ধর্ম ডেস্ক
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭:০৪ পিএম
প্রকৃত সফল কে? এর সঠিক উত্তর রয়েছে একজন মুমিনের কাছে। মুমিন নিজেও সফলতার পথে হাঁটছেন এর নির্ভুল তথ্য জেনে। কারণ, তার কাছে রয়েছে মহাপবিত্র আল-কোরআন। ‘অবশ্যই মুমিনগণ সফল হয়েছে’ (সুরা মুমিনুন: ০১)
মহান আল্লাহ বিভিন্ন আয়াতে সফলকাম মানুষের বর্ণনায় তাকওয়া, ঈমান বিল গায়েব, আসমানি গ্রন্থগুলোর ওপর বিশ্বাস, কেয়ামত ও আখেরাতে বিশ্বাস, সৎকাজে আদেশ, অসৎ কাজে নিষেধ, নামাজ কায়েম, জাকাত প্রদান, আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যয়, রাসুল (স.)-এর ওপর ঈমান ও তাঁর সহযোগিতা, সুন্নতের অনুসরণ, শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিজের জীবন-সম্পদ ব্যয়, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (স.)-এর জন্য কাউকে ভালোবাসা বা ঘৃণা করা ও সংকীর্ণ মনোভাব ত্যাগ করার প্রশংসা করেছেন। এসব গুণে গুণান্বিতদের সফলকাম বলেও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
ঈমান
যারা অদৃশ্যের প্রতি ঈমান আনে, নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। আর যারা ঈমান আনে তাতে, যা তোমার প্রতি নাজিল করা হয়েছে এবং যা তোমার আগে নাজিল করা হয়েছে। আর আখিরাতের প্রতি তারা পূর্ণ বিশ্বাস রাখে। তারা তাদের রবের পক্ষ থেকে হিদায়েতের ওপর রয়েছে এবং তারাই সফলকাম। ’ (সুরা বাকারা: ৩-৫)
নামাজ কায়েম ও আখিরাতে বিশ্বাস
‘এগুলো প্রজ্ঞাপূর্ণ কিতাবের আয়াত, সৎকর্মশীলদের জন্য হেদায়াত ও রহমতস্বরূপ, যারা নামাজ কায়েম করে এবং জাকাত দেয়, আর তারাই আখিরাতে দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করে; তারাই তাদের রবের পক্ষ থেকে হিদায়েতের ওপর এবং তারাই সফলকাম। ’ (সুরা লুকমান: ২-৫)
রাসুল (স.)-এর অনুসরণ
‘যারা অনুসরণ করে রাসুলের, যে উম্মি নবী; যার গুণাবলি তারা নিজদের কাছে তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত পায়, যে তাদের সৎকাজের আদেশ দেয় ও বারণ করে অসৎ কাজ থেকে এবং তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে, আর অপবিত্র বস্তু হারাম করে। আর তাদের থেকে তাদের ওপর থাকা বোঝা ও শৃঙ্খল অপসারণ করে। সুতরাং যারা তাঁর প্রতি ঈমান আনে, তাঁকে সম্মান করে, তাঁকে সাহায্য করে এবং তাঁর সঙ্গে যে নূর নাজিল করা হয়েছে তা অনুসরণ করে, তারাই সফলকাম। ’ (সুরা আরাফ: ১৫৭)
আল্লাহর রাস্তায় আহ্বানকারী
‘আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহ্বান করবে, ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম। ’ (সুরা আলে-ইমরান: ১০৪)
যারা সেই আহ্বানে সাড়া দেয় তারাও সফলকাম। ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনদের যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর প্রতি এ মর্মে আহ্বান করা হয় যে তিনি তাদের মধ্যে বিচার মীমাংসা করবেন, তাদের কথা তো এই হয় যে তখন তারা বলে, ‘আমরা শুনলাম ও আনুগত্য করলাম।’ আর তারাই সফলকাম। ’ (সুরানূর: ৫১)
অধিক নেক আমলের অধিকারী
কেয়ামতের দিন যাদের আমলের পাল্লা ভারী হবে, তারাও সফলকাম। ‘আর সেদিন পরিমাপ হবে যথাযথ। সুতরাং যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই হবে সফলকাম। ’ (সুরা আরাফ: ৮)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই হবে সফলকাম। ’ (সুরা মুমিনুন: ১০২)
শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াইকারী
‘কিন্তু রাসুল ও তাঁর সঙ্গে মুমিনরা তাদের মাল ও জান দিয়ে লড়াই করে, আর সেসব লোকের জন্যই রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ এবং তারাই সফলকাম। ’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৮৮)
মানুষের হক আদায়কারী
‘অতএব আত্মীয়-স্বজনকে তাদের হক দিয়ে দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরকেও। এটি উত্তম তাদের জন্য, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি চায় এবং তারাই সফলকাম।’ (সুরা রুম: ৩৮)
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে মহব্বতকারী
‘তুমি পাবে না আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাসী এমন কোনো সম্প্রদায়, যারা ভালোবাসে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধাচরণকে (ভালোবাসে)—হোক না এই বিরুদ্ধাচরণকারী তাদের পিতা, অথবা পুত্র, অথবা ভাই, অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী। এদের অন্তরে আল্লাহ সুদৃঢ় করেছেন ঈমান এবং তাদের শক্তিশালী করেছেন তাঁর পক্ষ থেকে রূহ দ্বারা। তিনি তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; সেথায় তারা স্থায়ী হবে; আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এরাই আল্লাহর দল। জেনে রেখো, আল্লাহর দলই সফলকাম। ’ (সুরা মুজাদালা: ২২)
অন্য মুমিনকে নিজের ওপর প্রাধান্য দানকারী
‘আর মুহাজিরদের আগমনের আগে যারা মদিনায় নিবাস হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং ঈমান এনেছিল (তাদের জন্যও এ সম্পদে অংশ রয়েছে), আর যারা তাদের কাছে হিজরত করে এসেছে তাদের ভালোবাসে। আর মুহাজিরদের যা প্রদান করা হয়েছে তার জন্য এরা তাদের অন্তরে কোনো ঈর্ষা অনুভব করে না এবং নিজেদের অভাব থাকা সত্ত্বেও নিজেদের ওপর তাদের অগ্রাধিকার দেয়। যাদের মনের কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়েছে, তারাই সফলকাম।’ (সুরা হাশর: ৯)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সফল হওয়ার আমল যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।