images

ইসলাম

আল্লাহর কুদরতের কিছু অনুপম নিদর্শন

ধর্ম ডেস্ক

১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:০৭ পিএম

আল্লাহ তাআলা একক স্রষ্টা। নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে যা কিছু রয়েছে সবই তাঁর। তিনি মহাক্ষমতাধর ও সর্বশক্তিমান। সৃষ্টিজগতের সবকিছুতে ছড়িয়ে আছে তাঁর কুদরতের অনুপম নিদর্শন। নিচে তেমন কিছু নিদর্শন নিয়ে আলোচনা করা হলো।

১) নারী-পুরুষের বিভাজন: মহান আল্লাহর কুদরতের একটি নিদর্শন হলো, তিনি মানুষকে নারী-পুরুষ দুই ভাগে বিভাজিত করেছেন। নারী-পুরুষ মিলেই পূর্ণ হয়েছে মানবসভ্যতা। একই উপাদান থেকে, একই স্থানে, একই খাদ্য থেকে উৎপন্ন সন্তানদের মধ্যে তিনি নারী-পুরুষ দুটি পৃথক সত্তা সৃষ্টি করেছেন। নারীকে সাজানো হয়েছে পুরুষের সঙ্গিনী হিসেবে। তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, মুখশ্রী, অভ্যাস, আচার-আচরণ, স্বভাব-চরিত্র ইত্যাদি ভিন্ন প্রকৃতির। আল্লাহর পূর্ণ শক্তি ও প্রজ্ঞার এটি অন্যতম নিদর্শন। কোরআনে এসেছে, ‘তাঁর কুদরতের আরেকটি নিদর্শন হলো, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি লাভ করতে পারো। আর তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। অবশ্যই এতে চিন্তাশীলদের জন্য রয়েছে নিদর্শন।’ (সুরা আর-রুম: ২১)

২) ঘুমের ব্যবস্থা: ক্লান্ত দেহ, মনকে পুনরায় সতেজ করার জন্য ঘুমের বিকল্প নেই। চা, কফি, ড্রিঙ্ক—যা কিছুই মানুষ পান করুক না কেন, সুস্থ ও সতেজ থাকতে শেষ পর্যন্ত আপনাকে ঘুমাতেই হবে। ঘুম একটু কম হলেই যেখানে শরীরের ‘লিভিং অরগানিজম’গুলো ঠিকমতো কাজ করে না। হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, উচ্চ রক্তচাপ, হাইপার টেনশন, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হওয়ার মতো সমস্যা শুরু হয়ে যায়, সেখানে না ঘুমিয়ে থাকার তো প্রশ্নই আসে না। তাই ঘুম বা নিদ্রা আল্লাহর কুদরতের বড় নিদর্শন। তিনি ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী, রাতকে করেছি আবরণ। দিনকে করেছি জীবিকা অর্জনের সময়, নির্মাণ করেছি তোমাদের মাথার ওপর মজবুত সপ্ত-আকাশ।’ (সুরা নাবা: ৯-১২)

৩) নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃষ্টি: আসমান ও জমিনের সৃষ্টি আল্লাহ তাআলার নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম। যারা চোখ থাকতে অন্ধ, তারা এই কুদরত টের পায় না। কিন্তু আল্লাহর কিছু বিশেষ বান্দা রয়েছেন, যারা এর বিশালত্ব, নান্দনিকতা ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন। বিশাল আকাশ ও বিস্তৃত ভূমির একক স্রষ্টা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তাঁর এক নিদর্শন নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃষ্টি এবং এতদুভয়ের মধ্যে তিনি যেসব জীবজন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি যখন ইচ্ছা এগুলোকে একত্রিত করতে সক্ষম।’ (সুরা আশ-শুরা: ২৯) তিনি আরো ইরশাদ করেন, ‘তারা কি তাদের ওপর স্থিত আকাশের পানে দৃষ্টিপাত করে না, আমি কিভাবে তা নির্মাণ করেছি এবং সুশোভিত করেছি? তাতে কোনো ছিদ্র নেই। আমি ভূমিকে বিস্তৃত করেছি, তাতে পর্বতমালার ভার স্থাপন করেছি এবং তাতে সব ধরনের নয়নাভিরাম উদ্ভিদ উদ্গত করেছি।’ (সুরা ক্বাফ: ৬-৭)

৪) মাটি থেকে সেরা জীবের সৃষ্টি: আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সেরা জীব হলো মানুষ। তার মধ্যে রয়েছে বিবেক, বুদ্ধি, চিন্তা, চেতনা, কর্মক্ষমতা, বাকশক্তি ইত্যাদি। অথচ মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি থেকে। পৃথিবীতে যত ধরনের উপাদান রয়েছে, তন্মধ্যে মাটি অনুভূতিহীন এক উপাদান। আগুন, পানি, বায়ু ও মাটি এসবের মধ্যে মাটি ছাড়া অন্য কিছুর মধ্যে কিছু না কিছু গতি ও চেতনা অনুভূত হয়। আল্লাহ মানব সৃষ্টির জন্য এমন নীরস বস্তুকেই বেছে নেন এবং তাকে নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের আসনে সমাসীন করবার উপযোগী করেন। আর এটাই ইবলিসের ভ্রষ্টতারও প্রধান কারণ যে, সে কীভাবে মাটির সৃষ্টি হয়ে আগুনের সৃষ্টির ওপর কর্তৃত্ব করতে পারে? মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে একটি নিদর্শন এই যে, তিনি মাটি থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। এখন তোমরা মানুষ, পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছ’ (সুরা রুম: ২০)। মানব সৃষ্টির উপাদান যে মাটি, তা আদম (আ.)-এর সৃষ্টি থেকে বোঝা যায়। তিনি গোটা মানবজাতির অস্তিত্বের মূল। ফলে অন্য মানবের সৃষ্টিও পরোক্ষভাবে তাঁর সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত। তাছাড়া সাধারণত মানুষের প্রজনন বীর্যের মাধ্যমে হলেও বীর্য যেসব উপাদান দ্বারা গঠিত, তা মাটি থেকেই উৎপন্ন।

৫) ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা: মানুষের বিভিন্ন শ্রেণি, ভাষা, বর্ণনাভঙ্গি আল্লাহ তাআলার কুদরতের অপূর্ব নিদর্শন। কেউ সুন্দর, কেউ কালো, আবার কেউ লম্বা, কেউবা খাটো, কারো ভাষা আরবি, কারো হিন্দি, কারো ভাষা ইংরেজি, কারো বাংলা, কারো উর্দু, কারো ফারসি, কারো তুর্কি ইত্যাদি। এসব মহাক্ষমতাধর আল্লাহ তাআলার কুদরতের নিদর্শন। ইরশাদ হয়েছে, ‘করুণাময় আল্লাহ! শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন, সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তাকে শিখিয়েছেন বর্ণনা (ভাষা)।’ (সুরা রহমান: ১-৪)

৬) বিদ্যুতের চমক ও পানি বর্ষণ: মহান আল্লাহ মানুষকে বিদ্যুতের চমক দেখান। এতে মানুষ দুটি বিষয় নিয়ে ভাবে। একটি হলো- পতিত হওয়ার ও জীবনহানি হওয়ার ভয়। আরেকটি হলো বৃষ্টির সম্ভাবনা। বৃষ্টির ফলে শুষ্ক ও মৃতপ্রায় জমিন পুনর্জীবন লাভ করে। বিভিন্ন ধরনের ফসল ও ফল জন্মায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘তাঁর আরো নিদর্শন—তিনি তোমাদের দেখান বিদ্যুৎ, ভয় ও ভরসার জন্য এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর এর মাধ্যমে ভূমির মৃত্যুর পর তা পুনরুজ্জীবিত করেন। নিশ্চয়ই এতে বুদ্ধিমান লোকদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা রুম: ২৪)

৭) বাতাস: আল্লাহর কুদরতের আরেকটি অনুপম নিদর্শন হলো বাতাস সৃষ্টি। বাতাস না থাকলে কোনো প্রাণীরই বেঁচে থাকা সম্ভব হতো না। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আসমান ও জমিনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের বিবর্তনে এবং নদীতে নৌকাগুলোর চলাচলে মানুষের জন্য কল্যাণ রয়েছে। আর আল্লাহ আকাশ থেকে যে পানি নাজিল করেন, এর মাধ্যমে মৃত জমিন সজীব করে তোলেন এবং তাতে ছড়িয়ে দেন সব রকম জীবজন্তু। আর আবহাওয়া পরিবর্তনে এবং তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন মেঘমালা আসমান ও জমিনের মধ্যে বিচরণ করে। নিশ্চয়ই এ সব কিছুর মধ্যে নিদর্শন রয়েছে বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্য।’ (সুরা বাকারা: ১৬৪)

৮) জীবিকার ব্যবস্থা: মহান আল্লাহ আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ এবং জমিনের মাধ্যমে সব সৃষ্টির জীবিকার সুব্যবস্থা করেছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তুমি জিজ্ঞেস করো, কে তোমাদের আসমান ও জমিন থেকে জীবিকা দান করেন কিংবা কে তোমাদের কান ও চোখের মালিক? কে জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করেন এবং কে মৃতকে জীবিতের মধ্য থেকে বের করেন? কে করেন কর্মসম্পাদনের ব্যবস্থাপনা? তখন তারা বলে উঠবে, আল্লাহ! বলে দাও, তার পরও ভয় করছ না?’ (সুরা: ইউনুস: ৩১)

আল্লাহ তাআলার সুনিপুন সৃষ্টির পরতে পরতে দৃশ্যমান তাঁরই অসীম কুদরতের খেলা। এসব নিয়ে চিন্তা করলে আল্লাহমুখী হওয়া সহজ হয় এবং অন্তরে ‘তাকওয়া’ তথা খোদাভীতি জাগ্রত হয়। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাঁর অনুগত ও শোকরগুজার বান্দা হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।