images

ইসলাম

যে পরিস্থিতিতে আবু বকরের সিদ্দিক উপাধি লাভ

ধর্ম ডেস্ক

২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭:১২ পিএম

মেরাজ মহানবী (স.)-এর জীবনে ঘটে যাওয়া এক মহা অলৌকিক ঘটনা। সকালে নবীজি (স.) রাতে ঘটে যাওয়া মেরাজের বর্ণনা দিচ্ছিলেন। কাফেররা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। অধিকাংশ লোক বলে উঠল, আল্লাহর কসম, এ তো এক আজব ও অবিশ্বাস্য ব্যাপার! আল্লাহর কসম! একটি কাফেলার শামে (সিরিয়া) যেতে একমাস ও আসতে একমাস লাগে। আর মুহাম্মদ কিনা এই রাতের মধ্যে সেখানে গিয়ে আবার ফিরে আসল! এ ঘটনায় অনেক নও-মুসলিম ইসলাম ত্যাগ করল।

একদল লোক আবু বকর (রা.)-কে গিয়ে বলল, হে আবু বকর! আপনার বন্ধুর খবর রাখেন? তিনি নাকি গত রাতে মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস এবং সেখান থেকে সপ্ত আকাশ পরিভ্রমণ করে এসেছেন! আপনি কি এটা বিশ্বাস করেন?

হজরত আবু বকর (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, এমন কথা কি তিনি বলেছেন? মুশরিকরা সমস্বরে বলে উঠল, হ্যাঁ, হ্যাঁ। সবার সামনে তিনি এই কথা বলেছেন। হজরত আবু বকর (রা.) দৃঢ়কণ্ঠে তখন বললেন, তাহলে আমি বিশ্বাস করি। কাফেররা বিস্ফোরিত চোখে বিস্ময় প্রকাশ করে বলল, এমন অসম্ভব কথাও আপনি বিশ্বাস করেন? আবু বকর (রা.) জবাব দিলেন—

‘আমি তাঁর জবানে এর চেয়েও আশ্চর্যজনক কথা বিশ্বাস করি।’ এই অকপট বিশ্বাসের দরুন চিরকালের জন্য তিনি ‘সিদ্দিক’ (অতি বিশ্বাসী) উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন।

কাফেরা আবু বকরের ব্যাপারে নিরাশ হয়ে ফিরে যায়। কিন্তু থেমে নেই তাদের দৌড়ঝাঁপ। তারা মহানবীকে (স.) সে আশ্চর্য ভ্রমণ প্রমাণ করার জন্য জোর দাবি জানাল।

কাফেররা বলল, আসমানের কথা আমরা জানি না। বলতেও পারব না। তবে বায়তুল মুকাদ্দাসে আমরা গিয়েছি। আপনি সেখানে গিয়ে থাকলে বলুন, তার দালান দেখতে কেমন? দরজা-জানালা কয়টি? সিঁড়ি কতগুলো? ইত্যাদি প্রশ্ন করতে থাকে।

যদিও কেউ কোথাও গেলে সেখানের কয়টা দরজা, কয়টা জানালা, কয়টা সিড়ি এসব গণনা করতে যায় না।  প্রিয়নবীও (স.) সেগুলো গণনা করেননি। তাই কাফের অবিশ্বাসীদের প্রশ্নে পেরেশান হয়ে গেলেন। ভাবলেন, আজ যদি তাদের প্রশ্নের জবাব দিতে না পারি, তাহলে ওরা আমাকে মিথ্যুক সাব্যস্ত করবে। হাদিসে এ সম্পর্কে প্রিয়নবী (স.) বলেন, ‘তখন আমার এত বেশি পেরেশানি হলো যে, ওই রকম পেরেশানি আমার আর কখনো হয়নি।

আল্লাহ তায়ালা তখন নবীজি (স.)-এর সামনে কুদরতিভাবে বায়তুল মুকাদ্দাসকে তুলে ধরলেন, আর তিনি দেখে দেখে তাদের প্রশ্নের জবাব দিলেন।

এ বিষয়ে নবীজি (স.) বলেন-

فَجَلَّى اللهُ لِى بَيْتَ الْمَقْدسِ فَطَفِقْتُ اُخْبِرهُمْ عَنْ ايَاتِه وَ اَنَا اَنْظُرُ- مسلم

অতঃপর আল্লাহ পাক বায়তুল মুকাদ্দাসকে আমার চোখের সামনে তুলে ধরলেন, আর তারা যা জিজ্ঞাসা করছিল, আমি দেখে দেখে গণনা করে করে তার উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলাম। (সুবহানাল্লাহ!)

এরপরও কাফেরদের সন্দেহ দূরীভূত হয়নি। তারা বলল, আপনার এই ভ্রমণের কোনো সাক্ষী আছে কি? নবীজি বললেন, হ্যাঁ, সাক্ষী আছে। আমি যখন বায়তুল মুকাদ্দাস যাচ্ছিলাম, তখন ‘রওহা’ নামক স্থানে তোমাদের এক ব্যবসায়ী কাফেলা দেখতে পেয়েছি। তাদের একটি উট হারিয়ে গিয়েছিল। আমি তাদের সালাম দিয়েছি এবং উটের সন্ধান বলে দিয়েছি।

প্রত্যাবর্তনের সময় আরেকটি কাফেলা দেখেছি, তাদের পাত্রের মুখ ঢাকনা দিয়ে বন্ধ করা ছিল। আমি ঢাকনা খুলে পানিটুকু পান করে ফেলেছি। এই কাফেলাটি অগ্রসর হচ্ছে তানয়িম অভিমুখে। তাদের সম্মুখে আছে একটি খাঁকি রঙের উট, তার পিঠে রয়েছে কালো রঙের চট এবং দুটি কালো বস্তা।

তানয়িম মক্কা থেকে বেশি দূরে নয়। তাই তারা মহানবীর কথা সত্য কি না যাচাই করার জন্য সেদিকে ছুটে গেল। যথাস্থানে পৌঁছে কাফেলাকে পেয়ে গেল। নবীজির বর্ণনা মতো সেই উটটিকেও দেখতে পেল। তাদেরকে পানির কথা জিজ্ঞাসা করা হলে তারা জানাল, পাত্রখানি ঠিকমতো ঢাকাই ছিল। কিন্তু কেন জানি পানি পাওয়া গেল না। এদিকে প্রথম কাফেলাটি মক্কায় পৌঁছে গেছে। তাদেরকে উট হারানোর কথা জিজ্ঞেস করা হলে তারা স্বীকার করে বলল, এক অজ্ঞাতজনের ডাক তারা শুনেছে এবং সে আওয়াজ অনুসরণ করে তাদের হারানো উট ফিরে পেয়েছে।

এভাবেই মেরাজ তথা মহানবী (সা.)-এর ঊর্ধ্বগমনের সত্যতা স্পষ্ট হয় সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে।  (সূত্র: মাহবুবে খোদা ও সীরাতে খাতামুল আম্বিয়া)

আর হজরত আবু বকর (র.) পান সিদ্দিক উপাধি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হজরত আবু বকর (রা.) এর জীবনী থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।