ধর্ম ডেস্ক
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:৩৪ পিএম
বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (স.) ছিলেন আল্লাহর শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি; এক পরিপূর্ণ মানবিক আদর্শ, যার চরিত্র, সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্বের তুলনা ইতিহাসে নেই। তাঁর প্রতিটি আচরণে ফুটে উঠত দয়া, বিনয়, সাহসিকতা ও সত্যবাদিতার দীপ্তি। সাহাবিরা (রা.) ছিলেন তাঁর এই মহান জীবনের নিকটতম সাক্ষী; তাঁরা গভীর মুগ্ধতা ও অপরিসীম ভালোবাসায় নবীজির (স.) প্রতিটি গুণাবলী হৃদয়ে ধারণ করতেন এবং তা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করেছেন অনন্য বর্ণনায়। তাঁদের চোখে ধরা পড়েছে এমন এক সৌন্দর্য ও মহত্ত্ব, যা শুধু দেখার নয়; অনুভবের, ভালোবাসার এবং অনুসরণের।
রাসুলুল্লাহ (স.)-এর শারীরিক সৌন্দর্য ছিল অতুলনীয়। তিনি ছিলেন মধ্যম উচ্চতার, উজ্জ্বল গোলাপি-বাদামি গাত্রবর্ণের অধিকারী। তাঁর মুখমণ্ডল ছিল পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল, আর চোখ দুটি ছিল গভীর ও মমতায় ভরপুর। কেশরাশি ছিল ঘন, কালো ও কোমল, যা কানের লতিতে গিয়ে শেষ হতো। দাঁত ছিল ঝকঝকে, হাসি ছিল মুগ্ধকর। তাঁর ঘন দাড়ি, সুগঠিত গলা এবং পিঠের মাঝখানে অবস্থিত ‘মোহরে নবুয়ত’ যা তাঁকে করে তুলেছিল স্বতন্ত্র।
রাসুলুল্লাহ (স.) ছিলেন দয়ালু, বিনয়ী, ধৈর্যশীল এবং সহনশীল। দাস-দাসী, শিশু, বৃদ্ধ, অমুসলিম—সবার সঙ্গেই তিনি সম্মানজনক আচরণ করতেন। তাঁর চরিত্র ছিল সীমাহীন সৌন্দর্যে আধার। সর্বাধিক সত্যবাদী ও আমানতদার; এমনকি অমুসলিমরাও ‘আল-আমিন’ বলে ডাকত। দানশীলতায় ছিলেন সীমাহীন; কেউ কিছু চাইলে ফিরিয়ে দিতেন না। ন্যায়পরায়ণতা ও সাহসিকতা ছিল তাঁর চরিত্রের শক্ত ভিত্তি। লজ্জাশীলতা ও মিতভাষিতা ছিল তাঁর অভ্যাস। তিনি সহজতম কাজকে প্রাধান্য দিতেন এবং ব্যক্তিগত আঘাতের প্রতিশোধ নিতেন না।
আরও পড়ুন: মেরাজ: সাত আসমান পেরিয়ে আল্লাহর দিদার লাভের অসাধারণ গল্প
১. হজরত আলী (রা.) বলেন, ‘তিনি ছিলেন মধ্যম উচ্চতার। চুল ছিল সোজা ও কোঁকড়ানো—দুয়ের মাঝামাঝি। মুখমণ্ডল ছিল উজ্জ্বল ও গোলাপি। হাঁটতেন এমন ভঙ্গিতে যেন ঢালু থেকে নামছেন।’
২. হজরত আনাস (রা.)-এর বর্ণনায়, ‘আমি কখনো নবীজি (স.)-এর হাতের চেয়ে নরম কিছু ছুঁইনি। তাঁর শরীর ছিল এমন সুগন্ধিযুক্ত, যা মিশক বা আম্বর থেকেও উৎকৃষ্ট।’
৩. উম্মু মাবাদ (রা.)-এর সেই বিখ্যাত বর্ণনা: ‘তাঁর চেহারা ছিল উজ্জ্বল ও দীপ্তিময়। গভীর নয়ন ও গম্ভীর কণ্ঠে তিনি ছিলেন অপার মোহনীয়। তাঁর কথাবার্তা ছিল মিষ্ট, প্রাঞ্জল ও ভারসাম্যপূর্ণ—যেন মুক্তোর মালা। তিনি যখন চুপ থাকতেন, তখন গাম্ভীর্য ফুটে উঠত। মাঝারি উচ্চতা ও ঘন কেশে তিনি ছিলেন নজরকাড়া ও সম্মানজনক ব্যক্তিত্ব। তাঁর উপস্থিতি দূর থেকে মোহনীয় ও নিকট থেকে মধুর; আচরণে ভদ্রতা ও ভারসাম্যের ছাপ। সে মুখশ্রী বড়ই সুন্দর, বড়ই সুদর্শন ও সুমহান। সাহাবিরা তাঁর কথা আগ্রহ সহকারে শ্রবণ করেন এবং তাঁর আদেশ উৎফুল্ল চিত্তে পালন করেন।’
৪. হজরত বারা (রা.) বলেন, ‘আমি তাঁর চেয়ে সুন্দর কাউকে দেখিনি। তাঁর কেশরাশি কানের লতিতে পৌঁছত, আর পোশাকে ছিলেন অনিন্দ্যসুন্দর।’
আরও পড়ুন: নবীপ্রেমের প্রকৃত রূপ: আনুষ্ঠানিকতা নয়, সুন্নাহর অনুসরণ
৫. হজরত জাবির বিন সামুরা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আমি একবার চাঁদের দিকে তাকালাম, তারপর নবীজি (স.)-এর দিকে। এরপর আমার মনে স্থির হলো যে, তিনি চাঁদের চেয়েও সুন্দর।’
৬. হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নবীজি (স.)-এর চরিত্র ছিল কোরআনের প্রতিচ্ছবি। সহজ পথকে বেছে নিতেন, নিজের জন্য কোনো প্রতিশোধ নিতেন না, তবে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘিত হলে তিনি কঠোর হতেন।’
৭. হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘তাঁর চেহারা ছিল এমন, যেন আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছিল।’
৮. হজরত হিন্দ বিন আবি হালা (রা.) বলেন, ‘তিনি ছিলেন সদা প্রফুল্লচিত্ত, নম্র এবং সংযত। অপ্রয়োজনীয় কথা বলতেন না; যা বলতেন, তা ছিল স্পষ্ট ও অর্থবহ।’
সাহাবায়ে কেরামের বর্ণনায় স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে যে, রাসুলুল্লাহ (স.) ছিলেন শারীরিক সৌন্দর্য, চরিত্রিক মহত্ত্ব এবং আধ্যাত্মিক পূর্ণতার এক অনুপম দৃষ্টান্ত। তাঁর জীবন সর্বোত্তম আদর্শ, যা অনুসরণ করে মানবজাতি শান্তি ও কল্যাণের পথে চলতে পারে।
হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘নবীজি (স.)-এর জন্য সাহাবিদের ভালোবাসা এত গভীর ছিল যে, তারা তাঁর কষ্ট কখনোই সহ্য করতে পারতেন না। তাঁর জন্য তারা প্রাণও উৎসর্গ করতে প্রস্তুত ছিলেন।’
আল্লাহ তাআলা বলেন- وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٍ ‘আর নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সুরা কলম: ৪)
(সহিহ বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, শামায়েলে তিরমিজি, সিরাত ইবনে হিশাম)