ধর্ম ডেস্ক
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:২২ এএম
আল্লাহ তাআলা বিশ্বনবী (স.)-এর আগমনের সুসংবাদ পূর্ববর্তী নবী-রাসুলদের দিয়েছেন। এমনকি তাঁদের কাছ থেকে তাঁর আনুগত্যের শপথও নিয়েছেন। ফলে পূর্ববর্তী নবী-রাসুলের অনুসারীরা মহানবী (স.) সম্পর্কে অবগত ছিলেন। নবীজিকে চেনার নানা নিদর্শন বা আলামতও অনেকের জানা ছিল। সেসব নিদর্শনের ভিত্তিতে একাধিক ধর্মীয় পণ্ডিত নবীজি (স.)-কে শিশু-কিশোর অবস্থায় বিশ্বনবী হিসেবে চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন। নিচে তাদের সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।
মক্কায় অবস্থানরত ইহুদি পণ্ডিত
ইয়াকুব ইবনে সুফিয়ান থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) যে রাতে জন্মগ্রহণ করেন সে রাতে একজন ইহুদি পণ্ডিত মক্কায় অবস্থান করছিলেন। যিনি স্থানীয়দের বলেছিলেন, খোঁজ নিয়ে দেখো আজ কোনো ছেলেশিশুর জন্ম হয়েছে কি না? কেননা আজ রাতে যুগের নবীর জন্ম হয়েছে, যার শরীরে নবুয়তের মহর রয়েছে। যখন তিনি নবীজির জন্মের বিষয়ে নিশ্চিন্ত হলেন তখন হুঁশ হারিয়ে ফেললেন। হুঁশ ফেরার পর বললেন, আজ বনি ইসরাঈলের নবুয়তের ধারা শেষ হলো। (সিরাতে মোস্তফা: ১/৫৫)। হাসসান ইবনে সাবিত (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.)-এর জন্মের দিন সকালে মদিনার এক ইহুদি চিৎকার করে বলেছিলেন, হে ইহুদি সমাজ! আজ রাতে আহমদের জন্মের সেই নক্ষত্র উদিত হয়েছে। (সিরাতে ইবনে হিশাম, পৃষ্ঠা-৩৮)
আরব গণক সাদিয়া
চার বা পাঁচ বছর বয়সে দুধমা হালিমার বাড়িতে অবস্থানকালে মহানবী (স.)-এর বক্ষবিদারণের ঘটনা ঘটে। তখন হালিমা বিষয়টি জানতে সাদিয়া (রা.) নামে একজন গণকের কাছে গেলে তিনি বলেন, ‘হে আরবের জনগণ! তাড়াতাড়ি এসো। যে মহাবিপদ অচিরেই তোমাদের ওপর ঘনায়মান তাকে প্রতিহত করো। যার উপায় এই যে তোমরা এই শিশুটিকে হত্যা করো এবং আমাকেও তার সঙ্গে হত্যা করো। যদি তোমরা তাকে জীবিত ছেড়ে দাও, তাহলে স্মরণ রেখো সে তোমাদের ধর্মকে মিটিয়ে দেবে এবং নতুন একটি দীনের দিকে তোমাদেরকে আহ্বান করবে, যার কথা তোমরা আজ পর্যন্ত কখনো শোনোনি।’ (সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া, পৃষ্ঠা-৮)
পাদরি বুহাইরা
১২ বছর বয়সে মহানবী (স.) চাচা আবু তালিবের সঙ্গে প্রথমবার সিরিয়া সফরে যান। মক্কার ব্যবসায়ী কাফেলা বুসরা নামক স্থানে পৌঁছালে বুহাইরা নামক একজন খ্রিস্টান পাদরি মহানবী (স.)-কে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। তিনি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর হাত ধরে বলেন, ‘ইনি সাইয়েদুল আলামিন (জগৎগুলোর নেতা)। আল্লাহ তাঁকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত বা অনুগ্রহ হিসেবে প্রেরণ করেছেন।’ বুহাইরা আবু তালিবকে পরামর্শ দেন যেন তাঁকে সিরিয়া নিয়ে না যান। কেননা তাতে ইহুদিরা মুহাম্মদ (স.)-এর ক্ষতি করতে পারে। বুহাইরার পরামর্শ অনুযায়ী, আবু তালিব তাঁকে মক্কায় ফেরত পাঠান। (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা-৭৫)
পাদরি নাসতুরা
২৫ বছর বয়সে মহানবী (স.) খাদিজা (রা.)-এর বাণিজ্যিক প্রতিনিধি হিসেবে সিরিয়া সফর করেন। পথিমধ্যে মহানবী (স.) একটি গাছের নিচে বিশ্রাম করছিলেন। তখন নাসতুরা নামক এক পাদরি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে দেখে বলেন, এ গাছের নিচে কেবল নবীরাই বিশ্রাম করেন। এই ব্যক্তি প্রতীক্ষিত নবী, তিনিই সর্বশেষ নবী। (সিরাতে মোস্তফা: ১/৯৭)
ওরাকা ইবনে নওফল
খাদিজা (রা.)-এর চাচাতো ভাই ওরাকা ইবনে নওফল ছিলেন জ্ঞানী ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি। আসমানি ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে বিশেষ জানাশোনা ছিল তাঁর। বিয়ের ব্যাপারে খাদিজা (রা.) তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করেন এবং বাণিজ্যিক সফরে পাদরি নাসতুরার কথা জানান। তখন তিনিও মহানবী (স.)-এর ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। তিনি বলেন, ‘খাদিজা! এ ঘটনা যদি সত্যই ঘটে থাকে, তাহলে নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো যে, মুহাম্মদ এ যুগের নবী।’ অতঃপর তিনি মুহাম্মদ (স.)-এর অনাগত দিনের বিবরণ দিয়ে একটি দীর্ঘ কবিতাও রচনা করেন। (সিরাতে ইবনে হিশাম, পৃষ্ঠা-৪৭)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রিয়নবী (স.)-কে নিজের জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসার, তাঁর দেখানো পথে জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।