ধর্ম ডেস্ক
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৪:৫৫ পিএম
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর জিকির করার জন্য মুমিনদের নির্দেশ দিয়েছেন। "হে মুমিনগণ! তোমরা বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করো এবং সকাল-সন্ধ্যা তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করো (সুরা আহজাব: ৪১-৪২)।
জিকিরবিমুখ ব্যক্তির পরিণতি খুবই ভয়াবহ। ‘যে ব্যক্তি আমার স্মরণে বিমুখ থাকবে, অবশ্যই তার জীবনযাপন হবে সংকুচিত; তাকে কেয়ামতের দিন উঠাব অন্ধ করে’ (সুরা ত্বহা: ১২৪)। জিকিরকারী এবং জিকির থেকে বিমুখ—এমন ব্যক্তিদের পার্থক্য বোঝাতে বিশ্বনবী (স.) ইরশাদ করেছেন—
‘যারা আল্লাহর জিকির করে এবং যারা করে না, তাদের দৃষ্টান্ত জীবিত ও মৃত ব্যক্তির মতো।’(সহিহ বুখারি: ৬৪০৭)
জিকিরের গুরুত্ব কতটুকু, তা উল্লেখিত আয়াত ও হাদিস থেকেই অনুমান করা যায়। ভিন্ন ভিন্ন কালেমা সম্বলিত জিকিরের অনেক বর্ণনা রয়েছে হাদিসে। তারমধ্যে কিছু জিকির এমন, যেগুলো পাঠ করা খুবই সহজ, কিন্তু সওয়াব অফুরন্ত। যেমন—
১) প্রতিদিন ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ পাঠ করলে ১হাজার সওয়াব লেখা হয় এবং ১হাজার গুনাহ মাফ করা হয়। (সহিহ মুসলিম: ৪/২০৭৩)
২) ‘আলহামদুলিল্লাহ’ মিজানের পাল্লাকে ভারী করে এবং সর্বোত্তম দোয়া। (তিরমিজি: ৫/৪৬২; ইবনে মাজাহ: ২/১২৪৯; হাকিম: ১/৫০৩; সহিহ আল জামে: ১/৩৬২)
৩) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ হলো সর্বোত্তম জিকির। (তিরমিজি: ৫/৪৬২; ইবনে মাজাহ: ২/১২৪৯; হাকিম: ১/৫০৩; সহিহ আল জামে: ১/৩৬২)
৪) ‘সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদুলিল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর’ পৃথিবীর সকলকিছুর চেয়ে আল্লাহর রাসুলের (স.) কাছে অধিক প্রিয়। (সহিহ মুসলিম: ৩/১৬৮৫; ৪/২০৭২)
৫) ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ প্রতিদিন ১০০ বার পাঠ করলে সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ (সগিরা) গুনাহ থাকলেও তাকে মাফ করে দেওয়া হবে। (সহিহ বুখারি: ৭/১৬৮; সহিহ মুসলিম ৪/২০৭১)
৬) নবী (স.) বলেন, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজীম’ এই কালেমাগুলো জিহ্বায় উচ্চারণে সহজ, মিজানের পাল্লায় ভারী, দয়াময় আল্লাহর নিকট প্রিয়। (সহিহ বুখারি: ৭/১৬৮, সহিহ মুসলিম: ৪/২০৭২)
৭) যে ব্যক্তি ‘সুবহানাল্লাহিল আজীম ওয়াবিহামদিহি’ পাঠ করবে, প্রতিবারে তার জন্য জান্নাতে একটি করে খেজুরগাছ রোপন করা হবে। (তিরমিজি: ৫/৫১১; হাকিম: ১/৫০১; সহিহ আল-জামে: ৫/৫৩১; সহিহ তিরমিজি: ৩/১৬০)
৮) প্রিয়নবী (স.) বলেন, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’ হচ্ছে জান্নাতের গুপ্তধনসমূহের মধ্যে একটি গুপ্তধন। (সহিহ বুখারি: ১১/২১৩; সহিহ মুসলিম: ৪/২০৭৬)
৯) রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদুলিল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’ এই কালেমাগুলো হচ্ছে “অবশিষ্ট নেকআমলসমূহ”। ( আহমদ (সহিহ-৫১৩; মাজমাউজ জাওয়ায়িদ: ১/২৯৭)
১০) নবী (স.) বলেন, যে আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি ১০বার রহমত বর্ষণ করবেন। তিনি (স.) আরও বলেন, যে আমার প্রতি সকালে ১০বার এবং বিকালে ১০বার দরুদ পাঠ করবে, সে কেয়ামতের দিন আমার শাফায়াত পাবে। (তাবারানি, মাজমাউজ জাওয়ায়িদ: ১০/১২০; সহিহ তারগিব ওয়াত তারহিব: ১/২৭৩)
الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللَّهِ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
`যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখো, আল্লাহর স্মরণেই হৃদয় প্রশান্ত হয়’ (সুরা রাদ: ২৮)
হজরতআবু হুরায়রা বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন—‘আল্লাহ তাআলা বলেন, বান্দা আমার ব্যাপারে যেমন ধারণা করবে, তেমনি আমাকে পাবে। আমাকে যখন সে স্মরণ করে আমি তার সঙ্গে থাকি। সে যদি আমাকে তার অন্তরে স্মরণ করে তাহলে আমিও তাকে আমার অন্তরে স্মরণ করি। আর যদি সে আমাকে কোনো জনগোষ্ঠির নিকট স্মরণ করে তাহলে আমি তাকে তাদের চেয়ে উত্তম জনগোষ্ঠির নিকটে স্মরণ করি। সে যদি আমার দিকে অর্ধ হাত এগিয়ে আসে তাহলে আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে আসি। আর যদি সে এক হাত এগিয়ে আসে, তাহলে আমি তার দিকে হস্তদ্বয় প্রসারিত পরিমাণ এগিয়ে আসি। যদি সে আমার দিকে হেঁটে আসে তাহলে আমি তার দিকে দ্রুত হেঁটে আসি। (বুখারি ও মুসলিম)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত সহজ জিকিরগুলো আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।