ধর্ম ডেস্ক
২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:০৮ পিএম
ইসলামে ভ্রমণ কেবল ভৌগলিক স্থানান্তর নয়; বরং এটি জ্ঞানার্জন, আল্লাহর সৃষ্টি নিদর্শন পর্যবেক্ষণ, আত্মশুদ্ধি এবং ঈমানি দৃঢ়তা অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ভ্রমণ যখন আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সওয়াবের নিয়তে করা হয়, তখন পুরো যাত্রাই ইবাদতে পরিণত হয়। তবে এই ইবাদত তখনই পূর্ণতা পায়, যখন তা সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি, সতর্কতা ও আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুলের সঙ্গে সম্পন্ন করা হয়।
ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ইস্তেখারা করা সুন্নত। সাহাবি জাবির (রা.) বলেন- ‘রাসুলুল্লাহ (স.) আমাদের সব বিষয়ে ইস্তেখারা করতে শিক্ষা দিতেন, যেমন তিনি কোরআনের সুরাগুলো শিক্ষা দিতেন।’ (ইবনে হিব্বান: ৮৮৭)
পদ্ধতি: দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে ইস্তেখারার দোয়া পাঠ করে আল্লাহর সাহায্য ও সঠিক সিদ্ধান্ত কামনা করা।
অভিজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ: ভ্রমণের পথ, যানবাহন ও পরিবেশ সম্পর্কে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ‘যদি তোমরা না জানো, তবে যারা জানে তাদের জিজ্ঞেস করো।’ (সুরা নাহল: ৪৩)
ভোরবেলায় যাত্রা শুরু: সকালে যাত্রা শুরু করা বরকতের কারণ। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- ‘হে আল্লাহ! আমার উম্মতের ভোরবেলাকে বরকতময় করে দিন।’ (আবু দাউদ: ২৬০৬)
আরও পড়ুন: সফরে নামাজ: কসর না করে পুরো পড়লে সহিহ হবে কি?
বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- ‘সফরকারী তার পরিবারের জন্য দুই রাকাত নামাজের চেয়ে উত্তম কিছু রেখে যায় না।’ (মুসান্নাফ ইবনু আবি শাইবা: ৪৯১২)
একাকী ভ্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- ‘যদি লোকেরা একা সফরে কী ক্ষতি আছে তা জানত, যা আমি জানি, তবে কোনো আরোহী রাতে একাকী সফর করত না।’ (সহিহ বুখারি: ২৯৯৮)
তিনজন বা ততোধিক হলে একজনকে আমির নিযুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। (আবু দাউদ: ২৬০৯)
আরও পড়ুন: ভ্রমণের সময় পরিবারের জন্য যে দোয়া করবেন
বিদায় দানকারী বলবেন, আল্লাহ তোমাকে তাকওয়া-পরহেজগারি দান করুন, তোমার গুনাহ ক্ষমা করুন আর যেখানেই থাকো তোমাকে তিনি কল্যাণ দিন। (তিরমিজি: ৩৪৪৪) আর সফরকারী বলবেন, আল্লাহর নিরাপত্তায় তোমাকে অর্পণ করছি, তিনি অনন্য আস্থাভাজন। (আহমদ: ৯২১৯)
বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময়: বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, লা হাওলা ওয়ালা কুওউতা ইল্লা বিল্লাহ। (আবু দাউদ: ৫০৯৫)
যানবাহনে আরোহণের দোয়া: সুবহানাল্লাজি সাখ্খারালানা হা-যা, ওয়া মা কুন্না লাহু মুকরিনিন। ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লামুনকালিবুন। (সহিহ মুসলিম: ১৩৪২)
নৌযান বা জাহাজে আরোহণের দোয়া: বিসমিল্লাহি মাজরিহা ওয়া মুরসাহা; ইন্না রাব্বি লা গাফুরুর রহিম। (সুরা হুদ: ৪১)
আরও পড়ুন: নিজের বাড়িতে বেড়াতে গেলে নামাজ কসর করতে হবে?
ইসলাম ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে নিজেকে নিক্ষেপ করতে নিষেধ করে। কিছু আসার ও ফিকহি ব্যাখ্যায় এসেছে- অপ্রয়োজনীয় বিপজ্জনক ভ্রমণ থেকে বিরত থাকা ঈমানের দাবি। বিশেষত প্রয়োজন ছাড়া উত্তাল সমুদ্রে যাত্রা নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। (মুসনাদে আহমদ; আবু দাউদ)
ফিরে এসে প্রথমে মসজিদে দুই রাকাত নামাজ (সহিহ বুখারি: ২৬)
কৃতজ্ঞতার দোয়া: আয়িবুনা তা-ইবুনা আবিদুনা লি-রাব্বিনা হামিদুন। (সহিহ মুসলিম: ১৩৪২)
ইসলামি নির্দেশনা মেনে ভ্রমণ করলে তা কেবল নিরাপদই নয়, বরং ইবাদত ও বরকতের মাধ্যম হয়ে ওঠে। ইস্তেখারা, দোয়া, সতর্কতা, সঠিক সঙ্গী নির্বাচন এবং ফিরে এসে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এই সবকিছু মিলেই একজন মুমিনের সফরকে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পথে পরিণত করে। আজকের ব্যস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রাব্যবস্থায় নববি এই নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করলে ইনশাআল্লাহ সফর হবে নিরাপদ, হৃদয় হবে প্রশান্ত এবং আমল হবে সওয়াবপূর্ণ।