images

ইসলাম

আরাফার দিন রোজা রাখার ফজিলত

ধর্ম ডেস্ক

০৭ জুলাই ২০২২, ১০:৫১ এএম

জিলহজ মাসের ৯ তারিখ পবিত্র আরাফাতের দিন। এবারের হজে সেই দিনটি হলো ৮ জুলাই, শুক্রবার। এদিন বিশ্বের ১০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান মক্কা থেকে ১৫ কিলোমিটার নিকটবর্তী আরাফার ময়দানে অবস্থান করবেন। তাঁদের ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত হবে আরাফাতের ময়দান। 

হজের সময় আরাফাতের মাঠে অবস্থান করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। নবীজি (স.) বলেছেন, ‘আরাফাতে অবস্থান করাই হলো হজ।’ (সুনানে নাসায়ি: ৩০৪৪ )

আরাফার দিনে অবতীর্ণ হয়েছে কোরআনে কারিমের সর্বশেষ আয়াত, ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করলাম এবং ইসলাম তোমাদের দীন মনোনীত করলাম। (সুরা মায়েদা: ০৩)

এদিন বান্দার দিকে মহান প্রভুর রহমতের জোয়ার প্রবলবেগে উৎসারিত হয়। অসংখ্য বান্দাকে তিনি ক্ষমা করেন। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, ‘আরাফার দিনের মতো আর কোনো দিন এত অধিক পরিমাণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় না। আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার নিকটবর্তী হন এবং বান্দাদের নিয়ে ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করেন। আল্লাহ বলেন, কী চায় তারা? (সহিহ মুসলিম: ১৩৪৮)

আরাফার দিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো রোজা। এদিন একটি রোজা রাখলে বান্দার দুই বছরের গুনাহ মাফ হয়। আল্লাহর রাসুল (স.) বলেন, ‘আরাফার দিনের (৯ জিলহজের) রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা রাখি যে, তিনি আগের এক বছরের এবং পরের এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)

আরাফাতের দিন নির্দিষ্ট করা নিয়ে দুইটি মত লক্ষ্য করা যায়। প্রথমটি হলো- স্থানীয়ভাবে চাঁদ দেখে তারিখ নির্ধারণ করা; দ্বিতীয়টি হলো- সৌদি আরবের তারিখের অনুসরণ করা। 

প্রথম মতের ফকীহগণের বক্তব্য হলো— আরাফার দিন হলো জিলহজ মাসের ৯ তারিখ। সুতরাং পৃথিবীর যেখানে যখন জিলহজ মাসের ৯ তারিখ হবে সেখানকার অধিবাসীদের জন্য সেদিনই আরাফার দিন অর্থাৎ ইয়াওমুল আরাফা। যেমন- জিলহজ মাসের ৮ তারিখকে ইয়াওমুত তারবিয়াহ এবং ১০ তারিখকে ইয়াওমুন নাহার (কোরবানির দিন) বলা হয়। অনুরূপভাবে ৯ তারিখ হলো ইয়াওমুল আরাফা বা আরাফার দিন।  

দ্বিতীয় মতের আলেমগণের ব্যাখ্যা হলো— আরাফার রোজার ফজিলত সংক্রান্ত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) কোনো তারিখ উল্লেখ করেননি, বরং নির্দিষ্ট একটি বিশেষ দিনের উল্লেখ করেছেন; আর সেই দিনটি হলো আরাফার দিন অর্থাৎ হজের দিন, যে দিন হাজীগণ আরাফা ময়দানে অবস্থান করেন। সুতরাং ৮ বা ৯ তারিখ নয় বরং হজের দিনই রোজা রাখতে হবে। হজ যেহেতু পৃথিবীতে শুধুমাত্র এক জায়গায় মক্কা শরীফেই অনুষ্ঠিত হয়, তাই সারা পৃথিবীতে সেই হজের দিনই আরাফার রোজা প্রতিপালিত হবে। কারণ এই রোজাটি তারিখের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বরং স্থান ও কর্মের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আর তা হলো মক্কা ও হজ।  

এর সমাধান হচ্ছে, এক থেকে নয় তারিখ রোজা পালন করলে এর মধ্যেই আরাফার রোজা পালন হয়ে যাবে, এটাই সবচেয়ে ফজিলতের। কেননা হাদিসে এসেছে, জিলহজের ১ থেকে ৯ তারিখ প্রতিদিনের রোজা ১ বছরের রোজার সওয়াব এবং প্রতিরাতের ইবাদত ১ বছরের ইবাদতের সমান সওয়াব। (তিরমিজি, খণ্ড:১, পৃষ্ঠা-১৫৮)

আবার নিজ দেশের তারিখ অনুযায়ী মক্কার আরাফার দিন মিলিয়ে দুটি রোজা করলেও আরাফার রোজা আদায় হয়ে যাবে- এটাও নিরাপদ। যদি কেউ একটিমাত্র আরাফার রোজা রাখতে চান, তিনি উপর্যুক্ত যে কোনো একটি অনুযায়ী ইখলাস ও তাকওয়ার সঙ্গে আমল করলে পূর্ণ সওয়াব পাবেন ইনশাআল্লাহ। কেননা হাদিস শরিফে রয়েছে- ‘কাজের ফলাফল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল, প্রত্যেক ব্যক্তি তা-ই পাবে, যা নিয়ত করেছে..’। (বুখারি: ১; মুসলিম: ১৯০৭)

এই মতপার্থক্য নিয়ে মুজতাহিদ ফকিহগণ গবেষণার ক্ষেত্রে দলিল প্রমাণ ও যুক্তি-তর্কে অন্য মতের বিরোধিতা বা খণ্ডন করতে পারবেন। কিন্তু কোনো সাধারণ মানুষ ভিন্নমতের বিরোধিতা করা অশোভন ও অনুচিত এবং পক্ষাবলম্বন ও সমালোচনা অন্যায়, যা অনধিকার চর্চার শামিল। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হজ সম্পর্কিত বিধানসহ দীনের সকল বিধি সহিহ সুন্নাহ অনুযায়ী পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।