ধর্ম ডেস্ক
২৮ জুলাই ২০২২, ০৮:৩৫ পিএম
সত্যবাদিতা একটি মহৎ গুণ। সত্য বলার বড় পুরস্কার হচ্ছে, সত্য মানুষকে পূণ্যের পথে পরিচালিত করে। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই সত্য মানুষকে পুণ্যের পথনির্দেশ করে’ (আল জামিউ বাইনাস সাহিহাইন: ২৮৭)। এমনকি মানুষ যখন সত্য বলায় অভ্যস্ত হয়, তখন আল্লাহ তাকে ‘সিদ্দিক’ (আল্লাহর নিকটতম ও নিষ্ঠাবান) বান্দা হিসেবে গণ্য করেন।
মহানবী (স.) এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি যখন সর্বদা সত্য বলে এবং সত্য বলার দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করে, শেষ পর্যায়ে তার নাম আল্লাহর কাছে ‘সিদ্দিক’ হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়ে যায়।’ (সহিহ মুসলিম : ৬৮০৫)
সত্যবাদীরা মহাসাফল্যের দিকে অগ্রগামী হচ্ছেন—এমন ঘোষণা স্বয়ং আল্লাহ তাআলার। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্য কথা বলো। তিনি তোমাদের আমল-আচরণ সংশোধন করবেন এবং পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। যে কেউ আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে।’ (সুরা আহজাব: ৭০-৭১)
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঈমানদারকে দুটি নির্দেশ দিয়েছেন। এক- আল্লাহকে ভয় করা। দ্বিতীয় নির্দেশ হচ্ছে- সর্বদা সত্য কথা বলা। যার পুরস্কারস্বরূপ তিনি মানবজীবনের আচার-আচরণ সংশোধন করবেন এবং পাপসমূহ মুছে দেবেন।
এতেই পরিষ্কার যে, সত্য বলার কল্যাণ ও উপকারিতা অসীম। সত্যবাদীকে আল্লাহ যেমন পছন্দ করেন, মানুষও পছন্দ করে। আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা সত্যবাদীদের সঙ্গে থাক।’ (সুরা তাওবা: ১১৯)।
কেয়ামতের দিন সত্যবাদিতা মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আজ সত্যবাদীদের সত্যবাদিতা তাদের উপকারে আসবে।’ (সুরা মায়েদা: ১১৯)
মনে রাখতে হবে, সত্যবাদিতা শুধু কথায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং মানুষের কথা, কাজ ও মনের ইচ্ছার সঙ্গেও সম্পৃক্ত। সুতরাং কোনো মানুষ সত্যবাদী হওয়ার অর্থ হলো- সত্য কথা বলা, কাজকর্মে ঈমানের প্রতিফলন ঘটানো এবং নিয়তসহ সব কাজ হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘সত্যবাদিতা নেককাজের ভিত্তি এবং তা নেককাজ একত্র করে। মিথ্যা গুনাহের ভিত্তি ও তার বিধানভুক্ত।’ (মাজালিসুল মুমিনিন: ১/১৫০)
সত্যবাদিতার আরেকটি উপকার হচ্ছে, সত্যবাদী ব্যক্তি শান্ত ও নির্লিপ্ত হয়। অপরাধপ্রবণ মানুষের মতো তার ভেতর অস্থিরতা কাজ করে না। অপর ভাইয়ের জন্যও নিরাপদ ও উপকারী হয়ে থাকেন একজন সত্যবাদী। এছাড়াও সন্দেহযুক্ত কাজ-কর্ম থেকে দূরে থাকা সত্যবাদী ব্যক্তির একটি বিশেষ গুণ।
আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছ থেকে মুখস্থ করেছি, ‘যে কাজের ব্যাপারে মনে সন্দেহ হয়, সে কাজ ছেড়ে দিয়ে সন্দেহমুক্ত কাজ করো। কেননা সত্য প্রশান্তিকর এবং মিথ্যা দ্বিধাযুক্ত।’ (সুনানে তিরমিজি: ২৫১৮)
হাদিস বিশারদদের মতে, হাদিসটি দীনের অন্যতম মূলনীতি। ইসলাম মানুষকে সংশয় ও সন্দেহের অন্ধকার পথ পরিহার করে সত্য, সুন্দর ও বিশ্বাসের আলোয় আলোকিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। আল্লাহর ঘোষণা- ‘আর (হে রাসুল আপনি) বলুন! ‘সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলীন হয়েছে; নিশ্চয়ই মিথ্যা বিলীন হওয়ারই ছিল।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৮১)
মুমিন কখনও মিথ্যা বলতে পারে না। কারণ, মিথ্যা বলা মুনাফিকের চরিত্র। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘মুনাফিকের লক্ষণ তিনটি- মিথ্যা বলা, ওয়াদা ভঙ্গ করা এবং আমানতের খেয়ানত করা’ (বুখারি: ৩৩; মুসলিম: ৫৮)। অন্য হাদিসে এসেছে- ‘মানুষ যখন মিথ্যা কথা বলে তখন সে কথার দুর্গন্ধের কারণে ফেরেশতা তার থেকে এক মাইল দূরে সরে যায়।’
সুতরাং সত্যবাদিতা ঈমানদারকে মুনাফেক থেকে আলাদা করে। দুঃখজনক হলেও সত্য- বর্তমানে মুনাফেকি বা মিথ্যাবাদিতা মহামারীর রূপ ধারণ করেছে। মিথ্যা বলা মহাপাপ জানা সত্ত্বেও মানুষ অবলীলায় মিথ্যা কথা বলছে। অথচ পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে- ‘তাদের প্রতি আল্লাহর লানত যারা মিথ্যাবাদী।’ (সুরা আলে ইমরান: ৬১)
নবীজি (স.) এরশাদ করেছেন, ‘তোমরা আমাকে ছয়টি বিষয়ের নিশ্চয়তা দাও, আমি তোমাদের জান্নাতের জিম্মাদার হবো। ছয় বিষয় হচ্ছে- কথাবার্তায় সত্য বলবে, কারও সঙ্গে ওয়াদা করলে তা পূরণ করবে, আমানতের বস্তু ফিরিয়ে দেবে, লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা করে চলবে, হারাম জিনিস দেখা থেকে চোখের হেফাজত করবে, মানুষের প্রতি জুলুম করা থেকে বিরত থাকবে।’ (মেশকাত: ৪৮৭০)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সদা সত্য বলার এবং মিথ্যা চিরতের পরিহার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।