ধর্ম ডেস্ক
২১ জুলাই ২০২৫, ০১:৪২ পিএম
দাঁড়িপাল্লা ন্যায় ও ইনসাফের প্রতীক, যা কেয়ামতের দিনে আমাদের আমল মাপার মানদণ্ড হবে। এই প্রতীক যেন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বাস্তবতায় পরিণত হয়—নিজেকে নিজেই প্রতিদিন ওজন করার অভ্যাসে। ইসলামে আত্মমূল্যায়ন বা মুহাসাবা (محاسبة) অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন- ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং প্রত্যেকেই যেন লক্ষ্য করে সে আগামী দিনের জন্য কী প্রস্তুত করেছে।’ (সুরা হাশর: ১৮)
এই আয়াতটি মুমিনকে দৈনিক আত্মসমালোচনায় উদ্বুদ্ধ করে, যেন সে আখেরাতের জন্য প্রস্তুত থাকতে পারে।
ইসলাম শিক্ষা দেয়—কেয়ামতের দিন প্রতিটি মানুষের আমল মিজান বা দাঁড়িপাল্লায় ওজন করা হবে।
আল্লাহ বলেন- ‘আর কেয়ামতের দিনে আমি ন্যায়বিচারের দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করব, ফলে কারো ওপর বিন্দুমাত্র জুলুম করা হবে না।’ (সুরা আম্বিয়া: ৪৭)
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- ‘বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি, যে নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেয়।’ (তিরমিজি: ২৪৫৯)
এই দলিলগুলো আমাদের শেখায়—দৈনিক আত্মপরীক্ষাই প্রকৃত প্রজ্ঞার পরিচয়।
আরও পড়ুন: ঈমান মজবুত করতে যে দোয়া পড়বেন
১. সন্ধ্যার আত্মসমালোচনা (মুহাসাবা): প্রতিদিন রাতের শেষে, ঘুমানোর আগে ৫–১০ মিনিট সময় বের করুন। নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন- আজকের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আমি কতটা ইখলাসের সঙ্গে আদায় করেছি? কোনো গুনাহ হয়ে থাকলে তাওবা করেছি কি? পরিবার, প্রতিবেশী বা সহকর্মীর প্রতি আমার ব্যবহার কেমন ছিল?
২. আমল রেকর্ড সংরক্ষণ: একটি ছোট নোটবুককে ‘আমল ডায়েরি’ হিসেবে ব্যবহার করুন। প্রতিদিন লিখুন- আজ কাউকে আর্থিক, মানসিক বা মানসিকভাবে সাহায্য করেছি কি? অপ্রয়োজনীয় কথা বা গিবত থেকে বিরত থাকতে পেরেছি? কোরআন তেলাওয়াতে মনোযোগ ছিল কি?
৩. নিয়তের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা: ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেন- ‘নেক আমল তখনই গ্রহণযোগ্য হয়, যখন নিয়ত খাঁটি হয়।’ প্রতিটি কাজ শুরু করার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন- ‘আমি কি এটা শুধুই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করছি?’
৪. তাওবার নিত্য অভ্যাস: রাসুল (স.) বলেন- ‘আমি দিনে সত্তরবার আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।’ (সহিহ বুখারি) আমরাও প্রতিদিন অন্তত ১০–৭০ বার ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলে তাওবা ও আত্মশুদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে পারি।
৫. কোরআন-সুন্নাহর আলোকে আত্মপর্যালোচনা: প্রতিদিন অন্তত একটি আয়াত বা হাদিস পড়ুন এবং নিজেকে প্রশ্ন করুন- এই নির্দেশনা আমি কতটা মানছি? কোন দিকটিতে আমার আরও উন্নতির প্রয়োজন?
আরও পড়ুন: নবীজির ঘোষণা—এই ৫ দোয়া অবশ্যই জান্নাতে নিয়ে যাবে
হজরত ওমর (রা.) রাতের নিস্তব্ধতায় নিজ আমল পর্যালোচনা করতেন। তিনি বলতেন- ‘হিসাবের আগে নিজের হিসাব নাও।’ তিনি প্রায়ই কাঁদতেন এই ভেবে—আজকের আমল আল্লাহর কাছে কবুল হবে কি না। তার এই আত্মসমালোচনার চর্চাই তাকে ইসলামের ইতিহাসে একজন ন্যায়পরায়ণ ও বিচক্ষণ শাসক হিসেবে পরিচিত করেছে।
আগামী এক মাস প্রতিদিন এই পদ্ধতি অনুসরণ করুন। মাস শেষে আপনার আত্মিক পরিবর্তন নিজেই উপলব্ধি করতে পারবেন, ইনশাআল্লাহ।
প্রতিদিনের এই ছোট ছোট সচেতনতা ও চেষ্টা কেয়ামতের দিন আপনার নেকির পাল্লা ভারী করে দিতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সে-ই সফলকাম হয়েছে, যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করেছে। (সুরা শামস: ৯)
আসুন, আমরা সেই সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত হই— যারা প্রতিদিন নিজের আমল ওজন করে, ত্রুটি সংশোধন করে এবং নেকির দাঁড়িপাল্লা ভারী করার চেষ্টা করে।