ধর্ম ডেস্ক
২৯ জুন ২০২২, ১০:৩৮ এএম
পবিত্র নগরী মক্কা থেকে ১৩-১৪ কিলোমিটার পূর্বে জাবালে রহমতের পাদদেশে ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত আরাফাতের ময়দানের অবস্থান। এর দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ যথাক্রমে দুই কিলোমিটার। তিন দিকে পাহাড়বেষ্টিত। এ ময়দানের দক্ষিণ পাশ ঘেঁষে রয়েছে মক্কা-হাদাহ-তায়েফ রিং রোড। এ রোডের দক্ষিণ পাশেই আবেদি উপত্যকায় মক্কার ঐতিহাসিক ‘উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়’ অবস্থিত।
উত্তরে সাদ পাহাড়। সেখান থেকে আরাফাতের ময়দানের সীমানাও প্রায় ১ কিলোমিটার। সেখান থেকে দক্ষিণে গিয়ে মসজিদে নামিরায় আরাফাতের ময়দানের সীমানা শেষ হয়েছে। আরাফাত শব্দটি আরবি। অর্থ জানা, চেনা, পরিচয় লাভ করা, অবহিত হওয়া, স্বীকার করা, স্বীকৃতি দান করা ইত্যাদি।
এ ময়দানের নাম আরাফাত কীভাবে হলো—এ নিয়ে প্রসিদ্ধ মত হলো জিবরাঈল (আ.) যখন ইবরাহিম (আ.)-কে হজের বিধি-বিধান শিক্ষা দেন তখন তাঁরা আরাফাতের ময়দানে মসজিদে নামিরার পাশে ছিলেন। জিবরাঈল (আ.) শিক্ষা দেওয়ার পর তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ‘হাল আরাফতা’ অর্থাৎ ‘আপনি কি বুঝতে পেরেছেন’? হজরত ইবরাহিম (আ.) বলেন, হ্যাঁ। এর থেকে এ ময়দানের নাম হয়ে গেছে আরাফাত।
তবে কোনো স্কলার বলেন, মহান আল্লাহ হজরত আদম (আ.)-কে জান্নাত থেকে সিংহলে এবং হাওয়া (আ.)-কে জেদ্দায় নিক্ষেপ করেন। সাড়ে তিন শ বছর কান্নাকাটির পর আরাফাতের মাঠে তাঁদের সাক্ষাৎ হয় এবং মহান আল্লাহ সেখানে তাঁদের গুনাহ ক্ষমা করেন। দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর এ মাঠে তাঁদের পরিচয় ঘটে বলে এর নাম হয়ে যায় আরাফাত। কারো মতে, হজযাত্রীরা আরাফাতের ময়দানে পাপের স্বীকৃতি দান করেন বলে এ ময়দানকে আরাফাতের ময়দান বলা হয়।
এ ময়দানে বিশ্ব মুসলিমের ঐক্যের স্মৃতিস্তম্ভ অবস্থিত। জিলহজ মাসের ৯ তারিখ পবিত্র আরাফাতের দিন। আরাফাতের মাঠে অবস্থানকে হজ বলা হয়েছে। এ মাঠে নির্দিষ্ট কোনো ইবাদত নেই, তবুও আরাফাতে অবস্থানকেই হজের শ্রেষ্ঠ রুকন করা হয়েছে। এ সম্মিলন থেকে মুসলমানদের ঐক্য, শৃঙ্খলা ও শান্তির বার্তা সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
এ দিনেই অবতীর্ণ হয়েছে কোরআনে কারিমের সর্বশেষ আয়াত, ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করলাম এবং ইসলাম তোমাদের দীন মনোনীত করলাম। (সুরা মায়েদা: ০৩)
এদিন বান্দার দিকে রবের রহমতের জোয়ার প্রবলবেগে উৎসারিত হয়। অসংখ্য বান্দাকে তিনি ক্ষমা করে থাকেন এ দিনে। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, ‘আরাফার দিনের মতো আর কোনো দিন এত অধিক পরিমাণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় না। আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার নিকটবর্তী হন এবং বান্দাদের নিয়ে ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করেন। আল্লাহ বলেন, কী চায় তারা? (সহিহ মুসলিম: ১৩৪৮)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সকল হজযাত্রীকে আরাফাতের ময়দানে ক্ষমা করুন। হজের যাবতীয় বিধিবিধান সুন্নাহ অনুযায়ী পালন করার তাওফিক দান করুন। হজে মাবরুর নসিব করুন। আমিন।