ধর্ম ডেস্ক
১৭ জুলাই ২০২২, ১২:০৩ পিএম
জিকির বা আল্লাহর স্মরণ মুমিনের গুণ। তারা আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল হয় না। আর আল্লাহর জিকিরে মুমিন প্রশান্তিলাভ করেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা ঈমান আনে, আল্লাহর স্মরণে তাদের অন্তর প্রশান্ত হয়। জেনে রেখো, আল্লাহর স্মরণেই শুধু হৃদয় প্রশান্ত হয়’ (সুরা রাদ: ২৮)।
জিকিরকারীর উভয় জগতের মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন আল্লাহ। ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ সম্মান ও ক্ষমতা চাইলে সে জেনে রাখুক সব ক্ষমতা ও সম্মান আল্লাহরই। তাঁর দিকে পবিত্র বাণীগুলো সমুত্থিত হয় এবং নেক আমল তাকে উন্নীত করে। আর যারা মন্দ কাজের ফন্দি আঁটে, তাদের জন্য আছে কঠিন শাস্তি। তাদের ফন্দি ব্যর্থ হবেই।’ (সুরা ফাতির: ১০)
মুহাদ্দিসরা বলেন, আল্লাহর যেকোনো ধরনের আনুগত্য ও ইবাদত, আল্লাহর নাম ও তাঁর গুণাবলির উচ্চারণ, কোরআন তেলাওয়াত ও ধর্মীয় আলোচনাগুলো আল্লাহর স্মরণের অন্তর্ভুক্ত। তবে সাধক আলেমরা তাঁদের অনুসারীদের অবস্থা বিবেচনায় বিশেষ জিকির ও তাসবিহ পাঠের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত এসব জিকির ও তাসবিহ জিকির হিসেবে গণ্য।
জিকিরের তিন পদ্ধতি
জিকির বা আল্লাহর স্মরণের তিনটি পদ্ধতি আছে—১) যে জিকির কল্পনা ও চিন্তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ, তাতে জিহ্বার সামান্য স্পন্দনও হয় না। ২) যে জিকিরে আত্মার কল্পনার সঙ্গে সঙ্গে জিহ্বাও নড়বে। তবে আওয়াজ অন্যরা শুনতে পাবে না। ৩) অন্তরে উদ্দিষ্ট সত্তার উপস্থিতি ও ধ্যান করার পাশাপাশি জিহ্বার স্পন্দনও হবে এবং সেই সঙ্গে শব্দও বের হবে।
জিকিরের উত্তম পদ্ধতি
সরব ও নীরব জিকিরের মধ্যে কোনটি উত্তম, তার ফায়সালা অবস্থাভেদে বিভিন্ন রকম হতে পারে বলে মনে করেন আলেমরা। তবে সুরা আরাফের ৫৫ ও ২০৫ নম্বর আয়াত দ্বারা ‘আস্তে জিকির’ উত্তম প্রমাণিত হয়। এছাড়া খায়বর যুদ্ধে সাহাবিদের তাকবির ধ্বনি উচ্চৈঃস্বরে হয়ে গেলে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘হে মানুষ, নরম হও, বিনম্র আওয়াজে আল্লাহকে ডাকো...তোমরা বধির বা অনুপস্থিত কাউকে ডাকছ না।’ (সহিহ মুসলিম)
তবে কোনো শায়খ যদি তাঁর কোনো মুরিদ বা অনুসারীর অবস্থা বিবেচনা করে উচ্চৈঃস্বরে জিকির করার নির্দেশ দেন, তখন মুরিদ তাকে নিজের আধ্যাত্মিক চিকিৎসার অংশ মনে করে তাঁর অনুসরণ করবে। কেননা সাহাবায়ে কেরাম ও পূর্ববর্তীদের আলেমদের থেকে উচ্চৈঃস্বরে জিকিরও প্রমাণিত।
মূল বিষয়টা হচ্ছে, ইসলাম যেখানে যেভাবে জিকির করতে বলেছে, সেখানে সেভাবে জিকির করাই উত্তম। যেমন—আজান, ইকামত, কোরআন তেলাওয়াত, নামাজের তাকবির, তাকবিরে তাশরিক ইত্যাদি উচ্চৈঃস্বরে বলা উত্তম। অন্যান্য ক্ষেত্রে উচ্চৈঃস্বরে জিকির করার জন্য কয়েকটি শর্ত রয়েছে। ১) লোকদেখানো মনোভাব থাকতে পারবে না। ২) নিজের জিকিরের শব্দে অন্যের নামাজ, তেলাওয়াত, প্রয়োজনীয় কাজকর্ম বা বিশ্রামে ক্ষতি করা যাবে না। ৩) জিকিরের এ পদ্ধতিকেই একমাত্র সঠিক পদ্ধতি হিসেবে জ্ঞান করা যাবে না।
জিকির কবুল হওয়ার শর্ত
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জিকির করে অথচ ফরজ ইবাদত করে না, তার জিকির প্রত্যাখ্যাত হয়। কেননা ফরজ ইবাদত তার প্রথম দায়িত্ব।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির) তার মানে, ফরজ ইবাদত বা ইসলামি শরিয়তের আনুগত্য ছাড়া শুধু আল্লাহর জিকির বান্দার পরকালীন মুক্তির জন্য যথেষ্ট নয়। সুতরাং মুমিন ইসলামের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত বিধান পালনের পাশাপাশি আল্লাহর জিকির ও স্মরণে মনোযোগী হবে হবে, তাহলে জিকির কবুল হবে।
জিকির না করার ক্ষতি
আবু মুসা আশয়ারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যারা আল্লাহর জিকির করে এবং যারা আল্লাহর জিকির করে না, তাদের দৃষ্টান্ত জীবিত ও মৃত ব্যক্তির মতো’ (সহিহ বুখারি: ৬৪০৭)। উল্লিখিত হাদিসে মহানবী (স.) আল্লাহর স্মরণবিমুখ মানুষকে মৃত ব্যক্তির সঙ্গে তুলনা করেছেন। পবিত্র কোরআনে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আমার স্মরণে বিমুখ থাকবে, অবশ্যই তার জীবনযাপন হবে সংকুচিত। আর তাকে কিয়ামতের দিন উঠাব অন্ধ করে।’ (সুরা ত্বহা: ১২৪)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে বেশি বেশি জিকির করার তাওফিক দান করুন। আমিন।