাঁদছে কেন? অথবা বলেছিলেন, সে যেন না কাঁদে। ফেরেশতামণ্ডলী তাকে ডানা দ্বারা ছায়াদান করছেন। (সহিহ বুখারি: ২৮১৬)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শক্তিশালী সৃষ্টি ফেরেশতাদের ওপর এবং তাদের বিভিন্ন দায়িত্ব ও মর্যাদার ওপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।