ধর্ম ডেস্ক
১৭ আগস্ট ২০২২, ০৬:০৪ পিএম
মোবাইল যোগাযোগক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। একইভাবে বান্দার সারা জীবনের নেকি ধ্বংস করে দেওয়ার জন্যও একটি স্মার্টফোনই যথেষ্ট। একসময় দীনদার ব্যক্তির জন্য কিছু গুনাহের সুযোগ কম ছিল। যেমন দাড়িওয়ালা বা পর্দানশীন মেয়েদের জন্য সিনেমা দেখা, পর্নোগ্রাফি দেখা প্রায় অসম্ভব ছিল বলা যায়। লোকে কী বলবে—এই ভয়ে হলেও জঘন্য পাপগুলো থেকে মুক্ত থাকা যেত। কিন্তু এখন?
আলেম বলেন বা গায়রে আলেম, দীনদার বা দুনিয়াদার—সবাই দিন-রাত স্মার্টফোন নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন। মসজিদের ইমাম সাহেব ইশার নামাজশেষে বসে যান মোবাইল নিয়ে। কী দেখেন? কী চ্যাটিং করেন? সেই দেখা বস্তুগুলো কাউকে দেখানোর হিম্মত রাখেন কি? তিন চিল্লার সাথি, কিংবা পীর সাহেবের মুরিদ, অথবা মাদরাসা শিক্ষক বা বড় ওয়ায়েজ! মোবাইল কোথায় নিয়ে দাঁড় করিয়েছে ভাবছেন কি? নবীজি (স.)-এর হাদিসটির কথা কি মনে পড়ে একবারও?
সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী (স.) বলেন, ‘আমি আমার উম্মতের কতক দল সম্পর্কে অবশ্যই জানি, যারা কেয়ামতের দিন তিহামার শুভ্র পর্বতমালার সমতুল্য নেক আমলসহ উপস্থিত হবে। মহামহিম আল্লাহ সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করবেন। সাওবান (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তাদের পরিচয় পরিষ্কারভাবে আমাদের নিকট বর্ণনা করুন, যাতে অজ্ঞাতসারে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত না হই। তিনি বলেন, তারা তোমাদেরই ভ্রাতৃগোষ্ঠী এবং তোমাদের সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা রাতের বেলা তোমাদের মতই ইবাদত করবে। কিন্তু তারা এমন লোক, একান্ত গোপনে আল্লাহর হারামকৃত বিষয়ে লিপ্ত হবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪২৪৫, হাদিসের মান সহিহ)
হাদিসটি পড়ুন আর ভাবুন। অন্তরটা কেঁপে উঠছে কি না অনুভব করুন। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, যে সবার সঙ্গে ইবাদত করবে। তারপর যখন সবাই চলে যাবে, একা হয়ে যাবে তখন সবার সামনে যে গুনাহ করতে পারত না, সেই গুনাহে লিপ্ত হবে। সেই ব্যক্তি জীবনের সব ইবাদত নিয়ে হাশরের ময়দানে উপস্থিত হলেও আল্লাহ তাআলা তার নির্জনতায় করা গুনাহের কারণে সব নেকি ধুলায় মিশিয়ে দেবেন।
আরও পড়ুন: বিয়ের উদ্দেশ্যে প্রেম করা জায়েজ?
একবার চিন্তা করে দেখুন, ওই মানুষটা আপনি না তো? আজকেই আল্লাহ তাআলার কাছে তাওবা করে নিন। কারণ আন্তরিক তাওবাই পারে আপনাকে হাশরের মাঠের কঠিন বিপদ থেকে বাঁচাতে। তাওবাকারীকে ক্ষমা করার ওয়াদা রয়েছে মহান রবের। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ— আল্লাহর অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয় আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা যুমার: ৫৩)
অন্য আয়াতে এসেছে, ‘যারা কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা নিজেদের প্রতি জুলুম করে ফেললে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা চায়। আল্লাহ ছাড়া কে আছে যে পাপ ক্ষমা করবে? আর তারা যা করে ফেলে, জেনে-বুঝে তারা তা বারবার করতে থাকে না। এমন লোকদের প্রতিদান হচ্ছে তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে ক্ষমা আর এমনসব জান্নাত যার তলদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরকাল বাস করবে। সৎকর্মশীলদের এই প্রতিদান কতই না উত্তম!’ (সুরা আলে ইমরান: ১৩৫-১৩৬)
আরও পড়ুন: বেশি মানুষ বেহেশতে যাবে যে দুই কারণে
ইবনুল কাইয়িম (রহ) বলেন, ন্যায্যতা ও অনুগ্রহ নির্ভর আল্লাহ তাআলার হেকমত হচ্ছে যে, ‘গুনাহ থেকে তাওবাকারী যেন ওই ব্যক্তির মতো, যার গুনাহ নেই’ (আল-জাওয়াব আল-কাফি পৃ-১৬৫)
হে আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে ক্ষমা করুন; আমলগুলোকে ধুলিস্যাৎ করে দেবেন না। গোপন গুনাহের ভয়াবহতা থেকে আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন। আমিন।