ধর্ম ডেস্ক
১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৪২ পিএম
মৃত্যুর সময় মানুষ পবিত্র ছিল কি না- এই প্রশ্ন অনেক সময় স্বজনদের মনে গভীর দুশ্চিন্তা ও অকারণ হতাশার জন্ম দেয়। বিশেষ করে কেউ যদি গোসল ফরজ থাকা অবস্থায় কিংবা কোনো নারী যদি হায়েজ বা নেফাসের সময় মৃত্যুবরণ করেন, তখন সমাজে অনেকেই এটিকে ‘খারাপ মৃত্যু’ বা ‘দুর্ভাগ্যের আলামত’ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে বিষয়টি কি আদৌ সত্য?
কোরআন হাদিসের আলোকে স্পষ্টভাবে বলা যায়- অপবিত্র অবস্থায় মৃত্যু দুর্ভাগ্যের কোনো আলামত নয় এবং এটি খারাপ পরিণতির প্রমাণও নয়।
মানুষের জীবনে পবিত্র ও অপবিত্র উভয় অবস্থাই স্বাভাবিক ও অনিবার্য। ঘুম, দাম্পত্য জীবন, শারীরিক অবস্থা কিংবা নারীদের হায়েজ-নেফাস সবই আল্লাহর সৃষ্টি ও বিধানের অংশ। তাই এসব অবস্থার যেকোনো একটিতে মৃত্যু এসে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়।
ইসলামের মূল বিবেচনা হলো ঈমানের সঙ্গে মৃত্যু- শরীরের বাহ্যিক পবিত্রতা নয়। অপবিত্র অবস্থাতেও একজন মুমিন ঈমানের সঙ্গে ইন্তেকাল করতে পারেন; এমনকি শহীদি মর্যাদাও লাভ করতে পারেন।
আরও পড়ুন: সুন্দর মৃত্যুর জন্য যেসব আমলের কথা বলা হয়েছে হাদিসে
ইসলামের ইতিহাসে এমন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রয়েছে, যা এই বিষয়ে সব ধরনের সংশয় দূর করে দেয়। ওহুদের যুদ্ধে নবীজি (স.)-এর দুই মহান সাহাবি হজরত হামজা (রা.) ও হজরত হানজালা (রা.) শহীদ হন এমন অবস্থায়, যখন তাঁদের ওপর গোসল ফরজ ছিল।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন- ‘হামজা (রা.) ও হানজালা (রা.) অপবিত্র অবস্থায় শহীদ হলে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘আমি ফেরেশতাদের দেখেছি, তারা এ দুজনকে গোসল করাচ্ছেন।’ (আল-মুজামুল কাবির: ১২০৯৪)
এই হাদিস প্রমাণ করে, অপবিত্র অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলেও আল্লাহর কাছে মর্যাদা কমে যায় না। বরং আল্লাহ নিজ ব্যবস্থায় বান্দাকে পবিত্র করে নেন।
আরও পড়ুন: মৃত্যুর আগে মানুষ যা দেখে ও অনুভব করে
কোনো পুরুষ যদি গোসল ফরজ অবস্থায় ইন্তেকাল করেন বা কোনো নারী যদি হায়েজ বা নেফাসের সময় কিংবা গোসল ফরজ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তা কখনও খারাপ মৃত্যু, অভিশাপ বা দুর্ভাগ্যের লক্ষণ মনে করার কোনো কারণ নেই। ইসলামে এর ভিত্তি নেই। তাই আত্মীয়-স্বজনের মৃত্যুতে এ বিষয়ে অহেতুক চিন্তা বা আফসোসে ডুবে যাওয়া অনুচিত।
ইসলাম আমাদের শেখায়- মৃত্যুর মূল্যায়ন হবে ঈমান ও আমলের ভিত্তিতে, শারীরিক পবিত্রতার ক্ষণিক অবস্থার ভিত্তিতে নয়। অপবিত্র অবস্থায় মৃত্যু যেমন স্বাভাবিক, তেমনি তা আল্লাহর কাছে মর্যাদাপূর্ণও হতে পারে। তাই এ বিষয়ে ভ্রান্ত ধারণা পরিহার করা, মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা এবং আল্লাহর রহমতের ব্যাপারে আশাবাদী থাকাই একজন মুমিনের করণীয়।