ধর্ম ডেস্ক
০৭ জুলাই ২০২৫, ১২:৫১ পিএম
আইয়ামে বিজ বা চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজা ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ নফল ইবাদত। এই রোজার বিশেষ ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.) বহু হাদিস বর্ণনা করেছেন। আসুন জেনে নিই এই রোজার বিস্তারিত ফজিলত ও মাসায়েল।
এই রোজা রাখা মোস্তাহাব। ইমাম নববি (রহ.) বলেন- ‘আইয়ামে বিজের রোজা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।’ (আল-মাজমু ৬/৩৮২)
তবে উল্লেখ্য যে, নির্ভরযোগ্য আলেমদের বড় একটি দল এই রোজার বিশেষ ফজিলত বর্ণনা করলেও একমত যে না রাখলে গুনাহ হবে না। যেমন ইমাম ইবনে কুদামা (রহ.) আল-মুগনি গ্রন্থে (৩/১৭৯) স্পষ্ট করেছেন- ‘এটি মোস্তাহাব আমল, ফরজ বা ওয়াজিব নয়।’
সুরা ইনসানের ৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন- ‘তারা আল্লাহর প্রেমে মিসকিন, ইয়াতিম ও বন্দীকে আহার করায়।’
ইমাম কুরতুবি (রহ.) তাফসিরে বলেন- ‘এই আয়াতের তাফসিরে অনেক সাহাবি আইয়ামে বিজের রোজার কথা উল্লেখ করেছেন।’ (তাফসিরে কুরতুবি: ১৯/১৩২)
ইবনে আব্বাস (রা.), মুজাহিদ (রহ.) প্রমুখ সাহাবি ও তাবেইন থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তারা এ আয়াতের ‘আহার করায়’ (ইত'আমুত তা'আম) শব্দের ব্যাখ্যায় বলেছেন- ‘এটি বিশেষত সেই সব লোকদের কথা যারা আইয়ামে বিজের রোজা রাখেন এবং রোজার দিনে ইফতারের সময় মিসকিনদের খাওয়ান।’ (তাফসিরে তাবারি: ২৪/৭৮)
আরও পড়ুন: সোম-বৃহস্পতিবার নফল রোজা রাখার গুরুত্ব ও ফজিলত
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমার প্রিয় বন্ধু রাসুলুল্লাহ (স.) আমাকে তিনটি আমলের নির্দেশ দিয়েছিলেন- মাসে তিন দিন রোজা রাখা, দুই রাকাত চাশতের নামাজ পড়া এবং বিতর নামাজের আগে না ঘুমানো।’ (বুখারি: ১১৭৮, মুসলিম: ৭২১)
ইবনু মিলহান আল-কায়সী (রহ.) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) আইয়ামে বিজ অর্থাৎ চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে সওম পালনে আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। বর্ণনাকারী বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, এগুলো সারাবছর সওম রাখার সমতুল্য। (আবু দাউদ: ২৪৪৯)
১. গুনাহ মাফের কারণ (মুসলিম: ১১৬২)
২. জান্নাতে বিশেষ মর্যাদা লাভ (শারহু মুসলিম: ৮/৩৬)
৩. সারাবছর রোজার সমতুল্য সওয়াব (আবু দাউদ: ২৪৪৯; নাসায়ি: ২৪২০)
৪. দুনিয়ায় বরকত ও রিজিকে প্রশস্ততা (মুসনাদ আহমদ: ৮/৩০৫, সহিহ ইবনে হিব্বান: ৩৪৭১)
ইমাম ইবনে রজব (রহ.) বলেন- ‘আইয়ামে বিজের রোজা রাখলে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে বিশেষ রহমত দান করেন।’ (লাতাইফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা ২৩৪)
আরও পড়ুন: বিভিন্ন প্রকার নফল রোজা
১. চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখা
২. রাতেই নিয়ত করা উত্তম
৩. সাহরি ও ইফতারের সময় সাধারণ রোজার মতোই
১. কাজা রোজা থাকলে প্রথমে তা আদায় করা উত্তম
২. শাওয়ালের ছয় রোজার সাথে সমন্বয় করা যাবে
৩. অসুস্থ হলে পরবর্তীতে রাখা যাবে
শেষ কথা, আইয়ামে বিজের রোজা ইসলামের একটি সহজ কিন্তু ফজিলতপূর্ণ আমল। প্রতিমাসে এই তিনদিন রোজা রাখার মাধ্যমে আমরা রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সুন্নাতের অনুসরণ করতে পারি এবং আল্লাহর বিশেষ রহমত লাভ করতে পারি। আসুন আমরা এই মহান সুন্নাতের অনুসরণ করি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করি।