ধর্ম ডেস্ক
০৬ জুলাই ২০২৫, ১২:৩২ পিএম
ইসলামি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহররম। এই মাসের ১০ তারিখ, যা ‘আশুরা’ নামে পরিচিত, মুসলিম উম্মাহর জন্য গভীর তাৎপর্য বহন করে। আশুরা কেবল একটি তারিখ নয়, এটি ইতিহাসের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী। একদিকে মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলের ফেরাউনের জুলুম থেকে মুক্তির দিন, অন্যদিকে কারবালার মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি—যেখানে নবীজি (স.)-এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.) সত্য ও ন্যায়ের পথে শাহাদাত বরণ করেন।
অনেকের মাঝে এই দুটি ঘটনা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, আশুরা বলতে শুধু কারবালার শোকই বোঝায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ দুটি ঘটনা সম্পূর্ণ আলাদা, যদিও সময়গতভাবে একই দিনে সংঘটিত। আশুরার দিনে আল্লাহর রহমত ও মুক্তির বার্তা যেমন রয়েছে, তেমনি কারবালার ঘটনা থেকে আমরা পাই আদর্শিক সংগ্রামের অনন্য দৃষ্টান্ত।
এই প্রতিবেদনে আমরা আশুরা ও কারবালার ঐতিহাসিক পটভূমি, ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্ব, শিক্ষা এবং এ সংক্রান্ত কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা ও সতর্কতা নিয়ে আলোচনা করব। আশুরার রোজার ফজিলত থেকে শুরু করে কারবালার চেতনা—সবকিছুই এখানে সন্নিবেশিত হয়েছে যাতে পাঠক এই পবিত্র দিনটির সঠিক তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারেন।
‘নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।’ (সূরা আহজাব: ২১)
এই আয়াতের আলোকে আমরা আশুরা ও কারবালার ঘটনাবলী থেকে কী শিক্ষা নিতে পারি, তা জানাতেই এই প্রয়াস।
আশুরা শব্দটি আরবি ‘আশারা’ (দশ) থেকে এসেছে, যা মহররম মাসের ১০ তারিখকে নির্দেশ করে। ইসলামের ইতিহাসে এই দিনটি বিশেষভাবে স্মরণীয়, কারণ এই দিনে আল্লাহ তাআলা মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: আশুরার রোজা রাখতে না পারলে অন্তত এই আমলগুলো মিস করবেন না
রাসুলুল্লাহ (স.) মদিনায় হিজরতের পর দেখলেন ইহুদিরা আশুরার দিনে রোজা রাখে। তিনি জানতে পারলেন, এটি মুসা (আ.)-এর মুক্তির স্মরণে পালিত হয়। তখন তিনি বললেন- ‘মুসা (আ.)-এর অনুসরণে তোমাদের চেয়ে আমরা বেশি হকদার।’ (বুখারি: ২০০৪)
তাই তিনি সাহাবিদের আশুরার রোজা রাখার নির্দেশ দেন এবং ইহুদিদের থেকে ভিন্নতা বজায় রাখতে ৯ ও ১০ মহররম অথবা ১০ ও ১১ মহররম—এই দুই দিন রোজা রাখার পরামর্শ দেন।
১. নবীদের আদর্শ অনুসরণ: মুসা (আ.)-এর মুক্তি স্মরণ করে নবী-রাসুলদের আদর্শকে ধারণ করা।
২. শুকরিয়া আদায়: আল্লাহর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
৩. অনুকরণ নয়, সুন্নাহর অনুসরণ: ইহুদিদের অনুকরণ না করে ইসলামি পদ্ধতিতে আমল করা।
৬১ হিজরির ১০ মহররম, কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসাইন (রা.) ও তাঁর সঙ্গীগণ ইয়াজিদ বাহিনির হাতে নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করেন। এটি ইসলামি ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মান্তিক অধ্যায়।
আরও পড়ুন: মহররম মাসে যেসব রসম-রেওয়াজ থেকে দূরে থাকবেন
ইয়াজিদের অন্যায় শাসন মেনে নিতে অস্বীকার করে ইমাম হোসাইন (রা.) সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ান। তিনি ইয়াজিদের কাছে সংলাপের প্রস্তাব দেন, কিন্তু ইয়াজিদ বাহিনি তা প্রত্যাখ্যান করে। কারবালায় অসম যুদ্ধে ইমাম হোসাইন (রা.) ও তাঁর ৭২ জন সঙ্গী শাহাদাত বরণ করেন।
১. অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করা: যত বাধা-বিপত্তি আসুক, অন্যায়কে মেনে না নেওয়া এবং সত্যের পথে অটল থাকা।
২. আল্লাহর রাস্তায় সবর করা: কঠিনতম পরিস্থিতিতেও ঈমান অটুট রাখা।
৩. ঐক্য ও আদর্শের লড়াই: বিভেদ নয়, ইসলামের সঠিক পথে অবিচল থাকা।
রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনে নতুন কিছু সৃষ্টি করবে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।’ (বুখারি: ২৬৯৭)
শেষ কথা, আশুরা ও কারবালা—দুই ঘটনারই শিক্ষা গভীর। আশুরা আমাদেরকে আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া ও নবীদের আদর্শ মনে করিয়ে দেয়। অন্যদিকে, কারবালা শিক্ষা দেয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে দৃঢ়তা ও ঈমানি শক্তির।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই দিনগুলোর প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন এবং বিদআত থেকে বেঁচে থাকার শক্তি দিন। আমিন।