images

ইসলাম

‘তাকওয়া’ ঈমানের প্রাণ ও মর্যাদার মাপকাঠি

ধর্ম ডেস্ক

৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:০৭ পিএম

আল্লাহ তাআলার কাছে মানুষের মর্যাদা নির্ধারিত হয় কেবল ‘তাকওয়া’ বা খোদাভীতির ভিত্তিতে। বংশ, সম্পদ বা ক্ষমতা কোনোভাবেই মর্যাদার মানদণ্ড নয়। কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে… তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে বেশি মর্যাদার অধিকারী, যে বেশি তাকওয়ার অধিকারী।’ (সুরা হুজরাত: ১৩)

তাকওয়ার প্রকৃত অর্থ

তাকওয়া কেবল ভয় নয়, এটি একটি সচেতন ও সক্রিয় সতর্কতা। রবের ভয়ে পাপ থেকে বিরত থাকা এবং নেক কাজের প্রতি আগ্রহী থাকা- এটাই প্রকৃত তাকওয়া। আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) বলেন- কাঁটাযুক্ত পথে মানুষ যেমন সতর্কভাবে চলতে থাকে যাতে কাঁটা না লাগে, তেমনি পাপের কাঁটা থেকে বাঁচার নিরন্তর চেষ্টাই হলো তাকওয়া।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির: ১/৪০)

তাকওয়া কেন জরুরি?

কোরআনে আল্লাহ তাআলা তাকওয়া অবলম্বনের জন্য সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন-
১. পরিপূর্ণ মুসলিম হওয়ার জন্য: ‘হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় করো, যেভাবে তাঁকে ভয় করা উচিত। আর পরিপূর্ণ মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’ (সুরা আলে ইমরান: ১০২)
২. সকল যুগের চিরন্তন বিধান: ‘আসমান ও জমিনে যা আছে সব আল্লাহরই; তোমাদের আগে যাদের কিতাব দেওয়া হয়েছে, তাদের এবং তোমাদেরও নির্দেশ দিয়েছি যে, তাকওয়া অবলম্বন করো।’ (সুরা নিসা: ১৩১)
৩. পরকালের প্রস্তুতির জন্য: ‘হে ঈমানদাররা! আল্লাহকে ভয় করো এবং প্রত্যেককে খতিয়ে দেখা উচিত যে সে আগামীকালের জন্য কী করেছে।’ (সুরা হাশর: ১৮)

আরও পড়ুন: যে পাপ করলে তাকওয়া হারিয়ে যাবে

তাকওয়ার ফলাফল ও পুরস্কার

সংকট থেকে মুক্তি ও রিজিক: ‘যে আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তাকে বিপদাপদ থেকে মুক্তি দেবেন এবং অপ্রত্যাশিত উৎস থেকে রিজিক দান করবেন।’ (সুরা তালাক: ২-৩)
আল্লাহর ভালোবাসা: ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান: ৭৬)
জান্নাতের নিশ্চয়তা: ‘নিশ্চয় মুত্তাকিরা জান্নাতে থাকবে ও নেয়ামত ভোগ করবে।’ (সুরা তুর: ১৭)

তাকওয়া অর্জনের উপায়

১. দোয়া করা: রাসুলুল্লাহ (স.) তাকওয়া অর্জনের জন্য নিয়মিত এই দোয়াটি পড়তেন- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা, ওয়াত তুক্বা, ওয়াল আফাফা, ওয়াল গিনা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে হেদায়েত, তাকওয়া, নৈতিক পবিত্রতা এবং সচ্ছলতা কামনা করি।’ (সহিহ মুসলিম, তিরমিজি)
২. আত্মসমালোচনা ও মুহাসাবা: প্রতিদিন নিজের কাজের হিসাব নেওয়া।
৩. পাপ থেকে দূরত্ব: হারাম ও সন্দেহযুক্ত কাজ থেকে নিজেকে রক্ষা করা।

আরও পড়ুন: মুত্তাকিদের যেসব পুরস্কার দুনিয়ায় দেওয়া হয়

সমাজে তাকওয়ার প্রভাব

তাকওয়া ব্যক্তিকে বিশ্বস্ত ও ন্যায়পরায়ণ করে তোলে। যার অন্তরে আল্লাহর ভয় আছে, সে কখনো অন্যায় বা দুর্নীতি করতে পারে না। তাকওয়া সমৃদ্ধ ব্যক্তিই সমাজের শান্তি ও ন্যায়বিচারের প্রতীক।

তাকওয়া জীবনের চলমান আত্মিক অবস্থা। ঈমান যদি দেহ হয়, তবে তাকওয়া হলো তার প্রাণ। তাকওয়া ছাড়া ঈমান পূর্ণতা পায় না। আসুন, আল্লাহর নির্দেশ মেনে নিজেদের জীবন পরিশুদ্ধ করি এবং প্রকৃত মুত্তাকি হওয়ার চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সত্যিকার মুত্তাকি হিসেবে কবুল করুন। আমিন।