ধর্ম ডেস্ক
২৮ জুন ২০২২, ১১:১৩ এএম
সাফা-মারওয়া দুটি পাহাড়ের নাম। এই পাহাড় দুটি সায়ি করা মহান আল্লাহর অনন্য এক নিদর্শন। হজ ও ওমরায় সাফা-মারওয়া সায়ি করা ওয়াজিব। তবে তা সুন্নত পদ্ধতিতেই করতে হবে, তা না হলে ওয়াজিব আদায় হবে না। আর কেউ তা করতে ভুলে গেলে বা ইচ্ছাকৃত না করলে তার ওপর কাফফারা হিসেবে দম ওয়াজিব হবে।
হজ ও ওমরা পালনকারীদেরকে তাওয়াফের পর মাকামে ইবরাহিমে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে (সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করে) ‘বাবুস সাফা’ দিয়ে সাফা পাহাড়ে আরোহন করবে আর এ আয়াত পাঠ করা—
إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِن شَعَائِرِ اللَّهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَن يَطَّوَّفَ بِهِمَا وَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَإِنَّ اللَّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ ‘ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিং শাআয়িরিল্লাহি ফামান হাজ্জাল বাইতা আয়ি’তামারা ফালা ঝুনাহা আলাইহি আঁইয়্যাতত্বাওয়াফা বিহিমা ওয়া মাং তাত্বাওওয়াআ খাইরান ফাইন্নাল্লাহা শাকেরুন আলিম।’ (সুরা বাকারা: ১৫৮)
অতঃপর কেবলামুখী হয়ে اَلْحَمْدُ لِلَّهِ اَللهُ اَكْبَر ‘আলহামদুলিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলা। সাফা পাহাড়ে উঠে কাবার দিকে মুখ করে উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত তুলে এ দোয়াটি তিন বার করা—
أَبْدَأُ بِمَا بَدَأ اللهُ بِهِ اِنَّ الصَّفَا وَ الْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللهِ ‘আবদাউ বিমা বাদাআল্লাহু বিহি ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শাআইরিল্লাহি’ অতঃপর তিন বার হামদ ও ছানা পাঠ করা। উচ্চৈঃসরে তাকবির ও তাহলিল পড়া—
اَللهُ اَكْبَر لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَ لَهُ الْحَمْدُ وَ هُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْر لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهُ اَنْجَزَ وَعْدَهُ وَ نَصَرَ عَبْدَهُ وَ هَزَمَ الْاَحْزَابَ وَحْدَهُ ‘আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িং কাদির। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু আনজাযা ওয়াদাহু, ওয়া নাসারা আবদাহু, ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহু।’ এর পরে দরুদ পাঠ করা এবং নিজের জন্য প্রয়োজনীয় দোয়া করে সাফা থেকে মারওয়ার দিকে চলতে শুরু করা।
মনে রাখতে হবে, সাফা-মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী সবুজ চিহ্নিত স্থান পুরুষরা দৌড়েে অতিক্রম করবে আর নারীরা দৌড়াবে না। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, এত দ্রুত অতিক্রম করা যাবে না যে, সঙ্গে কোনো নারী সঙ্গী থাকলে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর সবুজ বাতি চিহ্নিত নির্ধারিত স্থানটি দ্রুততার সঙ্গে অতিক্রম করার সময় এ দোয়াটি পড়া— رَبِّى اغْفِرْ وَارْحَمْ اَنتَ الْاَعَزُّ وَ الْاَكْرَام ‘রাব্বিগফির ওয়ারহাম আনতাল আআ’যযু ওয়াল আকরাম।’
সবুজ চিহ্নিত স্থান পার হওয়ার পর স্বাভাবিক গতিতে চলা এবং এ দোয়া বেশি বেশি পড়া— اَللهُ اَكْبَر - اَللهُ اَكْبَر- اَللهُ اَكْبَر- وَ لِلَّهِ الْحَمْدُ اَللَّهُمَّ حَبِّبْ اِلَيْنَا الْاِيْمَانَ وَ كَرِّهْ اِلَيْنَا الْكُفْرَ وَالْفُسُوْقَ وَالْعِصْيَانَ وَاجْعَلْنَا مِنْ عِبَادِكَ الصَّالِحِيْنَ ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদু। আল্লাহুম্মা হাব্বিব ইলাইনাল ইমানা ওয়া কাররিহ ইলাইনাল কুফরা ওয়াল ফুসুক্বা ওয়াল ইসয়ানা ওয়াঝআলনা মিন ইবাদিকাস সালিহিন।’
মারওয়া পাহাড়ে গিয়েও সাফা পাহাড়ের মতো হামদ ছানা, দরুদ ও দোয়া করে পুনরায় সাফা পাহাড়ের দিকে রওনা করা। সাফার দিকে যাওয়ার সময় আবার এ দোয়া পড়া-
اَللهُ اَكْبَر - اَللهُ اَكْبَر- اَللهُ اَكْبَر- وَ لِلَّهِ الْحَمْدُ - لَا اِلَهَ اِلَّا الله وَحْدَهُ صَدَقَ وَعْدَهُ وَ نَصَرَ عَبْدَهُ وَ هَزَمَ الأحْزَابَ وَحْدَهُ – لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَ لَا نَعْبُدُ اِلَّا اِيَّاهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَفِرُوْنَ - رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَ اَنْتَ الْاَعَزُّ الْاَكْرَمُ إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِن شَعَائِرِ اللَّهِ ۖ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَن يَطَّوَّفَ بِهِمَا ۚ وَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَإِنَّ اللَّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদু। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু সাদাক্বা ওয়াদাহু ওয়া নাসারা আবদাহু ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহু; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া লা নাবুদু ইল্লা ইয়্যাহু মুখলিসিনা লাহুদদ্বীন ওয়া লাও কারিহাল কাফিরুন। রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতাল আআযযুল আকরাম। ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিং শাআয়িরিল্লাহি ফামান হাজ্জাল বাইতা আয়ি’তামারা ফালা ঝুনাহা আলাইহি আঁইয়্যাতত্বাওয়াফা বিহিমা ওয়া মাং তাত্বাওওয়াআ খাইরান ফাইন্নাল্লাহা শাকেরুন আলিম।’
অতঃপর সাফার দিকে আসার সময়ও সবুজ চিহ্নিত স্থানে পূর্বোল্লিখিত দোয়া পড়া। এভাবে সাফা-মারওয়ায় সাঈ শেষ হওয়ার পর এ দোয়া পড়া—
رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الَعَلِيْمُ – وَ تُبْ عَلَيْنَا اِنَّكَ اَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحَيْمُ – وَ صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلَى خَيْرِ خَلْقِهِ مُحَمَّدٍ وَّاَلِهِ وَ اَصْحَابِهِ اَجْمَعِيْنَ وَارْحَمْنَا مَعَهُمْ بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَ ‘রাব্বানা তাক্বাব্বাল মিন্না ইন্নাকা আনতাছ্ ছামিউল আলিম। ওয়অতুব্ আলাইনা ইন্নাকা আংতাত্ তাওয়্যাবুর্ রাহিম। ওয়া সাল্লাল্লাহু তাআলা আলা খাইরি খালক্বিহি মুহাম্মাদিউ ওয়া আলিহি ওয়া আসহাবিহি আজমাইন ওয়ারহামনা মাআহুম বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।’
এভাবে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সাত চক্কর দৌড়ানোর মাধ্যমে সায়ি সম্পন্ন করা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পবিত্র হজ ও ওমরা পালনে সাফা-মারওয়ার প্রতিটি চক্কর সহিহ সুন্নাহ অনুযায়ী যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন এবং হজে মাবরুর কবুল করুন। আমিন।