ধর্ম ডেস্ক
০৮ জুলাই ২০২৫, ০৮:১১ পিএম
বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ। নবীজি (স.) বৃষ্টির পানি দিয়ে ওজু করতেন এবং এর ব্যবহারকে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ বলেছেন (আবু দাউদ: ১১২, তাহারাত অধ্যায়)। জলবায়ু পরিবর্তনের এই যুগে এ সুন্নাহ বাস্তবায়ন পরিবেশ সংরক্ষণ ও পানির টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে।
ক. কোরআনের নির্দেশনা: ‘আমি আকাশ থেকে পরিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করি’ (সুরা ফুরকান: ৪৮)। এ আয়াতে বৃষ্টির পানির পবিত্রতা ও উপকারিতার ইঙ্গিত রয়েছে।
খ. হাদিসের বর্ণনা: ‘নবীজি (স.) বৃষ্টির পানি দিয়ে ওজু করতেন (সহিহ মুসলিম: ৬১২)। হাদিস বিশেষজ্ঞদের মতে, সাহাবায়ে কেরামও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করতেন (ফিকহুল ইসলামি: ৪/২৩১)।
ক. পানির পবিত্রতা: ইমাম নববির ‘আল-মাজমু’ গ্রন্থে (৩/১৮৫) উল্লেখ আছে- ‘বৃষ্টির পানি সবচেয়ে পবিত্র, কারণ তা সরাসরি আল্লাহর রহমত।’
খ. সংরক্ষণের নিয়ম: পাত্র পরিষ্কার রাখা, ঢাকনা ব্যবহার করা এবং ৩ দিন পর পর পানি পরিবর্তন করা (ফিকহুল ইসলামি: ৪/২৩১) ‘তিন দিনের বেশি স্থির পানি জমিয়ে রেখো না।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ১৯৪৯)
আরও পড়ুন: বৃষ্টিতে পানি স্পর্শ করাসহ ৪টি কাজ করতেন নবীজি (স.)
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০২৩ সালের গবেষণায় প্রমাণিত- বৃষ্টির পানিতে ক্ষতিকর মিনারেল নেই, pH মাত্রা ৬.৮-৭.২ (মানবদেহের জন্য আদর্শ) এবং মাটির উর্বরতা বাড়ায় ৪০%।
ক. গ্রামীণ এলাকায়: টিনের ছাদে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ। প্রতি বর্গমিটার ছাদে বছরে ১,০০০ লিটার পানি সংরক্ষণ সম্ভব।
খ. শহুরে প্রয়োগ: মসজিদের ছাদে রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং এবং ইসলামি ব্যাংকের অর্থায়নে ‘সুন্নাহ ওয়াটার প্রজেক্ট’।
উল্লেখ্য, ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের ‘সুন্নাহ ওয়াটার প্রজেক্ট’ ইতিমধ্যে ৫০টি মসজিদে রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম স্থাপন করেছে, যা নবীজি (স.)-এর সুন্নাহকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য:
আরও পড়ুন: বৃষ্টির মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার যেসব উপকার করেন
ড. ফারহানা ইসলাম (জলবায়ু বিশেষজ্ঞ) বলেন, ‘বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ইসলামের একটি পরিবেশবান্ধব শিক্ষা। এটি বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য অপরিহার্য।’
১. মসজিদ-মাদ্রাসায় রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং চালু
২. সরকারি ভবনে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করা
৩. স্কুলে ইসলাম ও বিজ্ঞানের সমন্বয়ে শিক্ষা
একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস: ‘মুসলমান কখনো পানির অপচয় করে না, এমনকি প্রবহমান নদীতে থাকলেও’ (মূলভাব: সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪২৫)
তথ্যসূত্র
১. তাফসিরে ইবনে কাসির (সুরা ফুরকান)
২. ফিকহুল ইসলামি, ৪র্থ খণ্ড
৩. বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের রিপোর্ট ২০২৩