images

ইসলাম

রাস্তায় চলাচলের সুন্নত 

ধর্ম ডেস্ক

১৪ জুলাই ২০২২, ০৪:৪১ পিএম

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইসলামের শিক্ষা ও নির্দেশনা আছে। একজন মুসলিম প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে ইসলাম অনুযায়ী দিন যাপন করতে পারেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেন। রাস্তায় হাঁটার উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে ডান পাশ দিয়ে চলাচল করা। কেননা নবী (স.) সবকিছুতে ডান পছন্দ করতেন।‌ আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নবী (স.) জুতা-সেন্ডেল পরা, চুল আঁচড়ানো, পবিত্রতা অর্জন করা এবং প্রত্যেক কাজই ডান দিক থেকে করতে পছন্দ করতেন।’ (সহিহ বুখারি: ১৬৯)

যদিও রাস্তায় ডান পাশ দিয়ে হাঁটার ব্যাপারে হাদিসে আলাদা কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায় না। তবে এটিকে রাস্তায় হাঁটার আদব বলে থাকেন আলেমরা। এ প্রসঙ্গে ইমাম নববি (রহ.) বলেন, ‘এটি ইসলামের একটি চলমান মূলনীতি যে, সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে ডান (হাত ও পা) ব্যবহার করা মোস্তাহাব। যেমন- জামা, পায়জামা ও জুতা পরিধান করা, মসজিদে প্রবেশ করা, মেসওয়াক ব্যবহার করা, খাওয়া-দাওয়া করা, মুসাফাহা করা, হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করা ইত্যাদি। আর এর বিপরীত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে বাম (হাত বা পা) ব্যবহার করা মোস্তাহাব। যেমন- টয়লেটে প্রবেশ করা, মসজিদ থেকে বের হওয়া, নাক পরিষ্কার করা, শৌচকার্য করা, জামা-কাপড়, পায়জামা, মোজা ইত্যাদি খোলা। এটি ডানের মর্যাদা ও সম্মানের স্বার্থে।’

উপরে বর্ণিত হাদিসের আলোকে কতিপয় ওলামায়ে কেরাম রাস্তার ডানপাশ দিয়ে চলাচল করাকে ‘রাস্তার আদব’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। (ফিকাহ ইসলামি বিশ্বকোষ-মুহাম্মদ বিন ইবরাহিম আত তুওয়াইজিরি)

তবে, হাঁটা কিংবা গাড়ি চালানো ইত্যাদি ক্ষেত্রে সরকারি কোনো নিয়ম-নীতি থাকলে তা মেনে চলতে হবে। চাই ডান হোক অথবা বাম। শৃঙ্খলার স্বার্থেই তা অনুসরণ করা আবশ্যক। কেননা হঠাৎ ভিন্ন নিয়ম শুরু করলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও জানমালের ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা থেকে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না’ (সুরা বাকারা: ১৯৫)। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা নিজের অথবা একে অপরের ক্ষতি সাধন করতে পারবে না।’ (ইবনে মাজাহ: ২৩৬৯, ২৩৭০)

রাস্তার পাশে বসা নিয়ে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। একান্তই বসতে হলে কঠিন শর্ত পূরণ করে তবেই বসার অনুমতি রয়েছে। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসে নবী (স.) বলেছেন, ‘তোমরা রাস্তার পাশে বসে থেকো না।’ সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আল্লাহর রাসুল! আমাদের তো এর প্রয়োজন হয়। পরস্পরে প্রয়োজনীয় কথা বলতে হয়।  রাসুল (স.) বললেন, বসতেই যদি হয়— তবে রাস্তার হক আদায় করে বসো। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আল্লাহর রাসুল! রাস্তার হক কী? রাসুল (স.) বললেন, রাস্তার হক হলো—

১) দৃষ্টিকে অবনত রাখা। ২) কাউকে কষ্ট না দেওয়া। ৩) সালামের জবাব দেওয়া। ৪) সৎ কাজের আদেশ করা এবং অসৎ কাজ হতে বিরত রাখা। (বুখারি: ৬২২৯)
বিভিন্ন বর্ণনায় আরো কিছু বিষয় এসেছে। যেমন— ৫) পথহারাকে পথ দেখিয়ে দেওয়া। ৬) নির্যাতিত ও বিপদগ্রস্তের সাহায্য করা। ৭) বোঝা বহনকারীকে (বোঝা ওঠানো বা নামানোর ক্ষেত্রে) সহযোগিতা করা। ৮) ভালো-উত্তম কথা বলা। ৯) হাঁচির জবাব দেওয়া।
(সুনানে আবু দাউদ: ৪৮১৯; মুসনাদে বাজ্জার: ৫২৩২; সহিহ মুসলিম: ২১৬১; মুসনাদে আবি ইয়ালা: ৬৬০৩)
১০) দম্ভভরে চলাফেরা না করা (অর্থাৎ হাঁটাচলায় বিনয় অবলম্বন করা)। 

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘ভূ-পৃষ্ঠে দম্ভভরে বিচরণ করো না, তুমি তো কখনোই পদভারে জমি বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনোই পর্বত-সমান হতে পারবে না।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৩৭)

রাসুলুল্লাহ (স.) সাহাবায়ে কেরামকে মাঝে মাঝে খালি পায়ে হাঁটারও নির্দেশ দিতেন। (আবু দাউদ: ৪১৬০)

তাই মাঝে মাঝে খালি পায়ে হাঁটা সুন্নত। এতে মানুষের আত্ম-অহমিকাও কিছুটা সংবরণ হয়। বিশেষ করে আমাদের দেশের মানুষের জন্য খালি পায়ে হাঁটা বেশি উপকারী। ভোরবেলা সবুজ ঘাসে খালি পায়ে হাঁটার উপকারিতা নিয়ে বিভিন্ন প্রবন্ধে দেখা যায়, এতে শরীর ও মন ভালো থাকে, ওজন কমাতে সাহায্য করে, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে, পায়ের শক্তি বৃদ্ধি পায়, হাঁটুর সমস্যা ভালো হয়, পিঠের সমস্যাও ভালো হয়ে যায়, স্ট্রেস দূর করে, শরীর মন প্রফুল্ল থাকে, দেহে ভিটামিন ডি যোগায়। ফলে দেহের হাড় মজবুত করে এবং হাড়ের যেকোনো সমস্যা রোধ করতে সাহায্য করে। 

এভাবে মহান আল্লাহ রাসুল (স.)-এর বিভিন্ন সুন্নতে কল্যাণ রেখে দিয়েছেন। তাই আমাদের উচিত প্রত্যেক বিষয়ে নবীজির নির্দেশিত পদ্ধতি অনুযায়ী জীবন অতিবাহিত করা। আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।