ধর্ম ডেস্ক
০৫ জুলাই ২০২২, ০৩:৫৬ পিএম
ইসলামে নারীর উপার্জিত অর্থ-সম্পদের সম্পূর্ণ মালিক ওই নারী। এতে স্বামীর কোনো হক বা অধিকার নেই। ইসলামি পরিবারব্যবস্থা অনুযায়ী, স্ত্রীর যদি বিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারও থাকে, অন্যদিকে স্বামী অসহায়-দরিদ্রও হয়ে থাকেন, তবুও স্ত্রীর সম্পদ থেকে জোর করে কানাকড়ি নেওয়ার অধিকার স্বামীর নেই। ইসলামে স্বামী ও স্ত্রীর অ্যাকাউন্ট আলাদা। অনেকে এই জায়গায় ভুল করে থাকেন যে, অ্যাকাউন্ট আলাদা হওয়া মানে দুজনের পবিত্র সম্পর্কে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়া। না, এটি সঠিক চিন্তা নয়। বরং এই চিন্তা থেকেই মোহরানার টাকা থেকে নারী বঞ্চিত হয়।
এভাবে সম্পর্কে কঠিন থেকে কঠিনতর হয়। এজন্য ইসলাম বলে, স্ত্রীর উপার্জন আলাদা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি ব্যবসাকে হালাল করেছি এবং সুদকে হারাম করেছি’ (সুরা বাকারার ১৮৬)। এই আয়াতে ব্যবসা হালাল হওয়া এবং সুদ হারাম হওয়া নারী-পুরুষের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। একজন পুরুষ হালাল পন্থায় যেসব ব্যবসা করতে পারবেন, নারীও সে ধরনের ব্যবসা করতে পারবেন। তিনি বিবাহিত হোক কিংবা অবিবাহিত। সে তার অর্জিত সম্পদের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণকারী।
অন্যদিকে স্ত্রীর যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করবেন স্বামী। এমনকি স্ত্রীকে এটিও বলা যাবে না যে, তোমার নিজের খরচটা তুমি চালাও। বরং এই দায়িত্ব স্বামীর। সুতরাং স্ত্রী তাঁর অর্থ-সম্পদ থেকে তিনি ইচ্ছেমতো ব্যয় করবেন। চাইলে মা-বাবা-ভাই-বোনকে, ইচ্ছা হলে দরিদ্রকে অথবা স্বামীকে যেখানে খুশি খরচ করার অধিকার একমাত্র তাঁর।
শরিয়ত স্ত্রীর ভরণ-পোষণের ব্যাপারে নির্দিষ্ট পরিমাণ নির্ধারিত করে দেয়নি। বরং স্ত্রীকে প্রয়োজন পরিমাণ ভরণ-পোষণ দেওয়া স্বামীর কর্তব্য। এটাই শরিয়তপ্রদত্ত নিয়ম ও নির্দেশনা। আর পরিমাণটি পরিবেশ-পরিস্থিতি, অবস্থা ও স্বামীর সামর্থ্যনির্ভর। (ফাতহুল কাদির: ৩/১৯৪; আল-মুহিতুল বুরহানি: ৩/৫২৯-৫৩০)
এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট হওয়া দরকার, বিবাহিত যেকোনো নারী যখন স্বামীর অনুমতি নিয়ে চাকরি বা ব্যবসায় নিয়োজিত হবেন, তখন উপার্জনের জায়গাটি বা প্রতিষ্ঠানটিতে ফেতনা থেকে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা থাকতে হবে। ফেতনা থেকে বাঁচার সুযোগ থাকলেই তিনি চাকরি বা ব্যবসা করবেন। অন্যথায় নাজায়েজ। যে প্রতিষ্ঠানে ফেতনা থেকে বাঁচার সুযোগ আছে, সেখানেই কাজ করবেন।
কেননা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে ‘... পর্দার বিধান তোমাদের (পুরুষদের) ও তাদের (নারীদের) অন্তর পবিত্র রাখার সর্বোত্তম ব্যবস্থা...’ (সুরা আহজাব: ৫৩)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলছেন, ‘তোমরা ঘরের অভ্যন্তরে অবস্থান করবে। জাহেলি যুগের নারীদের মতো নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না’ (সূরা আহজাব: ৩৩)।
স্ত্রী যখন পর্দার বিধান মেনে চাকরি বা ব্যবসায় দিনের একটি বড় সময় বাইরে কাটান, তখন বাচ্চা-কাচ্চাসহ সংসারের যাবতীয় দেখভাল ওই সময়টুকুতে করতে হয় স্বামীকে। এক্ষেত্রে স্ত্রী যেহেতু পারিবারিক দায়িত্ব থেকে দূরে থাকছেন, তাই স্ত্রী চাইলে স্বামীকে সহযোগিতা করতে পারেন। সওয়াবের নিয়তে যদি তিনি স্বামীকে উপার্জিত অর্থ থেকে দেন, তাতে সওয়াব বেশি হবে।
হাদিসে আছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) দরিদ্র মুহাজির ছিলেন, কিন্তু উনার স্ত্রী ছিলেন স্বচ্ছল। রাসুলুল্লাহ (স.) একদিন মেয়েদেরকে নসিহত করলেন, বেশি বেশি দান-সদকা করতে। এই নসিহত শুনে তিনি বাড়িতে এসে স্বামী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-কে বললেন, রাসুলুল্লাহ (স.) আমাদেরকে নসিহত করলেন দান-সদকা করতে। এখন আমি যদি তোমাকে ও তোমার সন্তানদেরকে সদকা করি, তাহলে কি আমি সদকার সওয়াব পাবো? যদি সওয়াব পাই তাহলে তোমাকে দেবো, না হয় দরিদ্র অসহায়কে। তুমি নবীজির কাছে গিয়ে বিষয়টি জেনে আসলে ভালো হয়।
তখন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ বললেন, তুমি নিজে গিয়ে শুনে আসো না কেন? তখন তিনি (স্ত্রী) নবীজির কাছ থেকে মাসয়ালাটি জানার জন্য চলে গেলেন। আয়েশা (রা.) নবীজিকে বললেন, আপনার সঙ্গে জয়নব দেখা করতে চায়। রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন কোন জয়নব? আয়েশা (রা.) বললেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর স্ত্রী। তখন রাসুল (স.) বললেন, আসতে বলো। জয়নব গিয়ে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি তো দান করতে বলেছেন, আমি যদি আমার স্বামীকে দান করি, তাহলে কি সওয়াব পাবো? তখন নবীজি (স.) বললেন, এতে তুমি দ্বিগুন সওয়াব পাবে। কারণ, একদিকে তুমি দান করছো, আরেকদিকে তুমি তোমার আপনজদের রক্ষা করছো।
এজন্য স্ত্রী নিজের সম্পদ থেকে কাউকে যদি দিতেই চান, দ্বিগুন সওয়াবের উদ্দেশ্যে স্বামী সন্তানের জন্য খরচ করা উচিত। স্বামী কোনো অবস্থাতেই স্ত্রীর সম্পদ থেকে অনুমতি ছাড়া খরচ করতে পারবেন না। স্ত্রীর উপার্জিত অর্থ থেকে এক পয়সা দাবিও করতে পারেন না। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।