images

ইসলাম

ক্ষত-বিক্ষত হৃদয়ে তায়েফ ছাড়ার সময় যে দোয়া পড়েছিলেন নবীজি

ধর্ম ডেস্ক

০৪ অক্টোবর ২০২২, ১২:৫৭ পিএম

চাচা আবু তালেব ও স্ত্রী খাদিজা (রা.) দুই প্রিয় মানুষকে হারিয়ে দুঃখ, দুশ্চিন্তা ও মনোবেদনায় কাতর হয়ে পড়েন নবীজি (স.)। অন্যদিকে কাফেররা প্রকাশ্যে রাসুল (স.)-কে কষ্ট দিতে শুরু করল। ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেছেন, আবু তালেবের ইন্তেকালের পর কোরাইশরা নবী (স.)-এর ওপর এত বেশি নির্যাতন চালিয়েছিল, যা তাঁর জীবদ্দশায় তারা চিন্তাও করতে পারেনি। (ইবনে হিশাম, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৪১৬)

রাসুলুল্লাহ (স.) আশ্রয়ের খোঁজে তায়েফ চলে যান। কিন্তু সেখানে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে ওঠে। তিনি সেখানে কোনো সাহায্যকারী পেলেন না এবং তাঁকে কেউ আশ্রয়ও দিলো না। এমনকি একজন লোকও দীনের দাওয়াত কবুল করল না। বরং তারা তাঁকে আরও বেশি কষ্ট দিলো। এত কষ্ট তিনি ইতোপূর্বে তাঁর জাতির লোকদের থেকেও ভোগ করেননি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁরই মুক্ত করা ক্রীতদাস জায়েদ ইবনে হারেসা (রা.)। রাসুল (স.) তায়েফে ১০ দিন অবস্থান করেন। এ সময়ে তিনি তায়েফের সকল গোত্রীয় সর্দারদের কাছে দীনের দাওয়াত দেন। কিন্তু সবাই একই কথা বলল যে, তুমি আমাদের শহর থেকে বেরিয়ে যাও। শুধু এ কথা বলেই ক্ষান্ত হয় নি; বরং তারা দুষ্ট বালকদের তাঁর বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়। ফেরার পথে তায়েফের মূর্খ ও দুষ্টরা তাঁর পিছে লাগল। তারা আল্লাহর রাসুলকে গালি দিচ্ছিল, তাঁর পিছনে হৈচৈ করছিল এবং পাথর নিক্ষেপ করছিল। পাথরের আঘাতে তাঁর শরীর থেকে রক্ত ঝরে পায়ের জুতা দুটি লাল হয়ে গেলো। জায়েদ ইবনে হারেসা (রা.) প্রিয়নবী (স.)-কে রক্ষা করছিলেন। একটি পাথর এসে তাঁর মাথায় লেগে গেল। এতে তাঁর মাথা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেল। নবীজি (স.) তায়েফ থেকে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে মক্কায় ফিরে আসলেন। ফেরার পথে তিনি আল্লাহর দরবারে এই প্রসিদ্ধ দোয়াটি করলেন—

اللّٰهُمَّ إِلَيْكَ أَشْكُو ضَعْفَ قُوَّتِى، وَقِلَّةَ حِيلَتِى وهَوَانى عَلَى النَّاس يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ، أَنْتَ رَبُّ المُسْتَضْعَفِينَ، وأَنْتَ رَبَّى إلَى مَنْ تَكِلَنِى إِلَى بَعِيدٍ يَتَجَهَّمُنِى؟ أوْ إلى عَدوٍّ مَلَّكْتَهُ أَمْرِى، إنْ لَمْ يَكُنْ بِكَ غَضَبٌ عَلَىَّ فَلاَ أُبَالِى، غَيْرَ أَنَّ عَافِيتَكَ هِى أَوْسَعُ لى، أَعُوذُ بِنُورِ وَجْهِكَ الَّذِى أَشْرَقَتْ لَهُ الظُّلُمَاتُ، وَصَلُحَ عَلَيْهِ أَمْرُ الدُّنيا وَالآخِرَةِ أَنْ يَحِلَّ عَلَىَّ غَضَبُكَ أوْ أَنْ يَنْزِلَ بى سَخَطُك، لك العُتبى حَتَّى تَرْضَى وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلا بِكَ

‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে স্বীয় দুর্বলতা, (মানুষকে বুঝাতে) আমার কলা-কৌশলের স্বল্পতা এবং মানুষের কাছে আমার মূল্যহীনতার অভিযোগ করছি। হে সর্বাধিক দয়ালু! তুমি দুর্বলদের প্রভু, আমারও প্রভু। তুমি আমাকে কার কাছে ন্যস্ত করছ? তুমি কি আমাকে দূরের এমন অচেনা কারও হাতে ন্যস্ত করছ, যে আমার সঙ্গে কঠোর ব্যবহার করবে? নাকি কোনো শত্রুর হাতে সোপর্দ করছ, যাকে তুমি আমার বিষয়ের মালিক করে দিয়েছ? তুমি যদি আমার উপর রাগান্বিত না হও তাহলে আমি কোনোকিছুই পরওয়া করি না। তবে নিঃসন্দেহে তোমার ক্ষমা আমার জন্য সর্বাধিক প্রশস্ত ও প্রসারিত। আমি তোমার সেই চেহারার আলোর আশ্রয় চাই, যা দ্বারা অন্ধকার দূরিভূত হয়ে যায় এবং যা দ্বারা দুনিয়া ও আখেরাতের সকল বিষয় সংশোধন হয়। এই কথার মাধ্যমে আমার উপর তেমার ক্রোধ নেমে আসা হতে অথবা আমার উপর তোমার অসন্তুষ্টি নাজিল হওয়া থেকে তোমার আশ্রয় চাই। তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যেই আমার সকল প্রচেষ্টা। তোমার সাহায্য ছাড়া অন্যায় কাজ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয় এবং তোমার তাওফিক ও শক্তি ছাড়া তোমার আনুগত্য করা অসম্ভব।’ (সিরাতে ইবনে হিশাম, আলবানি রহ. এই বর্ণনাটিকে জঈফ বলেছেন। ফিকহুস সিরাত: ১/১২৫)

যখন তিনি তায়েফ ছাড়ছিলেন তখন আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা এসে তায়েফবাসীদের পাহাড়চাপা দিয়ে মেরে ফেলার অনুমতি চাইলেন। এই দিনের ঘটনা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘আমি আবদে ইয়ালিস ইবনে আবদে কুলালের সন্তানদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলাম; কিন্তু তারা আমার দাওয়াত গ্রহণ করেনি। আমি দুঃখ-কষ্ট ও মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থায় কারোন ছাআলেব নামক স্থানে পৌঁছে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। সেখানে মাথা তুলে দেখি মাথার ওপরে এক টুকরা মেঘ, ভালোভাবে তাকিয়ে দেখি সেখানে জিবরাইল (আ.)। তিনি আমাকে বলেন, আপনার জাতি আপনাকে যা যা বলেছে, আল্লাহ সবই শুনেছেন, আপনার কাছে পাহাড়ের ফেরেশতাদের পাঠানো হয়েছে। এরপর পাহাড়ের ফেরেশতারা আমাকে আওয়াজ দিলেন, সালাম জানালেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! এ কথা সত্যি, আপনি যদি চান, তাহলে আমরা ওদের দুই পাহাড়ের মধ্যে পিষে দেব। আমি বললাম, না, আমি আশা করি, মহান আল্লাহ ওদের বংশধরদের মধ্যে এমন মানুষ সৃষ্টি করবেন, যারা শুধু আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না।’ (সহিহ বুখারি, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৪৫৮)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নবীজির (স.) জীবনী থেকে সবরের শিক্ষা নেওয়ার তাওফিক দান করুন। বিশ্বনবীর (স.) জীবনাদর্শ অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।