ধর্ম ডেস্ক
০২ জুলাই ২০২২, ০৪:১৭ পিএম
আল্লাহ তাআলার সাক্ষ্যদান সব কিছুর ঊর্ধ্বে, যেকোনো বিষয়ে তাঁর সাক্ষ্যদানই যথেষ্ট ও চূড়ান্ত। ইরশাদ হয়েছে, ‘বলো, সাক্ষ্যতে সর্বশ্রেষ্ঠ বিষয় কী? বলো আল্লাহ আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী’ (সুরা আনআম: ১৯)। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ নিজেকে ‘শাহিদ’ (সাক্ষ্যদানকারী) আখ্যা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৮)
পবিত্র কোরআনে আরও ইরশাদ হয়েছে, বলো, ‘হে আহলে কিতাব, তোমরা কেন আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করছ ? আর আল্লাহ তোমরা যা করছ সে ব্যাপারে সাক্ষী।’ (সুরা আলে ইমরান: ৯৮) ইসলামের প্রাথমিক যুগে আরবের ইহুদিরা ইনজিল ও তাওরাতের সুসংবাদ অনুযায়ী শেষ নবীর আগমনের অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে মহানবী (স.) যখন মদীনায় এলেন, তখন অধিকাংশ ইহুদিই মহানবী ও পবিত্র কোরআনের ওপর ঈমান আনার পরিবর্তে মুসলমানদের শত্রুদের সঙ্গে সংঘবদ্ধ হয় এবং অন্যদেরকেও ঈমান আনার পথে বাধা দিতে থাকে। আল্লাহ এ আয়াতে মহানবী (স.)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে নবী! তুমি ইহুদিদেরকে বলো, তোমরা কি জানো যে, আল্লাহ তোমাদের গোপন তৎপরতা সম্পর্কে জানেন এবং কখনোই তোমাদের ব্যাপারে অনবহিত বা অচেতন নন। তাই কেন আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করছ? এবং কেন মুমিনদেরকে সরল পথ থেকে বিচ্যুত করার চেষ্টা চালাচ্ছো?
ইসলামে সাক্ষ্য বিষয়টি খুব গরুত্বপূর্ণ। আর আল্লাহই যখন সাক্ষী হয়ে যান, তা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এজন্যেই রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁর দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে আবেদন করে বলেছিলেন, হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন। উপস্থিত লোকেরা যেন অনুপস্থিত ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেয়। (সহিহ বুখারি: ১৭৪১) কোরআনে আরও বলা হয়েছে, ‘বলো, ‘আমি তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান চাইনি, বরং তা তোমাদেরই। আমার প্রতিদান তো কেবল আল্লাহর নিকট এবং তিনি সব কিছুর উপরই সাক্ষী। (সুরা সাবা: ৪৭)
এই আয়াতে নবুয়ত প্রচারে নবী (স.) নিজের কোনো স্বার্থ ছিল না এবং তাঁর পার্থিব ধন-সম্পদের কোনো লোভ ছিল না, সে সাক্ষী মহান আল্লাহ দিয়েছেন, যাতে তাদের মনে এই সন্দেহ সৃষ্টি হয়ে তারা দূরে সরে না যায় যে, উক্ত দাওয়াতের পিছনে তাঁর পার্থিব ধন-সম্পদ উপার্জন উদ্দেশ্য আছে।
অন্য আয়াতে এসেছে, ‘বিশ্বজগতে ও তাদের নিজদের মধ্যে আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী দেখাব যাতে তাদের কাছে সুস্পষ্ট হয় যে, এটি (কোরআন) সত্য; তোমার রবের জন্য এটাই যথেষ্ট নয় কি যে, তিনি সকল বিষয়ে সাক্ষী?’ (সুরা হা মিম সাজদাহ: ৫৩) আল্লাহ তাআলার এই প্রশ্ন হলো স্বীকৃতিসূচক। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা নিজ বান্দার কথা ও কর্মের সাক্ষী থাকার জন্য যথেষ্ট। আর তিনিই এ কথার সাক্ষ্য দেন যে, কোরআন আল্লাহর বাণী, যা তাঁর সত্য রাসুল মুহাম্মদ (স.)-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে।
পবিত্র কোরআনে ‘শাহিদ’ শব্দটি প্রত্যক্ষকারী অর্থেও ব্যবহৃত হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ের প্রত্যক্ষকারী’ (সুরা হজ: ১৭)। অন্য আয়াত থেকে জানা যায়, মানুষের কৃতকর্ম নিজেদের স্মরণ না থাকলেও আল্লাহর কাছে তা কোনো ব্যাপার নয়। তিনি প্রত্যেকের আমলকে হিসেব করে সুরক্ষিত করে রেখেছেন। আল্লাহ তাআলা বলছেন, ‘যেদিন আল্লাহ তাদের সকলকে পুনরুজ্জীবিত করে উঠাবেন অতঃপর তারা যে আমল করেছিল তা তাদেরকে জানিয়ে দেবেন। আল্লাহ তা হিসেব করে রেখেছেন যদিও তারা তা ভুলে গেছে। আর আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী।’ (সুরা মুজাদালা: ৬)
আল্লাহর নাম ‘শাহিদ’-এর অর্থ প্রত্যক্ষকারী ও সাক্ষ্যদানকারী উভয়টি গ্রহণ করা বৈধ। কেননা কোনো কিছুই আল্লাহর দৃষ্টির আড়ালে নয়, বরং সব কিছু তাঁর দৃষ্টিশক্তি ও জ্ঞানের অধীন। আর আল্লাহ যেহেতু সব কিছু দেখেন, প্রত্যক্ষ করেন, তাই তিনি সর্ববিষয়ে সাক্ষী। আল্লামা জাজ্জাজি (রহ.) বলেন, ‘যখন আল্লাহর কাছে কোনোকিছুই অজ্ঞাত নয়, তখন আল্লাহ সর্ববিষয়ে প্রত্যক্ষকারী ও সাক্ষ্যদানকারী।’ (ইশতিকাকু আসমায়িল্লাহ, পৃষ্ঠা-১৩২) আল্লাহ তাআলার সাক্ষী হওয়ার গুরুত্ব বর্ণনায় আবুল আব্বাস আহমদ ইবনে ইয়াহইয়া বলেন, ‘আল্লাহ অত্যাচারিত ব্যক্তির পক্ষে সাক্ষী, পৃথিবীতে যার পক্ষে এবং অত্যাচারী ব্যক্তির বিপক্ষে কোনো সাক্ষ্যদানকারী নেই; যে অত্যাচারীর অত্যাচার প্রতিহত করার কেউ নেই।’ (শানুদ দোয়া, পৃষ্ঠা ৭৫)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাঁর সাক্ষী বিষয়ে সাবধান হওয়ার এবং তাঁর প্রতিটি আদেশ নিষেধ যথাযথ মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।