images

ইসলাম

যাদের সামনে নারীর পর্দা করার প্রয়োজন হয় না

ধর্ম ডেস্ক

২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:২৩ পিএম

ইসলামে নারীর পর্দা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। তবে সকল পুরুষের সামনে একই রকম পর্দা ফরজ নয়। কিছু নির্দিষ্ট পুরুষের সামনে শরিয়ত পর্দার শিথিলতা দিয়েছে, যাদেরকে ‘মাহরাম’ বলা হয়।

মাহরাম কারা?

মাহরাম হলেন সেইসব পুরুষ যাদের সাথে কোনো নারীর বিবাহ চিরতরে হারাম। এই নিষেধাজ্ঞা তিনটি কারণের যেকোনো একটি ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়-
১. রক্তের সম্পর্ক
২. দুধপানের সম্পর্ক
৩. বৈবাহিক সম্পর্ক

কোরআনের সরাসরি নির্দেশনা

আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দেন- ‘তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে...।’ (সুরা নুর: ৩১)

তাফসিরবিদগণের মতে, এ আয়াতে উল্লিখিত এবং এ থেকে উদ্ভূত সম্পর্করাই মাহরামের ভিত্তি।

আরও পড়ুন: নারীরা যাদের সঙ্গে হজে যেতে পারবেন

মাহরামের বিস্তারিত বিভাগ

১. রক্তের সম্পর্কীয় মাহরাম (মাহরামে নাসাবি)

পিতা ও ঊর্ধ্বতন: নারীর নিজের পিতা, দাদা, নানা (পিতৃকুল ও মাতৃকুল উভয় দিক থেকে)।

পুত্র ও নিম্নতন: নারীর নিজের ছেলে, নাতি, নাতনির ছেলে (যত নিচের স্তরই হোক)।

ভাই: সহোদর, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় ভাই।

ভ্রাতুষ্পুত্র ও ভগিনীপুত্র: ভাইয়ের ছেলে-মেয়ের ছেলে, বোনের ছেলে-মেয়ের ছেলে।

চাচা ও মামা: এরা আয়াতে সরাসরি উল্লিখিত না হলেও পিতৃতুল্য মর্যাদার কারণে মাহরাম। (তাফসির আল-রাজি: ২৩/২০৬; তাফসির কুরতুবি: ১২/২৩২–২৩৩)

আরও পড়ুন: বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক ব্রেকআপ করিয়ে দিলে সওয়াব হবে?

২. দুধপানের সম্পর্কীয় মাহরাম (মাহরামে রিদাঈ)

দুধপানের মাধ্যমে সৃষ্ট সম্পর্ক রক্তের সম্পর্কের সমতুল্য। যেমন-

দুধ-ভাই

দুধ-পিতা

দুধ-ছেলে

দুধ-চাচা/মামা

তাফসিরে আলুসিতে উল্লেখ রয়েছে- ‘দুধপানের কারণে সাব্যস্ত মাহরামের সামনে নারীর সাজসজ্জা প্রকাশ করা বৈধ, যেমনটি রক্তের মাহরামের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।’ (তাফসিরে আলুসি: ১৮/১৪৩)

৩. বৈবাহিক সম্পর্কীয় মাহরাম (মাহরামে মুসাহারাত)

বিবাহবন্ধনের কারণে যাদের সাথে চিরতরে বিবাহ নিষিদ্ধ-

শ্বশুর ও ঊর্ধ্বতন: স্বামীর পিতা, দাদা (যত ঊর্ধ্বতনই হোক)

স্বামীর সন্তান ও নিম্নতন: স্বামীর অন্য স্ত্রীর গর্ভজাত পুত্র ও নাতি-নাতনি (আল-মুগনি: ৬/৫৫৫)

গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা: স্বামীর ভাই (দেবর), চাচা বা মামা মাহরামের অন্তর্ভুক্ত নন। এদের সামনে পূর্ণ পর্দা বজায় রাখা আবশ্যক। হাদিস শরিফে দেবর সম্পর্কে বিশেষ সতর্কতা এসেছে। (সহিহ বুখারি: ৫২৩২)

আরও পড়ুন: বিয়ে করলে রিজিক বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি: কোরআন-হাদিসের দলিল

প্রয়োজনীয় সতর্কতা

মাহরামদের সামনে শরিয়ত নির্দেশিত পর্দার কঠোরতা শিথিল হলেও, ইসলামের মৌলিক নীতি ‘হায়া’ বা শালীনতা সর্বাবস্থায় বজায় রাখা অপরিহার্য। মাহরামের সামনে অনাবশ্যক শরীরের প্রদর্শনী বা অশালীন আচরণ ইসলামে অনুমোদিত নয়।

ইসলামে পর্দার বিধান নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য কল্যাণকর। মাহরামের সীমা ও পরিচয় জানা প্রত্যেক মুসলিম নারী-পুরুষের জন্য জরুরি, যাতে তারা শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকে সম্মান ও শালীনতার সহিত জীবনযাপন করতে পারে। কোরআন-হাদিসের স্পষ্ট দলিল ও ইসলামিক স্কলারদের ব্যাখ্যার আলোকেই এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।