ধর্ম ডেস্ক
২০ জুলাই ২০২৫, ০২:৪৫ পিএম
প্রচণ্ড দাবদাহে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইসলাম সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সুন্নাহ ও সাহাবায়ে কেরামের আমলে গরমকালীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার যে নীতিমালা পাওয়া যায়, তা আজীবন প্রাসঙ্গিক।
ক. ধীরে ধীরে পান করা
রাসুল (স.) বলেছেন, ‘তোমরা এক চুমুকে উটের মত পানি পান করো না; বরং দুই-তিনবারে (শ্বাস নিয়ে) পান কর। (তিরমিজি: ১৮৮৫)
বৈজ্ঞানিক ভিত্তি: দ্রুত পান করলে হাইপোনাট্রেমিয়া (রক্তে সোডিয়ামের অভাব) হতে পারে।
খ. বসে পান করা
পানি বসে পান করা, দাঁড়িয়ে পান করো না। (সহিহ মুসলিম: ২/১৭৩)
স্বাস্থ্য উপকারিতা: বসে পান করলে কিডনি ও পাকস্থলীতে চাপ কম পড়ে।
গ. পানপাত্রে নিশ্বাস না ফেলা
‘গ্লাসে নিঃশ্বাস ফেলো না।’ (বুখারি: ১৫৪)
বৈজ্ঞানিক ভিত্তি: গ্লাসে নিঃশ্বাস ফেললে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পানি দূষিত হতে পারে—এটি স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়।
ঘ. পরিষ্কার পাত্রে পান করা
সুন্নাহ হলো- পরিষ্কার পাত্রে পান করা। পাত্র ঢাকা অবস্থায় থাকলে ভিন্ন কথা। (ইবনে মাজাহ: ৩৪৩১)
বৈজ্ঞানিক ভিত্তি: পরিষ্কার পাত্রে পানি না খেলে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
ঙ. ডান হাতে পান করা
‘ডান হাতে পান করা। কেননা, শয়তান বাম হাত দিয়ে পান করে।’ (সহিহ মুসলিম: ২/১৭২)
আরও পড়ুন: গরমের দিনে যেসব আমলের সওয়াব বেশি
ক. ফলমূল ও তরল খাবার
আয়াত ‘আর ফলমূল থেকে খাও যা তোমার রব তোমাকে দান করেছেন।’ (সুরা নাহল: ৬৯) সুন্নাহ: রাসুল (স.) গরমে তরমুজ ও শসা খেতেন। (আবু দাউদ: ৩৮২১)
স্বাস্থ্যগত উপকার: গরমে তরমুজ ও শসার মতো ফলমূল শরীরকে হাইড্রেট রাখে ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
খ. কম খাবার, উদরপূর্তি না করা
‘পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাবার, এক-তৃতীয়াংশ পানি ও এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখো।’ (তিরমিজি: ২৩৮০)
স্বাস্থ্যগত উপকার: কম খাওয়া হজম প্রক্রিয়া সহজ করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং দীর্ঘায়ুতে সহায়ক হয়।
গ. সেহরি/ইফতারে আদর্শ মেনু
খেজুর + পানি (সুন্নাহ)। ডাবের পানি (প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট)। হালকা স্যুপ ও ফল (পুষ্টিসমৃদ্ধ) এবং ভাজাপোড়া ও ভারী খাবার পরিহার করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমে।
আরও পড়ুন: নবীজির ইফতারে থাকত যেসব খাবার
ক. সূর্যের তাপ এড়ানো
আয়াত: ‘আর তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে রাতে ও দিনে তোমাদের নিদ্রা।’ (সুরা রুম: ২৩)-এই আয়াতে দুপুরে বিশ্রামের ইঙ্গিত। হাদিস: ‘রাসুল (স.) দুপুরে ‘কায়লুলা’ (সংক্ষিপ্ত ঘুম) নিতেন।’ (মুসলিম: ৫৯৫১)
স্বাস্থ্যগত উপকার: দুপুরে হালকা বিশ্রাম দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় ও কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
খ. গাছের ছায়ার ফজিলত
হাদিস: ‘যে মুসলিম গাছ রোপণ করল, তার জন্য রয়েছে সদকায়ে জারিয়ার সওয়াব।’ (মুসলিম: ১৫৫২)
প্রয়োগ: বাড়ির আঙিনায় ছায়াদানকারী গাছ (নিম, আম) লাগানো উপকারী।
গ. পোশাকের নির্বাচন
সুন্নাহ: হালকা সাদা পোশাক পরা (মুসলিম: ২১০১)
বস্ত্রের ধরন: সুতি বা লিনেন কাপড় (শোষণক্ষমতা বেশি)
আরও পড়ুন: টি-শার্ট পরে নামাজ পড়ার বিধান
হিটস্ট্রোকের ক্ষেত্রে রাসুল (স.)-এর সুন্নাহ হলো পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত পানি ঢালা (আবু দাউদ: ৩৮৫৭)। ডিহাইড্রেশন রোধে ডাবের পানি বা লেবুপানি পান করা উত্তম (তিরমিজি: ১৮৮৫)। সানবার্ন থেকে সুরক্ষায় জয়তুন তেল ব্যবহারের নির্দেশনা রয়েছে (ইবনে মাজাহ: ৩৩১৯)। এছাড়া অতিরিক্ত গরমে ভারী কাজ এড়িয়ে ছায়াযুক্ত স্থানে বিশ্রাম নেওয়া উচিত।
১. গরম থেকে সুরক্ষার দোয়া: اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْحَرِّ وَالْبَرْدِ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিনাল হাররি ওয়াল বারদি’ (হে আল্লাহ! আমি উত্তাপ ও শীত থেকে তোমার আশ্রয় চাই) (বর্ণনাকারী: আবু হুরায়রা (রা.), আবু দাউদ ৫০৯০, সহিহ-আলবানি)
২. বৃষ্টির দোয়া: اللَّهُمَّ صَيِّباً نَافِعاً ‘আল্লাহুম্মা সায়্যিবান নাফিআন’। (হে আল্লাহ! আমাদের উপকারী বৃষ্টি দান করুন) (বুখারি: ১০৩২)
শেষ কথা, ইসলামি জীবনব্যবস্থা গ্রীষ্মের স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলায় একটি ভারসাম্যপূর্ণ পদ্ধতি দিয়েছে। পানিপান থেকে শুরু করে খাদ্যাভাস ও পরিবেশ নির্বাচন—সবক্ষেত্রেই রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। এগুলো অনুসরণ করলে শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি ইবাদতের শক্তি বৃদ্ধি পাবে ইনশাআল্লাহ।