ধর্ম ডেস্ক
৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:০৭ পিএম
আজ ৩১ ডিসেম্বর। রাত ১২টার কাঁটা স্পর্শ করতেই শুরু হবে ২০২৬ সাল। ক্যালেন্ডার বদলের এই ক্ষণে তথাকথিত ‘থার্টিফার্স্ট নাইট’ উদযাপনের নামে দেশজুড়ে চলছে আতশবাজি, পটকা, ফানুস ও ডিজে পার্টির প্রস্তুতি। কিন্তু প্রশ্ন হলো- এই আনন্দ কার জন্য? শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ ব্যক্তি, গর্ভবতী মা, নবজাতক ও পশুপাখিদের জন্য এ রাতটি মূলত চরম আতঙ্কের। গত কয়েক বছরে এই ‘উৎসব’ এর নামে দেশে ঘটেছে বহু মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
অতীতের ক্ষত এখনো শুকায়নি। ২০২২ সালের পহেলা জানুয়ারি ঢাকার মোহাম্মদপুরে আতশবাজির বিকট শব্দে হৃদরোগে আক্রান্ত শিশু তানজিম উমায়ের ছটফট করতে করতে মায়ের কোলেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছিল। ২০২৪ সালের থার্টি ফার্স্ট নাইটে ফানুস ওড়াতে গিয়ে কেরোসিনে দগ্ধ হয়ে মারা যায় কিশোর সিয়াম। সাউন্ড সিস্টেমে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারান যুবক মিরাজ হোসেন। এরকম প্রতিবছর থার্টি ফার্স্ট নাইটে কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটে। মানুষ ছাড়াও এই পৃথিবীতে আরও অসংখ্য পাখি ও প্রাণী আছে, যাদের জীবন ও অনুভূতির কথা আমরা খুব কমই ভাবি। তাদের চোখে থার্টি ফার্স্ট নাইট কোনো উৎসব নয়; বরং এক ভয়ংকর রাত।
প্রতি বছর উৎসবের নামে এমন আস্ফালন ইসলাম ও রাষ্ট্রীয় আইন উভয়ের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ।
ইসলামের মৌলিক বিধান হলো- ‘লা দারার ওয়া লা দিরার’ অর্থাৎ অপরের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এবং অপরের ক্ষতিও করবে না। (ইবনে মাজাহ ২৩৪১; সহিহুল জামে: ৭৫১৭)
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না।’ (সুরা নিসা: ২৯)
আরও পড়ুন: থার্টি ফার্স্ট নাইটে নাচতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু
বাংলাদেশের শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ এবং হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, অনুমোদন ছাড়া আতশবাজি ও পটকা ফোটানো দণ্ডনীয় অপরাধ। অর্থাৎ ইসলামি শরিয়ত ও রাষ্ট্রীয় আইন উভয়ই জনকল্যাণ, নিরাপত্তা ও সামাজিক শান্তির পক্ষে।
১. বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণ: রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- ‘যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে (কেয়ামতে) তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৪০৩১)
২. অনর্থক, অপচয়মূলক ও ক্ষতিকর কাজ: হাদিসে এসেছে, ‘ব্যক্তির ইসলামের সৌন্দর্য হলো অনর্থক বিষয় ত্যাগ করা।’ (জামে তিরমিজি: ২৩১৮)
আল্লাহ তাআলা অপচয়কারী সম্পর্কে বলেন, ‘নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ২৭)
৩. শব্দদূষণ ও অন্যের কষ্টদান: হজরত ওমর (রা.)-এর যুগে এক ব্যক্তি মসজিদে নববিতে উচ্চস্বরে ওয়াজ করায় হজরত আয়েশা (রা.)-এর ইবাদতে বিঘ্ন ঘটে। বিষয়টি জানতে পেরে ওমর (রা.) তাকে নিষেধ করেন এবং শাস্তি দেন। (আখবারু মদিনা: ১/১৫)
আরও পড়ুন: থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন নিয়ে যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ
১. আত্মসমালোচনা: রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- ‘বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি, যে নিজের পর্যালোচনা করে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেয়।’ (জামে তিরমিজি: ২৪৫৯)
২. তাওবা ও ইস্তেগফার: আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘আর যারা কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে… (তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত)।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৩৫)
৩. নেক আমলের পরিকল্পনা: আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘হে ঈমানদাররা, আল্লাহকে ভয় করো এবং প্রত্যেকের উচিত আগামীর জন্য সে কী করেছে তা খতিয়ে দেখা।’ (সুরা হাশর: ১৮)
৪. কল্যাণের জন্য দোয়া: সাহাবায়ে কেরাম বছরের শুরুতে এই দোয়াটি পড়তেন- ‘আল্লাহুম্মা আদখিলহু আলাইনা বিল-আমনি, ওয়াল ইমানি, ওয়াস সালামাতি, ওয়াল ইসলামি, ওয়া রিদওয়ানিম মিনার রাহমানি, ওয়া ঝাওয়ারিম মিনাশ শায়ত্বান।’ অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের ওপর এই সময়কে নিরাপত্তা, ঈমান, সুস্থতা ও ইসলামসহ প্রবেশ করাও। দয়াময় রহমানের সন্তুষ্টি দান করো এবং শয়তানের ক্ষতি থেকে আমাদের রক্ষা করো। (আল মুজামুল আওসাত: ৬/২২১)
থার্টিফার্স্ট নাইটের নামে যে উদযাপন আতঙ্ক, মৃত্যু ও ধ্বংস বয়ে আনে, ইসলাম তা কখনো ‘আনন্দ’ বলে স্বীকৃতি দেয়নি। মুমিনের প্রকৃত আনন্দ নিহিত আল্লাহর আনুগত্যে ও ইবাদতের মাধুর্যে। নতুন বছর হোক আত্মশুদ্ধি, তাওবা ও নেক আমলের প্রতিযোগিতার সূচনা।
আসুন, অপসংস্কৃতির এই ঢেউ থেকে দূরে থেকে আমরা নতুন বছর শুরু করি তাহাজ্জুদ, ইস্তেগফার ও পরিকল্পিত ইবাদতের মাধ্যমে।