ধর্ম ডেস্ক
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:২২ পিএম
ঈমান সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। একজন মুমিন মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে পারে, কিন্তু ঈমান ছাড়তে পারে না। ঈমানই তার কাছে সবকিছু থেকে বড়। ঈমান প্রশ্নে অজ্ঞতাও গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী রাসুল প্রেরণ করেছি, যাতে রাসুল আসার পর আল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের কোনো অভিযোগ না থাকে।’ (সুরা নিসা: ১৬৫)
সুতরাং মহান আল্লাহকে জানা ও তাঁর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা প্রতিটি মানুষের জন্য অপরিহার্য। বিশেষত আল্লাহর একত্ববাদের ব্যাপারে অজ্ঞতা অগ্রহণযোগ্য। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, ‘মহান স্রষ্টা আল্লাহর পরিচয় লাভের ক্ষেত্রে কোনো সৃষ্টির অজ্ঞতা অপারগতা হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা সমগ্র সৃষ্টির জন্য আল্লাহর পরিচয় লাভ ও তাঁর একত্ববাদের ওপর ঈমান স্থাপন করা আবশ্যক। কেননা সে আসমান-জমিনের সৃষ্টি, নিজের দেহাবয়বসহ আল্লাহর সমগ্র সৃষ্টি অবলোকন করেন।’ (বাদায়িউস সানায়ে: ৭/১৩২)
ঈমানের প্রশ্নে অজ্ঞতা গ্রহণযোগ্য না হওয়ার বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করেছেন আলেমরা। যেমন—
১) দুনিয়াতে আসার আগেই আল্লাহকে রব হিসেবে স্বীকারোক্তি দেওয়া। আল্লাহ পৃথিবীতে আসার আগে মানুষের কাছ থেকে তার রুবুবিয়্যাত তথা প্রতিপালক হিসেবে তার অদ্বিতীয় হওয়ার স্বীকারোক্তি গ্রহণ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ করো, তোমার প্রতিপালক আদম সন্তানের পীঠ থেকে তার বংশধরকে বের করেন এবং তাদের নিজেদের সম্পর্কে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করেন এবং বলেন, আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই? তারা বলে, হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা সাক্ষী থাকলাম। এটা এজন্য যে তোমরা যেন কেয়ামতের দিন না বলো, আমরা তো এই বিষয়ে উদাসীন ছিলাম।’ (সুরা আরাফ: ১৭২)
২) ঈমানের অনুকূল প্রকৃতি। মানবপ্রকৃতি ঈমানের অনুকূল। এজন্য আল্লাহ তাআলা সুস্থ মানবপ্রকৃতিকে সরল দীন বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি একনিষ্ঠ হয়ে নিজেকে দীনে প্রতিষ্ঠিত করো। আল্লাহর প্রকৃতির অনুসরণ করো, যে প্রকৃতি অনুযায়ী তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন; আল্লাহর সৃষ্টির কোনো পরিবর্তন নেই। এটাই সরল দীন। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ জানে না।’ (সুরা রোম: ৩০)
৩) সুস্থ বিবেক। বিবেক আল্লাহর পরিচয় লাভে সাহায্য করে। এজন্য পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে মানুষকে তার বিবেক-বুদ্ধি ব্যবহারের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি দেখো না, আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর তা ভূমিতে নির্ঝররূপে প্রবাহিত করেন এবং তার মাধ্যমে বিবিধ বর্ণের ফসল উৎপন্ন করেন, অতঃপর তা শুকিয়ে যায়। ফলে তোমরা তা পীতবর্ণ দেখতে পাও। অবশেষে তিনি তা খড়কুটায় পরিণত করেন। এতে অবশ্যই উপদেশ আছে বোধশক্তিসম্পন্নদের জন্য।’ (সুরা ঝুমার: ২১)
৪) যুগে যুগে নবী-রাসুল প্রেরণ। যুগে যুগে নবী-রাসুলদের পাঠিয়ে আল্লাহ তাআলা মানবজাতির সামনে সত্যপ্রকাশ করেছেন। যেন মানুষ অজ্ঞতার অজুহাত দিতে না পারে। ইরশাদ হয়েছে, ‘সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী রাসুল প্রেরণ করেছি, যাতে রাসুল আসার পর আল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের কোনো অভিযোগ না থাকে। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা নিসা: ১৬৫)
৫) বিশ্বব্যাপী দীনের সত্যতা পৌঁছানোর ব্যবস্থা। মহান আল্লাহ রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বিশ্ববাসীর জন্য রাসুল হিসেবে প্রেরণ করেছেন এবং ইতিহাস সাক্ষী যে, রাসুল (স.)-এর ইন্তেকালের মাত্র এক শতাব্দীর ভেতর তৎকালীন সভ্যপৃথিবীর প্রায় পুরোটাতে ইসলামের আহ্বান পৌঁছে যায়। দিনে দিনে ইসলামের পরিধি আরো বিস্তৃত হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তো আপনাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ জানে না।’ (সুরা সাবা: ২৮)
উল্লেখ্য, ঈমানের মৌলিক বিষয়ে অজ্ঞতা অগ্রহণযোগ্য হলেও শাখাগত বিষয়ে বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতে অজ্ঞতা কখনো অপারগতা হিসেবে গণ্য হতে পারে। আর কারও ওপর শরিয়তের বিধান প্রয়োগ করার আগে মোস্তাহাব হলো—ব্যক্তিকে প্রথমে ঈমান ও ইসলামের আহ্বান জানানো। আল্লাহ তাআলা সমগ্র মানবজাতিকে আল্লাহর উপর বিশ্বাস আনার তাওফিক দান করুন। আমিন।