ধর্ম ডেস্ক
০১ আগস্ট ২০২৫, ০৪:৫০ পিএম
আল্লাহ তাআলার কাছে পবিত্র বান্দাদের গুরুত্ব ও মর্যাদা অনেক বেশি। পবিত্রতা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হলো অজু। নামাজের জন্য অজু অপরিহার্য, কেননা অজু ছাড়া নামাজ শুদ্ধ হয় না। আল্লাহ তাআলা বলেন— ‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে এবং তোমাদের মাথা মাসেহ করো ও দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করো।’ (সুরা মায়েদা: ৬)
নামাজ জান্নাতের চাবি, আর সেই নামাজ শুরু হয় অজু দিয়ে—অতএব অজুর গুরুত্ব অপরিসীম। অজু আমাদের শুধু বাহ্যিকভাবে নয়, অন্তর থেকেও পরিশুদ্ধ করে। হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন— ‘বেহেশতের চাবি হচ্ছে নামাজ, আর নামাজের চাবি হলো অজু।’ (মুসনাদে আহমদ: ৩, ৩৪০ পৃ.)
নামাজের জন্য অজু করা বাধ্যতামূলক হলেও, সবসময় অজু অবস্থায় থাকা একটি মুস্তাহাব আমল— যার ফজিলত অত্যন্ত বড়। এর মাধ্যমে আল্লাহর ভালোবাসা লাভ হয়। আল্লাহ তাআলা কোরআনে ইরশাদ করেন—‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাওবাকারী এবং পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা: ২২২)
আরও পড়ুন: অজুর পর যে দোয়া পড়লে জান্নাতের ৮টি দরজাই খুলে যায়
বিশিষ্ট সাহাবি হজরত বেলাল (রা.) সবসময় অজু অবস্থায় থাকার অভ্যাস গড়ে তুলেছিলেন। এ কারণে আল্লাহ তাআলা তাকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (স.) জান্নাতে তাঁর জুতার শব্দ শুনতে পেয়েছেন।
হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত— ‘রাসুল (স.) হজরত বেলালকে (রা.) বললেন, তোমার সর্বোত্তম আমল সম্পর্কে আমাকে বলো, আমি জান্নাতে তোমার জুতার শব্দ শুনতে পেয়েছি। বেলাল (রা.) বললেন, আমার সর্বোত্তম আমল হলো, আমি রাতে ও দিনে অজু অবস্থায় থাকি। আর যখনই অজু করি তখনই সাধ্যমতো নামাজ আদায় করি।’ (কানজুল উম্মাল: ৩৫৪৫৪)
অজু শুধু ইবাদতের উপকরণ নয়, বরং তা রাতে ঘুমানোর সময়ও এক বিশেষ রহমতের দরজা খুলে দেয়। যারা অজু অবস্থায় ঘুমায়, তাদের জন্য ফেরেশতা দোয়া করেন। রাসুল (স.) বলেছেন— ‘তোমরা তোমাদের দেহগুলোকে পবিত্র রাখবে, আল্লাহ তোমাদের পবিত্র করুন। যদি কোনো বান্দা অজু অবস্থায় ঘুমায় তাহলে তার পোশাকের মধ্যে একজন ফেরেশতা শুয়ে থাকেন। রাতে যখনই এ ব্যক্তি নড়াচড়া করে তখনই এ ফেরেশতা বলেন, হে আল্লাহ আপনি এ ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিন, কারণ সে অজু অবস্থায় ঘুমিয়েছে।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৩/৩২৮; আলবানি, সহিহুত তারগিব: ১/৩১৭)
আরও পড়ুন: টয়লেট বাথরুম একসঙ্গে, অজু শুদ্ধ হবে?
অজু অবস্থায় মৃত্যু হলে শহীদের মর্যাদা পাওয়া যায়। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন— ‘রাসুল (স.) আমাকে বলেছিলেন, হে আমার বেটা! সম্ভব হলে সবসময় অজু অবস্থায় থাকবে। কেননা মৃত্যুর ফেরেশতা অজু অবস্থায় যার জান কবজ করেন, তার শাহাদাতের মর্যাদা লাভ হয়।’ (শুয়াবুল ঈমান, বায়হাকি: ২৭৮৩)
তাই আমাদের উচিত শুধু নামাজের সময় নয়, বরং সম্ভব হলে সবসময় অজু অবস্থায় থাকার চেষ্টা করা—আল্লাহর সন্তুষ্টি, আত্মিক প্রশান্তি এবং আখেরাতের কল্যাণ লাভের আশায়। আল্লাহ আমাদের সবসময় পবিত্র থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।