images

ইসলাম

জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়া ১০ সাহাবির বৈশিষ্ট্য

ধর্ম ডেস্ক

১৯ জুলাই ২০২২, ০৩:৫৭ পিএম

রাহমাতুল্লিল আলামিন হজরত মুহাম্মদ (স.)-কে আল্লাহ তাআলা সত্যদীনসহ, সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী হিসেবে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। যাঁরা ঈমানসহ রাসুল (স.)-এর সাক্ষাৎলাভে ধন্য হয়েছেন এবং ঈমানসহ মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁদের প্রত্যেকেই সাহাবি। সাহাবিরা উম্মাহর শ্রেষ্ঠ মানুষ। সত্য ও ন্যায়ের মাপকাঠি। কেয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষের জন্য তাঁরা অনুসরণীয়। কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন স্থানে সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে। 

সাহাবিদের ব্যাপারে আল্লাহর ঘোষণা-  رَّضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ অর্থাৎ আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট` (সুরা বাইয়িনা: ৮)। নিচে বেঁচে থাকতেই জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়া ১০ সাহাবির নাম, পরিচয় ও তাঁদের কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হলো।

১) ইসলামের প্রথম খলিফা এবং পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী হজরত আবু বকর (রা.)। তাঁর আসল নাম আবদুল্লাহ বিন উসমান বিন আমর। উপাধি আতিক, সিদ্দিক। মায়ের নাম উম্মুল খায়র। তাঁর হাতে হজরত উসমান বিন আফফান, হজরত জুবাইর, হজরত তালহা, হজরত আব্দুর রহমান বিন আউফ এর মতো বড় বড় সাহাবি ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তিনি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর হিজরতের সাথি। 

২) ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা, আমিরুল মুমিনিন খেতাবে ভূষিত হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব বিন নুফাইল বিন আব্দুল উজজা (রা.)। তাঁর খেলাফতকাল ছিল ১০বছর ৬ মাস ৪ দিন। আল্লাহ তাআলা তার মাধ্যমে ইসলামকে শক্তিশালী করেছেন। 

৩)  ইসলামের তৃতীয় খলিফা, জিন্নুরাইন হজরত উসমান ইবনে আফফান বিন আবিল আস (রা.)। তাঁর খেলাফতকাল এগার বছর এগার মাসের চেয়ে কয়েক দিন বেশি।

৪) ইসলামের চতুর্থ খলিফা, আসাদুল্লাহিল গালিব  হজরত আলী ইবনে আবু তালিব বিন আবদুল মুত্তালিব (রা.)। তিনি রাসুলুল্লাহ (স.)- এর জামাতা। সাত বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন। তবুক ছাড়া সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। 

৫) হজরত তলহা ইবনে উবাইদুল্লাহ বিন উসমান বিন উমর (রা.)। উহুদ যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সঙ্গে অত্যন্ত মজবুতভাবে অবস্থান নিয়েছিলেন। চব্বিশ স্থানে আঘাত পেয়েছিলেন। তখন নবী (স.) তার নাম রেখেছিলেন তলহাতুল খায়র। তিনি জামাল যুদ্ধে শাহাদত বরণ করেন।

৬) আল্লাহর রাহে সর্ব প্রথম তরবারি ধারণকারী হজরত জুবাইর ইবনে আওয়াম বিন খুয়াইলিদ (রা.)। সকল যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। হাবশায় হিজরত করেছিলেন। তিনি সর্বপ্রথম আল্লাহর রাহে তরবারি চালিয়েছিলেন। তার আকৃতিতে ফেরেশতাগণ বদর যুদ্ধে অবতরণ করেছিলেন। তিনি জামাল যুদ্ধে শাহাদত বরণ করেন।

৭) ইসলামের সব যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী হজরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ বিন আব্দুল হারিস (রা.)। হাবশায় হিজরত করেছিলেন। সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

৮) হজরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.)। ইসলামের সব যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ও আল্লাহর রাস্তায় সর্বপ্রথম তীর নিক্ষেপকারী। উহুদ যুদ্ধে তাঁকে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছিলেন, তোমার উপর আমার মা-বাবা কোরবান হোক, তীর নিক্ষেপ করো। তিনি সকল যুদ্ধে শরিক হয়েছেন।

৯) হজরত সাঈদ ইবনে জায়েদ ইবনে উমর বিন নুফাইল (রা.)। বদর যুদ্ধ ছাড়া অন্য সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি।

১০) হজরত আবু উবাইদাহ আমের ইবনে আবদুল্লাহ বিন জাররাহ (রা.)। সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ওহুদ যুদ্ধে রাসুল (স.)-এর চোয়ালে বিঁধে যাওয়া লৌহবর্ম দাঁত দ্বারা উত্তোলনকারী। তখন তার সামনের দুই দাঁত পড়ে গিয়েছিল।

(সূত্র: আলমুজতবা মিনাল মুজতবা পৃ. ৪১-৪৪; জামে তিরমিজি: ২/২১৫: ৩৯৯৪)

উল্লেখ্য, অনেকে মনে করেন শুধু উপরোক্ত ১০ সাহাবি জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন। এই ধারণাটি ভুল। বরং অসংখ্য সাহাবিকে নবীজি জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। যেমন হাদিসে এসেছে, নবীজির নাতী হাসান-হুসাইন (রা.) জান্নাতের যুবকদের সরদার হবেন এবং তাঁদের মা নবীকন্যা ফাতেমা (রা.) জান্নাতের নারীদের সরদার হবেন। (জামে তিরমিজি: ৩৭৮১)

এছাড়াও একদিন জিব্রাইল (আ.) নবীজির কাছে এসে হজরত খাদিজার জন্য জান্নাতে মুক্তা-প্রাসাদের সুসংবাদ দিয়েছেন। (সহিহ বুখারি: ৩৮২০)। বদর যুদ্ধের শহিদ হারেসা ইবনে সুরাকা (রা.)-এর ব্যাপারে নবীজি জান্নাতুল ফিরদাউসের সুসংবাদ দিয়েছেন। (সহিহ বুখারি: ৩৯৮২)। বেলাল (রা.)-এর ঘটনাও অনেকেই জানেন যে, নবীজি (স.) তাঁকে বলেছেন, ‘আজ রাতে আমি জান্নাতে তোমার জুতার আওয়াজ শুনতে পেয়েছি’ (সহিহ মুসলিম: ২৪৫৮)। আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) ইহুদি পণ্ডিত ছিলেন। ইসলাম গ্রহণ করার পর একবার নবীজি তাঁর ব্যাপারে বলেছেন, ‘নিশ্চয় সে জান্নাতে’। (সহিহ মুসলিম: ২৪৮৩)

কারো কারো অনুসন্ধানমতে এরকম সহিহ হাদিসেই ২৮ জন সাহাবির কথা পাওয়া যায়, যাঁদেরকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন নবীজি। এছাড়াও আরো ২০ জন সাহাবির নাম পাওয়া যায়; কিন্তু সেগুলোর সূত্র নির্ভরযোগ্য নয়। (মান বুশশিরা বিল জান্নাহ মিন গাইরিল আশারাহ, পৃ-১০৫)

এমনকি হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, জাহান্নামের আগুন এমন মুসলিমকে স্পর্শ করবে না যে আমাকে দেখেছে (অর্থাৎ সাহাবি), অথবা আমাকে যারা দেখেছে তাদের সে দেখেছে (অর্থাৎ তাবেয়ি)। (তিরমিজি: ৩৮৫৮)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সাহাবাগণের জীবন থেকে উত্তম আদর্শ গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। কোরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক জীবন যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।