ধর্ম ডেস্ক
১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৫৮ পিএম
নামাজসহ একাধিক ইবাদতের জন্য অজু শর্ত। কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে অজুর ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে নির্ধারিত। এর মধ্যে দাড়ি ধোয়া ও মাসেহ করার বিষয়টি অনেকের কাছে বিভ্রান্তিকর। বিশেষ করে ঘন দাড়ির ক্ষেত্রে কতটুকু ধৌত করতে হবে এবং কোন অংশ মাসেহ করা সুন্নত, এ বিষয়ে দলিলভিত্তিক আলোচনা প্রয়োজন। এই প্রতিবেদনে কোরআন-সুন্নাহ ও নির্ভরযোগ্য ফিকহি গ্রন্থের আলোকে এ সম্পর্কিত সঠিক মাসআলা উপস্থাপন করা হয়েছে।
অজুর ফরজগুলোর একটি হলো পূর্ণ চেহারা ধৌত করা। শরিয়তের দৃষ্টিতে চেহারার সীমা হলো- এক কানের লতি থেকে অপর কানের লতি পর্যন্ত, কপালের চুলের গোড়া থেকে থুতনি পর্যন্ত। এই সীমার ভেতরের কোনো অংশ শুকনো থাকলে অজু সহিহ হবে না। দাড়ি যদি এই সীমানার মধ্যে পড়ে, তাহলে তার বিধানও চেহারার বিধানের অন্তর্ভুক্ত হবে।
আরও পড়ুন: অজুতে ঘাড় মাসেহ করা সুন্নত, নাকি বিদআত?
যদি কারো দাড়ি ঘন হয়, অর্থাৎ দাড়ির ভেতরের চামড়া সাধারণভাবে দেখা না যায়, তাহলে চেহারার সীমার ভেতরের দাড়ির উপরিভাগ ধৌত করা ওয়াজিব। এ অংশে কেবল মাসেহ করা যথেষ্ট নয়। তবে ঘন দাড়ির ভেতরের চামড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছানো আবশ্যক নয়। এই বিধান একাধিক আসার ও ফিকহি গ্রন্থে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। ‘দাড়ি যদি ঘন হয়, তাহলে ঝুলে থাকা পশম ছাড়া দাড়ির উপরিভাগ ধৌত করা ওয়াজিব।’ (আসার, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২০)
আর দাড়ি যদি পাতলা হয়, অর্থাৎ দাড়ির ভেতরের চামড়া দেখা যায়, তাহলে কেবল দাড়ির উপরিভাগ ধৌত করা যথেষ্ট নয় বরং দাড়ির ভেতরে চামড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছানো ফরজ। এ সম্পর্কে ইবনে আবি শায়বা (রহ.) বর্ণনা করেন- ‘দাড়ি যদি পাতলা হয়, তাহলে দাড়ির উপরিভাগ ধৌত করলে চলবে না; বরং ভেতরের চামড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছাতে হবে।’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা: ১/১৪)
আরও পড়ুন: টয়লেট বাথরুম একসঙ্গে, অজু শুদ্ধ হবে?
চেহারার সীমার বাইরে থাকা দাড়ি অর্থাৎ থুতনির নিচে ঝুলে থাকা অংশ ধোয়া ফরজ বা ওয়াজিব নয়।ইবনে আবি শায়বা (রহ.) বলেন- ‘দাড়ির ঝুলে থাকা পশমগুলো ধোয়া ও মাসেহ করা ওয়াজিব নয়।’ (ইবনে আবি শায়বা: ১/১৪) তবে হাদিস ও ফিকহের আলোকে হানাফি মাজহাবে ঝুলে থাকা দাড়িতে হাত ভিজিয়ে মাসেহ করাকে অজুর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
কিছু কিতাবে এবং প্রচলিত বিশ্বাসে ‘দাড়ির এক চতুর্থাংশ মাসেহ করা ফরজ’ এমন বক্তব্য পাওয়া যায়। কিন্তু হানাফি মাজহাবের নির্ভরযোগ্য ও প্রামাণ্য গ্রন্থসমূহে এই মতকে অগ্রহণযোগ্য বলা হয়েছে। ফতোয়ায়ে শামী, আল-বাহরুর রায়েক, আস-সিআয়া (শরহে বেকায়া), ফাতহুল কাদির ও বাদায়েউস সানায়ে—এসব কিতাবে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, ঘন দাড়ির ক্ষেত্রে ফরজ হলো চেহারার সীমার ভেতরের দাড়ির উপরিভাগ ধোয়া, দাড়ির কোনো নির্দিষ্ট অংশ মাসেহ করা ফরজ নয়।
শেষ কথা, অজুতে দাড়ির বিধান শরিয়তে সুস্পষ্টভাবে নির্ধারিত। ঘন ও পাতলা দাড়ির মধ্যে পার্থক্য না জানার কারণে অনেক সময় ভুল হয়। সঠিক মাসয়ালা জানা থাকলে অজু সহিহ হবে এবং সুন্নত অনুযায়ী আমল করাও সহজ হবে।