ধর্ম ডেস্ক
১১ জুলাই ২০২২, ০৮:০০ পিএম
আল্লাহ তাআলা যাদেরকে হেদায়াত করেন, তারা ছাড়া সবাই পথভ্রষ্ট। হেদায়াতের সম্পর্ক কেবল আল্লাহ তাআলার সঙ্গে। তাই মহান আল্লাহর কাছে সুপথপ্রাপ্তির দোয়া করা আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে তাঁর বান্দাদের শিখিয়েছেন কীভাবে এই প্রার্থনা করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমাদের সরল সঠিক পথ প্রদর্শন করুন।’ (সুরা ফাতিহা: ৫)
রাসুলুল্লাহ (স.) পথভ্রষ্টতার ঊর্ধ্বে থাকার পরও হেদায়াত লাভের দোয়া করতেন—‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে সঠিক পথনির্দেশন, আল্লাহভীতি, চারিত্রিক নির্মলতা ও সচ্ছলতা প্রার্থনা করছি।’ (সহিহ মুসলিম: ৭০৭৯) পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হেদায়াত শব্দের অর্থ নির্ধারণে ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেছেন, ‘হেদায়াত অর্থ ওই পথপ্রদর্শন, যে পথ রাসুল (স.) ও তাঁর অনুসারীদের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়েছে। সুরা রাদের ৭নং আয়াতে আল্লাহ যেমন বলেছেন, ‘প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে পথপ্রদর্শক।’ (আল জামিউ লি-আহকামিল কোরআন: ১/১৪৫)
হেদায়াতের জন্য অনেক দোয়া করা যায়। এখানে একটি দোয়া দেওয়া হলো। যেমন এই দোয়াটি করতে পারেন— اللَّهُمَّ أَلْهِمْنِي رُشْدِي وَأَعِذْنِي مِنْ شَرِّ نَفْسِي উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আলহিমনী রুশদী, ওয়া আয়িজনী মিন শাররি নাফসী’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাকে হেদায়াত দান করো এবং আমার নফসের খারাবি থেকে রক্ষা করো।’ (সূত্র: সুনানে তিরমিজি: ৩৪৮৩)
আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা ছাড়া কেউ হেদায়াত লাভ করতে পারে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলার স্পষ্ট ঘোষণা—হেদায়াত বা সুপথপ্রাপ্তি একান্তই আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। কোনো মানুষের ইচ্ছায় কেউ সুপথ লাভ করে না। তাই হেদায়াত শুধু আল্লাহর কাছেই চাইতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি যাকে ভালোবাসেন, ইচ্ছা করলেই তাকে সৎপথে আনতে পারবেন না। তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনেন এবং তিনিই ভালো জানেন সৎপথ অনুসরণকারীদের।’ (সুরা কাসাস: ৫৬)
আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘আল্লাহই ভালো জানেন কে হেদায়াত লাভের যোগ্য এবং কে পথভ্রষ্টের যোগ্য। আল্লাহর প্রজ্ঞার অনুকূল না হওয়ায় নবীজির (স.) চাচা আবু তালিব হেদায়াত পাননি। যাকে মহানবী (স.) ভালোবাসতেন এবং তিনি যার হেদায়াতের প্রত্যাশা করতেন।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির) হজরত আবু জর গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবীজি (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আমার বান্দারা! আমি জুলুমকে আমার জন্য হারাম করেছি আর তা তোমাদের পরস্পরের মধ্যেও হারাম করেছি। অতএব তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম কর না। হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই পথভ্রষ্ট, শুধু সে ছাড়া আমি যাকে পথপ্রদর্শন করি। সুতরাং আমার কাছে হেদায়াত চাও, আমি তোমাদের হেদায়াত দান করব।’ (মুসলিম: ৬৭৩৭)
এ হাদিসে আল্লাহ বান্দাদের তাঁর কাছে হেদায়াত তথা সুপথ অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি তাঁর কাছে হেদায়াতের দোয়া করতে বলেছেন। যে আল্লাহর কাছে হেদায়াত চাইবে আল্লাহ তাকে হেদায়েত দান করবেন। মানুষ যেমন অনুসন্ধান ও প্রার্থনার মাধ্যমে সুপথ লাভ করতে পারে, তেমনি কিছু কিছু কাজের মাধ্যমে সে সুপথ লাভ থেকে বঞ্চিতও হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, ‘সন্দেহজনক বস্তুর দিকে সতর্ক দৃষ্টি দেওয়া আবশ্যক। বিশেষত সেসব সন্দেহজনক বস্তু যা তাকে হেদায়াতের পথে চলতে বাধা দেয়। নিশ্চয়ই সন্দেহজনক বিষয়গুলো এমন বাঁকা পেরেক যা এ পথের বাধা, পথ থেকে দূরে সরিয়ে দেয় এবং চলতে বাধার সৃষ্টি করে।’ (মাদারিজুস সালিকিন: ২/১৫) সুতরাং হেদায়াত লাভের জন্য দোয়া ও চেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি হেদায়াত থেকে মাহরুম হওয়ার ক্ষতি থেকেও সতর্ক থাকতে হবে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মহান আল্লাহর দরবারে বিনীতভাবে হেদায়াত লাভের দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।