ধর্ম ডেস্ক
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০২:৩১ পিএম
সাহাবিদের মধ্যে হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.)-এর সুর ছিল সবচেয়ে মধুর। মহানবী (স.)-এর খুব প্রিয় ও ঘনিষ্ঠ সাহাবি ছিলেন তিনি। মূল নাম আব্দুল্লাহ। আবু মুসা ছিল তাঁর উপনাম। ইয়েমেনের আশআর গোত্রের সন্তান হওয়ায় সে গোত্রের দিকে সম্বন্ধ করে তাঁকে আশআরি বলা হয়।
তিনি অভিজ্ঞ ফিকাহবিদ, মুহাদ্দিস ও চৌকস কূটনীতিবিদ সাহাবিদের অন্যতম ছিলেন। তাঁর দেহাবয়ব ছিল হালকা-পাতলা ও বেঁটে। (আত-ত্বাবাক্বাতুল কুবরা: ৪/৭৮)
আশআরি (রা.)-এর সুরের প্রশংসা করে আবু উসমান নাহদি বলেন, ‘আল্লাহর শপথ! আমি আবু মুসা আশআরির সুরের চেয়ে মিষ্টি সুর কোনো বাদ্যযন্ত্রেও শুনিনি। (ফাজায়েলুল কোরআন, পৃষ্ঠা-৭৯)
রাসুলুল্লাহ (স.) আবু মুসা আশআরির তেলাওয়াতের সুরে মুগ্ধ হতেন। তাঁর সুরকে দাউদ (আ.)-এর সুরের সঙ্গে তুলনা করেছেন। হাদিসে এসেছে, ‘এক রাতে হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করছিলেন। এমন সময় রাসুল (স.) তাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আবু মুসা আশআরির মিষ্টি সুরে কোরআন তেলাওয়াত শুনে রাসুল দাঁড়িয়ে যান এবং দীর্ঘক্ষণ ধরে শুনতে থাকেন। তারপর তিনি বলেন, তাকে তো হজরত দাউদের মতো মিষ্টি সুর দান করা হয়েছে। আবু মুসা আশআরি (রা.) ঘটনাটি জেনে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি জানতাম যে আপনি আমার কোরআন তেলাওয়াত শুনছিলেন, তাহলে আমি আরও উত্তমভাবে পাঠ করতাম।’ (ফাতহুল বারি, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৭১১)
অন্য আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘এক রাতে রাসুল (স.) হজরত আবু মুসা আশআরির কোরআন তেলাওয়াত শুনে দাঁড়িয়ে যান এবং দীর্ঘক্ষণ ধরে শুনতে থাকেন। তারপর তিনি বলেন, তাঁকে তো হজরত দাউদের মিষ্টি সুরের কিছু অংশ দান করা হয়েছে।’ (সহিহ মুসলিম, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৫৪৬)
একবার তিনি রাতে নামাজের মধ্যে উঁচু আওয়াজে কোরআন পাঠ করছিলেন। নবীজির স্ত্রীগণ তাঁর সুমধুর তেলাওয়াত শুনে জড়ো হয়ে তাঁর তিলাওয়াত শুনতে থাকলেন। (আত-ত্বাবাক্বাতুল কুবরা: ৪/৮১)
উল্লেখ্য, নবীজি (স.)-এর জীবদ্দশায় যে ছয় ব্যক্তি ফতোয়া দেওয়ার অনুমতি পেয়েছিলেন, তিনি তাঁদের অন্যতম ছিলেন। ইলমি বিষয় নিয়ে জ্ঞানীদের সঙ্গে তর্ক-বাহাস করতেন। বাহাসে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) ও মুআজ ইবনে জাবাল (রা.)-এর মতো সাহাবিরা থাকতেন। কুফাতে হাদিসের দরসের জন্য তাঁর স্বতন্ত্র পাঠদান কেন্দ্র ছিল। তাঁর দরস থেকে বড় বড় মুহাদ্দিস তৈরি হয়েছে। কোরআন-হাদিসের গভীর জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও আবু মুসা আশআরি বিনয় ও ভুল-স্বীকারের গুণে গুণান্বিত ছিলেন। অন্যের জ্ঞানের মূল্যায়ন করতেন খুব বেশি।
একবার এক ব্যক্তি মিরাসের একটা মাসয়ালা তাঁকে জিজ্ঞাসা করে এবং একই মাসয়ালা আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-কেও জিজ্ঞাসা করে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) তাঁর ফতোয়ার বিপরীত ফতোয়া দিয়েছেন। প্রশ্নকারী বিষয়টি তাঁকে অবহিত করলে, তিনি একেবারে স্বাভাবিকভাবে বলে দিলেন, এই ব্যক্তি জীবিত থাকতে আমার কাছে আসা তোমার উচিত নয়। (আসহাবে রাসুলের জীবনকথা: ২/১৩)
একবার তিনি প্রায় তিনশ কারি/আলেমকে একত্র করে তাঁদের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ নসিহত পেশ করেন। নসিহতের একাংশ ছিল— ‘এই কোরআন তোমাদের জন্য কল্যাণ এবং অকল্যাণও। অতএব তোমরা কোরআনের অনুসরণ করো; কোরআন যেন তোমাদের অনুসরণ না করে। কারণ যে কোরআনের অনুসরণ করবে, কোরআন তাকে জান্নাতের উদ্যানে নিয়ে পৌঁছাবে। পক্ষান্তরে কোরআন যার অনুসরণ করবে, তাকে ঘাড়ে ধরে জাহান্নামে নিয়ে ফেলবে। (হিলয়াতুল আউলিয়া: ১/২৫৭, সাহাবায়ে কেরামের আলোকিত জীবন, পৃ-৫০৪)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সাহাবিদের জীবনী থেকে শিক্ষা নেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।