ধর্ম ডেস্ক
৩০ জানুয়ারি ২০২২, ১১:৫১ এএম
আল্লাহ তাআলার রাগ বা গোস্বার চেয়ে রহমতের প্রশস্ততা বেশি। সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হাদিসে কুদসিতে এসেছে— سَبَقَتْ رَحْمَتِي غَضَبِي অর্থাৎ ‘আমার রহমত আমার গোস্বাকে অতিক্রম করেছে’। তাই যতই সমস্যা আসুক বা পাপ-পঙ্কিলতার কারণে জীবনকে অন্ধকার মনে হোক, আল্লাহর রহমতের আশা ছেড়ে দেওয়া যাবে না। বরং আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া গুনাহ।
ছেলে ইউসুফকে হারানোর পর শোকার্ত হজরত ইয়াকুব (আ.) যখন আরেক ছেলে বিনিয়ামিনকেও হারিয়েছিলেন, তখন অন্য সন্তানদের তিনি নিরাশ না হয়ে দুজনকে অনুসন্ধান করতে আদেশ দেন। এসময় ইয়াকুব আলাইহিস সালাম আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়াকে কুফুরি হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এ ঘটনার বর্ণনা এসেছে পবিত্র কোরআনে। (ইয়াকুব (আ.) তার ছেলেদের উদ্দেশ্যে বলেন)— “হে আমার পুত্রগণ! তোমরা যাও, ইউসুফ ও তার সহোদরের অনুসন্ধান কর এবং আল্লাহর করুণা হতে তোমরা নিরাশ হয়োনা, কারণ কাফির ছাড়া কেউই আল্লাহর করুণা থেকে নিরাশ হয় না।” (সূরা ইউসুফ: ৮৭)
মানুষের জীবনে সমস্যা থাকবেই। বিপদ-আপদ দিয়ে আল্লাহ বান্দাকে পরীক্ষা করেন। সে কথারও উল্লেখ আছে কোরআনে। ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব সামান্য ভয় ও ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফসলের কিছুটা ক্ষতি দিয়ে।’ (সুরা বাকারা: ১৫৫)
কিন্তু বিপদ কিছুটা দীর্ঘস্থায়ী হলে শয়তান তাকে হতাশায় নিমজ্জিত করে এবং আল্লাহর রহমতের কথা ভুলিয়ে দিতে চায়। আল্লাহর সীমাহীন অনুগ্রহ এবং দয়াকে আড়াল করে দিতে চায়। অথচ পবিত্র কোরআনের ভাষ্যমতে, ‘মুমিন কখনও হতাশ হতে পারে না।’
দয়াবান আল্লাহ বলেন, “তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।” (সূরা যুমার: ৫৩)
অনেকে আবার কাউকে দোষ করতে দেখলেই বলে ওঠে যে, তাকে ক্ষমা করা হবে না। এমন কথা বলার আগে তার ভাবা উচিত যে, মহান রবের দয়া অফুরান। তিনি যে কাউকে ক্ষমা করতে পারেন, আবার যে কোনো ইবাদাতগুজার ব্যক্তিকেও জাহান্নামে নিক্ষেপ করতে পারেন। হজরত জুনদুব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “এক লোক বলেছে আল্লাহর কসম অমুককে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, কে আমার ওপর কর্তৃত্ব করে যে, আমি অমুককে ক্ষমা করব না? আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম, অন্যদিকে তোমার আমল বিনষ্ট করলাম”। (সহিহ মুসলিম)
দয়াবান আল্লাহ আসলে বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য সুযোগ খোঁজেন। বনি ইসরাইলের এক লোক ১০০ জনকে হত্যা করেও ক্ষমা পেয়েছিলেন। সহিহ বুখারির ৩৪৭০ ও মুসলিম শরিফের ২৭৬৬ নম্বর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে ঘটনাটি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হতাশা ছেড়ে ক্ষমাশীল প্রভুর রহমতের প্রত্যাশা নিয়ে ‘আমলে সালেহাহ’ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএ/