images

ইসলাম

জিলহজ মাসের যে আমল শবে কদরের সমতূল্য

ধর্ম ডেস্ক

০২ জুলাই ২০২২, ১২:৪১ পিএম

জিলহজ মাস বছরের সম্মানিত চার মাসের একটি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস ১২টি, আসমান ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত।’ (সুরা তাওবা: ৩৬) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হাদিসে এসেছে, ওই চারটি সম্মানিত মাস হলো—জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব। 

জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের মর্যাদা, মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনায় আল্লাহ তাআলা কসম করে বলেন, ‘শপথ প্রভাতের। শপথ ১০ রাতের।’ (সুরা ফাজর: ১-২) তাফসিরবিদরা বলেন, এখানে যে ১০ রাতের কথা বলা হয়েছে, এর মাধ্যমে জিলহজের প্রথম দশককেই বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে ইবনে কাসির, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা-৫৩৫)

এই ১০ দিনের আমলের ফজিলত সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে জিলহজের প্রথম দশকের নেক আমলের চেয়ে অন্য কোনো দিনের আমলই উত্তম নয়।’ সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও এই দশকের আমলের চেয়ে উত্তম নয়? রাসুল (স.) বললেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও এর চেয়ে উত্তম নয়; তবে ওই ব্যক্তি ছাড়া, যে তার সর্বস্ব নিয়ে জিহাদে অংশগ্রহণ করল এবং কিছুই নিয়ে ফিরে এলো না’ (আবু দাউদ: ২৪৩৮; বুখারি: ৯৬৯)। জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘মহান আল্লারহ কাছে জিলহজের ১০ দিনের চেয়ে উত্তম কোনো দিন নেই।’ (সহিহ ইবনে হিববান: ২৮৪২)

অন্য হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে জিলহজের প্রথম দশকের নেক আমলের চেয়ে বেশি প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই। এ দিনগুলোর এক দিনের রোজা এক বছরের রোজার সমতুল্য এবং এক রাতের ইবাদত শবেকদরের ইবাদততুল্য।’ (তিরমিজি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা-১৫৮)

এছাড়াও এই দিনগুলোতে তাকবির (আল্লাহু আকবর), তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ), তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ) পড়া সুন্নত। এসব দিনে জিকিরের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে এই ১০ দিনের আমলের চেয়ে বেশি প্রিয় ও মহান কোনো আমল নেই। তাই তোমরা এই সময় তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবির (আল্লাহু আকবর) ও তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ) বেশি বেশি করে পাঠ করো।’ (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান: ৩৪৭৪)

জিলহজ মাসে রোজার গুরুত্বও অনেক বেশি। বিশেষ করে প্রথম ৯ দিনের মধ্যে নবম দিনের রোজা সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আরাফার দিনের (৯ তারিখের) রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে তিনি এর দ্বারা বিগত এক বছর ও আগামী বছরের গুনাহ মাফ করবেন। (সহিহ মুসলিম: ১১৬২; আবু দাউদ: ২৪২৫)

তবে, মনে রাখা দরকার, জিলহজ মাসের বিশেষ আমল হলো কোরবানি করা। এটি সামর্থ্যবানদের ওপর ওয়াজিব। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তোমার রবের জন্য নামাজ আদায় করো এবং কোরবানি করো’ (সুরা কাউসার: ২)। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে। (সহিহ বুখারি: ৬৪৯০; ইবনে মাজাহ: ৩১২৩)

উল্লেখ্য, জিলহজ মাস হচ্ছে হজের মাস। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হজ নির্ধারিত মাসগুলোতে (অনুষ্ঠিত হবে)। অতঃপর কেউ এ মাসগুলোতে হজের ইচ্ছা করলে সে যেন হজের সময় স্ত্রী-সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও কলহ-বিবাদ করবে না।’ (সুরা বাকারা: ১৯৭)

প্রসঙ্গত, জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ফজরের নামাজ থেকে ১৩ তারিখ আসরে নামাজ পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের শেষে একবার করে বিশেষ তাকবির বলা ওয়াজিব। যাকে তাকবিরে তাশরিক বলা হয়। এই তাকবিরটি হলো—
ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻛﺒﺮ، ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ، ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ ﻭﻟﻠﻪ ﺍﻟﺤﻤﺪ উচ্চারণ: ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওআল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ’ অর্থ: আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই। আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। (দারু কুতনি: ১৭৫৬; ইরওয়াউল গালিল: ৬৫৪)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জিলহজ মাসের ফজিলত বুঝার এবং সে অনুযায়ী বেশি বেশি ইবাদত করার তাওফিক দান করুন, আমিন।