ধর্ম ডেস্ক
১৭ আগস্ট ২০২২, ০৭:১১ পিএম
জীবনকে সুন্দর ও অর্থবহ করতে মুমিনের প্রতিটি কাজে সুন্নত অনুসরণের বিকল্প নেই। মুসলমানের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ হজরত মুহাম্মদ (স.)। তাঁর আদর্শ অনুযায়ী চলাকে সুন্নত বা সুন্নাহ শব্দে ব্যক্ত করা হয়। উম্মতের জন্য নবীজির (স.) সর্বশেষ নসিহত ছিল- ‘আমি তোমাদের মধ্যে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যতক্ষণ তোমরা এই দুটিকে আঁকড়ে ধরে রাখবে ততক্ষণ তোমরা কেউ পথভ্রষ্ট হবে না। আর তা হলো আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাহ।’ (মুয়াত্তা ইমাম মালেক: ৩৩৩৮)
স্বামী-স্ত্রীর বাসর রাতের সুন্নতগুলো নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।
১) বাসর ঘরে স্ত্রীর সঙ্গে কোমল আচরণ করা: আসমা বিনতে উমাইস (রা.) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, ‘আমি ছিলাম আয়েশা (রা.)-এর বান্ধবী। আমি আরও কিছু মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে তাকে রাসুল (স.)-এর জন্য প্রস্তুত করে দিয়েছি ও তাঁর ঘরে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছি। আসমা (রা.) বলেন, আল্লাহর শপথ, আমরা তাঁর ঘরে মেহমানদারি হিসেবে এক পেয়ালা দুধ ছাড়া আর কিছু পাইনি। তিনি সে পেয়ালা থেকে কিছুটা পান করলেন, এরপর আয়েশা (রা.)-কে দিলেন।
অল্পবয়সী মেয়েটি লজ্জাবোধ করল। তখন আমরা বললাম, আল্লাহর রাসুলের হাত ফিরিয়ে দিও না; গ্রহণ করো। তখন সে ইতস্তত করে হাতে নিল এবং সেটা থেকে পান করল। অতঃপর রাসুল (স.) বললেন, তোমার বান্ধবীদেরকে দাও। আমরা বললাম, আমাদের চাহিদা নেই। তিনি বললেন, তোমরা ক্ষুধা ও মিথ্যা দুটোকে একত্র করো না।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৬৯২৫)
আরও পড়ুন: স্মার্টফোন আপনার জীবনের সব নেকি খেয়ে ফেলছে না তো?
২) স্ত্রীর মাথায় হাত রেখে তার জন্য দোয়া করা: রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন কোনো মহিলাকে বিয়ে করে তখন সে যেন স্ত্রীর মাথার অগ্রভাগ ধরে বলে– اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَمِنْ شَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ অর্থ- হে আল্লাহ! আমি তাঁর কল্যাণটুকু এবং যে কল্যাণের ওপর তাকে সৃষ্টি করেছেন, অভ্যস্ত করেছেন সেটা প্রার্থনা করি। আর তার অনিষ্ট থেকে ও যে অনিষ্টের ওপর তাকে সৃষ্টি করেছেন, অভ্যস্ত করেছেন তা থেকে আশ্রয় চাই।’ (সুনানে আবু দাউদ: ২১৬০)
৩) একসঙ্গে দু’রাকাত নফল নামাজ পড়া: সলফে সালেহিনদের কেউ স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে দুই রাকাত নামাজ পড়াকে মোস্তাহাব বলেছেন। ইবনে আবি শাইবা শাকিক থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.)-এর কাছে এক লোক এসে বলল, আমি এক যুবতিকে বিয়ে করেছি। আমি আশংকা করছি- সে আমাকে অপছন্দ করবে। বর্ণনাকারী বলেন, আব্দুল্লাহ বললেন, মিল-মহব্বত আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। দূরত্ব ও ঘৃণা শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। আল্লাহ যা হালাল করেছেন শয়তান সেটাকে তোমাদের কাছে অপছন্দনীয় করে তুলতে চায়। যখন সে তোমার কাছে আসবে তখন তাকে তোমার পেছনে দুই রাকাত নামাজ পড়ার নির্দেশ দেবে। (মুসান্নাফ ইবনু আবি শাইবা: ১৭১৫৬)
৪) সহবাসের দোয়া পাঠ: স্বামী যখন স্ত্রী-সহবাস করতে চাইবে তখন বলবে—بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا ‘আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ! আমাদেরকে তুমি শয়তান থেকে দূরে রাখো এবং আমাদেরকে তুমি যা দান করবে (মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবে) তা থেকে শয়তানকে দূরে রাখো।’ রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, এরপরে যদি তাদের দুজনকে ফল দেওয়া হয় অথবা তাদের বাচ্চা হয়, তাকে শয়তান কখনো ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারি: ৪৭৮৭)
আরও পড়ুন: বেশি মানুষ বেহেশতে যাবে যে দুই কারণে
৫) দাম্পত্য জীবনে একে অন্যের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করার নিয়ত করা: সৎভাবে সংসার করার নিয়ত করা, স্ত্রীর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা এবং স্ত্রীও স্বামীর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা তাদের সঙ্গে সৎভাবে জীবন যাপন করবে। তোমরা যদি তাদেরকে অপছন্দ করো তবে এমন হতে পারে যে, আল্লাহ যাতে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন তোমরা তাকেই অপছন্দ করছ। (সুরা নিসা: ১৯)
প্রসঙ্গত, রাসুলুল্লাহ (স.)বলেছেন, ‘যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমজন মাসে রোজা রাখে, নিজের যৌনাঙ্গ হেফাজতে রাখে, স্বামীর আনুগত্য করে; তাকে বলা হবে: তুমি জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা হয় সে দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (মুসনাদে আহমদ: ১১৬১)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সকল দম্পতিকে উপরোক্ত আমলগুলো যথাযথ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।