ধর্ম ডেস্ক
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০১:২৪ পিএম
ইতিহাসে মহাবিস্ময়কর বাস্তবতার নাম মেরাজে রাসুল (স.)। মেরাজে নবীজির বাহনের নাম ছিল বুরাক। আরবি ‘বুরাক’ শব্দটি ‘বারক’ শব্দ হতে উদ্ভূত। যার অর্থ বিদ্যুৎ, বিজলী। বুরাকের আকার-আকৃতি ও গতি প্রকৃতি সম্পর্কে বিজ্ঞ পণ্ডিতগণের মধ্যে মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
বিশুদ্ধ ও সর্বজনগ্রাহ্য মতানুসারে বলা হয়ে থাকে—
‘বুরাক’ নামক ক্ষিপ্রগতির সওয়ারীটি ছিল গাধার চেয়ে বড় ও খচ্চরের চেয়ে ছোট এবং দীর্ঘদেহী। রং ছিল শুভ্র। তার চলার গতি এমনই ক্ষিপ্র ছিল যে, দৃষ্টিসীমার শেষপ্রান্তে গিয়ে পড়ত তার পায়ের খুর। (তিরমিজি: ৩১৩১) তাফসিরে ত্ববারিতে বলা হয়েছে, বুরাকটি দেখতে গাধা ও খচ্চরের মাঝামাঝি ছিল। তার দুটি উরুর মধ্যে দুটি ডানা ছিল, যা ছিল তার পা দুটির কাছাকাছি। (তাফসিরে ত্ববারি, ১৫ খণ্ড, ৩য় পৃষ্ঠা)
সালাবীর দুর্বলসূত্রে বর্ণিত আছে, জন্তুটির চেহারা ছিল মানুষের মতো আর পায়ের ক্ষুর জন্তুর পায়ের মতো। বলদের মতো লেজ আর সামনে পেছনে ঘোড়ার মতো। (তাফসিরে কুরতুবী-১০ম খণ্ড, ১৩৬ পৃষ্ঠা)
বুরাকের মুখ মানবাকৃতি প্রসঙ্গে আশরাফ আলী থানবী (রহ)-এর ‘মিরাজ ও বিজ্ঞান’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, এর হেকমত হচ্ছে, এটি যুদ্ধের জন্তু নয়। অতএব, এতে আরোহন করায় ভয়ের কিছু নেই। পিঠ থেকে পড়ে যাওয়ারও কোনো আশঙ্কা নেই। এই আশ্চর্যজনক জন্তুর মাধ্যমে সাধারণ নিয়মের বাইরে অলৌকিক ভ্রমণ করে মহান মুজেযা স্থাপনই উদ্দেশ্য। ( মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়া, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা: ১৩; আত্তারিখুল কাভীম-লি মাক্কাতিন অ-বাইতিল্লাহিল কারীম, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২০৯)
‘তার পিঠের উপর জিন আঁটা ছিল, মুখে ছিল লাগাম। নবীজি রেকাবে পা রাখবেন, এমন সময় ‘বুরাক’ ঔদ্ধত্য দেখাল। জিব্রাইল (আ.) তাকে থামিয়ে বললেন, হে বুরাক! তুমি মুহাম্মাদ (স.)-এর সামনে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করছ? তুমি কি জানো, আল্লাহর কাছে তার চেয়ে মহান ও প্রিয়তম কোনো ব্যক্তি কখনও তোমার উপর সওয়ার হয়নি? একথা শুনতেই বুরাক ঘর্মাক্ত হয়ে গেল।’ (তিরমিজি: ৩১৩১) ইবনে ইসহাকের মতে, বুরাকটি তখন কাঁপতে থাকে। শেষে সে জমিনে ঠেকে যায়। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (স.) তাতে সওয়ার হন। নাসায়ীতে হজরত আনাসের (রা.) বর্ণনায় আছে, বোরাকটিকে অন্যান্য নবীদের জন্যও নিয়োজিত করা হতো। বিশিষ্ট তাবেয়ী সায়িদ ইবনুল মুসাইয়িব বলেন, বোরাক সেই জন্তু, যাতে চড়ে ইব্রাহিম নবী (সিরিয়া থেকে মক্কায় তাঁর পুত্র) ইসমাঈলকে দেখতে আসেন। ওই বুরাকটির দৃষ্টি যতদূর যেতো, ততদূরে তার পা পড়তো। (ফাতহুল বারী, ৭ম খণ্ড, ২০৬-২০৭ পৃষ্ঠা)
অতঃপর নবীজি (স.) বুরাকে আরোহণ করলেন। মুহূর্তেই জেরুজালেম নগরীর বায়তুল মাকদিসে উপস্থিত। জিব্রাইল (আ.) একটি পাথর ছিদ্র করে বুরাককে বেঁধে রাখলেন। (তিরমিজি: ৩১৩২)
‘এটা সেই বৃত্ত, যেখানে নবীগণও নিজেদের বাহন বেঁধে রাখতেন’। (মুসনাদে আহমদ ২/৫২৮) হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, বুরাকে আরোহন করে নবীজি মুহূর্তেই মক্কা থেকে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে বাইতুল মাকদিস পৌঁছে গেলেন। সেখানে নানা ঘটনার পর শুরু করেন ঊর্ধ্বজগতের সফর। একরাতের এই সফরে নবীজি (স.) এক এক করে পৌঁছে গেলেন সাত আসমানের উপর। জান্নাত-জাহান্নামসহ অনেক নিদর্শন দেখানো হলো নবীজিকে (স.)। এই সফরে নবীজি (স.) সিদরাতুল মুনতাহা হয়ে আরশে আজিমে গিয়ে মহান আল্লাহ তাআলার দিদার লাভ করেন এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হুকুম নিয়ে দুনিয়াতে প্রত্যাবর্তন করেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নবীজির (স.) অন্যতম মোজেযা মেরাজকে মনে-প্রাণে বিশ্বাস ও শিক্ষাগ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।