images

ইসলাম

বান্দার যে হক নষ্ট করলে ভুক্তভোগীর ক্ষমাও অগ্রহণযোগ্য

ধর্ম ডেস্ক

১৯ আগস্ট ২০২২, ০৪:০১ পিএম

মানুষ যত গুনাহ করে তা সাধারণত আল্লাহ ও বান্দার হকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। আল্লাহর হকের মধ্যে কিছু হক নষ্ট হলে কাজা বা কাফফারার মাধ্যমে আদায় করার সুযোগ আছে, আর কিছু হক নষ্ট হলে তাওবা-ইস্তেগফার করতে হয়। কিন্তু বান্দার হক নষ্ট হলে ওই বান্দা যতক্ষণ ক্ষমা করবে না, ততক্ষণ আল্লাহও ক্ষমা করেন না।

এখানে এমন একটি বান্দার হক নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে, যা সংশ্লিষ্ট বান্দারও ক্ষমা করার সুযোগ নেই। যার কারণে সেই গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়া খুবই কঠিন। সেই গুনাহটি কী?

সেই গুনাহটি হলো শিশুর প্রতি অবিচার বা শিশু নির্যাতন। এটি এমন গুনাহ, যার ব্যাপারে মুফতি মুহাম্মাদ শফি (রহ.) চমৎকার বলেছেন যে, শিশুদের মারধর করা খুবই ভয়াবহ। অন্য গুনাহ তো তাওবার মাধ্যমে মাফ হতে পারে। কিন্তু শিশুদের ওপর অত্যাচার করা হলে— এর ক্ষমা পাওয়া খুবই জটিল। কেননা এটা হচ্ছে বান্দার হক। আর বান্দার হক শুধু তাওবার মাধ্যমে মাফ হয় না। যার হক নষ্ট করা হয়েছে, তার কাছ থেকেও মাফ চেয়ে নিতে হয়। এদিকে নাবালক শিশুর ওপর জুলুম তো বড় অপরাধ। উপরন্তু নাবালকের ক্ষমা শরিয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। এজন্য এ অপরাধের মাফ পাওয়া খুবই কঠিন কাজ। তাই শিশুদের মারধর করতে ও তাদের সঙ্গে মন্দ ব্যবহার করার ব্যাপারে খুবই সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। (ইসলাহি মাজালিস, মুফতি তাকি উসমানি)

বর্তমান সমাজে শুধু মূর্খ অভিভাবকরাই নয়, শিক্ষকের মাধ্যমেও এমন ঘটনার কথা প্রায়ই শোনা যায়। কোনো কোনো শিক্ষকের রুক্ষ মনোভাবের কারণে শিক্ষার্থীরা নির্মমতার শিকার হয়। এটা স্পষ্ট অন্যায় ও জুলুম। প্রিয়নবী (স.) কখনও শিশুদের ওপর রাগ করতেন না। হজরত আনাস (রা.) ৮ বছর বয়স থেকে নবীজির খেদমত করেছেন। তিনি নবীজির আচরণ সম্পর্কে বলেন, ‘আমি ৯ বছর রাসুলুল্লাহ (স.)-এর খেদমত করেছি। আমার কোনো কাজে আপত্তি করে তিনি কখনো বলেননি, ‘এমন কেন করলে? বা এমন করোনি কেন?’ (মুসলিম: ২৩০৯)। আর আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা আল-আহজাব: ২১)

হাদিসে এসেছে, এক ব্যক্তি বলল—হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে কিছু উপদেশ দিন। তিনি বলেন, ‘তুমি রাগ করো না।’ লোকটি বলল, রাসুল (স.) যা বলেছেন—তা বলার পর আমি চিন্তা করে দেখলাম, ক্রোধই হলো সব অনিষ্টের মূল। (মুসনাদে আহমদ: ২৩১৭১)

আরও পড়ুন: স্ত্রীর উপার্জনে স্বামীর অধিকার কতটুকু? 

শিশুকে কিংবা যে কাউকে অন্যায়ভাবে মারধর জায়েজ নেই। এই সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল (সা.) কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কাউকে অন্যায়ভাবে প্রহার করবে, কেয়ামতের দিন তার থেকে এর প্রতিশোধ গ্রহণ করা হবে।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ: ১৮৬)

রাসুল (স.)-এর সুমহান হাদিস থেকে সবার শিক্ষা নেওয়া জরুরি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।