images

ইসলাম

মানুষ হত্যা: কী শাস্তি অপেক্ষা করছে পরকালে

ধর্ম ডেস্ক

১৩ জুলাই ২০২৫, ১২:৪০ পিএম

ইসলামে মানুষের জীবন অত্যন্ত পবিত্র ও সম্মানিত। নিরপরাধ মানুষ হত্যাকে ইসলামে সবচেয়ে জঘন্য অপরাধগুলোর মধ্যে গণ্য করা হয়েছে। কোরআন ও হাদিসে এ অপরাধের ভয়াবহতা এবং শাস্তি সম্পর্কে স্পষ্ট সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে।

কোরআনের কঠোর হুঁশিয়ারি

আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘যে ব্যক্তি মানুষ হত্যা কিংবা জমিনে সন্ত্রাস সৃষ্টির কারণ ব্যতীত কাউকে হত্যা করবে সে যেন তামাম মানুষকেই হত্যা করল। আর যে মানুষের প্রাণ বাঁচালো, সে যেন তামাম মানুষকে বাঁচালো।’ (সুরা মায়েদা: ৩২)

এই আয়াতে স্পষ্টভাবে বোঝানো হয়েছে যে, একজন নিরপরাধ মানুষের জীবনহরণ পুরো মানবতাকে হত্যার শামিল।

আরও পড়ুন: জুলুম অনেক বড় গুনাহ

হাদিসে মানবহত্যার ভয়াবহতা

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- ‘মুসলিম ভাইকে গালি দেওয়া গুনাহ, আর তাকে হত্যা করা কুফুরির শামিল।’ (সহিহ মুসলিম: ১২৪)। আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘কবিরা গুনাহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় গুনাহ হলো আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করা, নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা।’ (বুখারি: ৬৮৭১, মুসলিম: ৮৮)

এখানেও স্পষ্টভাবে মানুষ হত্যার কঠিন পরিণতির ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।

আখেরাতে মানুষহত্যার পরিণতি

আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম—সে সেখানে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার উপর ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিশাপ দিয়েছেন এবং তার জন্য প্রস্তুত রয়েছে মহাশাস্তি।’ (সুরা নিসা: ৯৩)

কেয়ামতের দিন প্রথম বিচার হবে রক্তপাতের। হাদিসের ভাষায়- ‘কেয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে মোকদ্দমার ফায়সালা হবে তা হলো, রক্তপাত বা হত্যা সম্পর্কিত।’ (বুখারি: ৬৩৫৭)  নিহত ব্যক্তি হত্যাকারীর মাথার অগ্রভাগ নিজ হাতে ধরে এ কথা বলতে বলতে আরশের কাছে নিয়ে আসবে ‘হে প্রভু! সে আমাকে হত্যা করেছে।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৫৫১, তিরমিজি: ২৯৫৫)

আরও পড়ুন: ছোট-বড় সব গুনাহ মাফের দোয়া ও আমল

ইসলামি আইনে শাস্তির বিধান

শরিয়তে হত্যার শাস্তি হলো কিসাস (প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ) অথবা দিয়াত (রক্তপণ)। তবে ক্ষমা করার ব্যবস্থাও রয়েছে। আল্লাহ বলছেন- ‘হে মুমিনগণ, নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের উপর ‘কিসাস’ ফরজ করা হয়েছে। ... তবে যাকে কিছুটা ক্ষমা করা হবে তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে, তাহলে সততার অনুসরণ করবে...।’ (সুরা বাকারা: ১৭৮)

তবে দুনিয়াতে ক্ষমা করা হলেও আখেরাতের শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই, যদি আল্লাহ ক্ষমা না করেন।

শেষ কথা, মানুষ হত্যা শুধু আইনি অপরাধ নয়—ইসলামে এটি একটি চরম ও সীমালঙ্ঘনীয় পাপ। কোরআন-হাদিসে বারবার এই জঘন্য অপরাধের কঠোর নিন্দা করা হয়েছে। তাই একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো মানবতার সেবা করা এবং প্রাণহানির মাধ্যমে চিরকালীন আখেরাতের ধ্বংস ডেকে না আনা।