ধর্ম ডেস্ক
০৪ জুলাই ২০২৫, ০১:০০ পিএম
মানব ইতিহাসের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ আদর্শ মুহাম্মাদ (স.)-এর জীবন থেকে নেয়া দশটি মৌলিক শিক্ষা- যেখানে প্রতিটি নির্দেশনা কোরআন-হাদিসের দলিলে ভিত্তি করে আজকের অস্থির বিশ্বেও সমানভাবে প্রযোজ্য। তাঁর শিক্ষাগুলো কেবল ধর্মীয় বিধান নয়, বরং ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ গঠনের সার্বজনীন রূপরেখা। আসুন জানি সেই জীবনদর্শন, যা চৌদ্দশ বছর পরও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক ও কল্যাণময়।
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন সত্যের মূর্তপ্রতীক।
দলিল: ‘সত্যবাদিতা জান্নাতের পথ দেখায়।’ (বুখারি: ৬০৯৪)
বাস্তব প্রয়োগ: ব্যবসায়-বাণিজ্যে সততা বজায় রাখা এবং কথায়-কাজে মিল রাখা
অপমান-নির্যাতনেও অটুট থাকত তাঁর অপরিসীম ধৈর্য।
দলিল: তায়েফবাসীর পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় তাঁর ধৈর্যধারণ। (বুখারি; নবীয়ে রহমত, পৃষ্ঠা-১৫৪)
‘আর আপনি ধৈর্যধারণ করুন, আপনার ধৈর্য হবে আল্লাহর সাহায্যেই।’ (সুরা নাহাল: ১২৭)
বাস্তব প্রয়োগ: বিপদ-আপদে ধৈর্যধারণ এবং অহেতুক ক্রোধ পরিহার
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন অপ্রতিরোধ্য।
দলিল: ‘অন্যায়ভাবে কখনো পক্ষপাতিত্ব করো না।’ (বুখারি: ২৩১৮)
বাস্তব প্রয়োগ: ছোট-বড় সবার সাথে ন্যায়বিচার এবং পক্ষপাতহীন সিদ্ধান্ত গ্রহণ
আরও পড়ুন: বিদায় হজের ভাষণে কী বলেছিলেন নবীজি
জ্ঞানচর্চাকে তিনি করেছিলেন ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
দলিল: বদর যুদ্ধের বন্দীদের মুক্তিপণ হিসেবে শিশুদের শিক্ষাদান
‘জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরজ।’ (ইবনে মাজাহ: ২২৪)
বাস্তব প্রয়োগ: দৈনিক কমপক্ষে ৩০ মিনিট জ্ঞানচর্চা এবং সন্তানদের শিক্ষায় বিনিয়োগ
শারীরিক ও আত্মিক পবিত্রতাকে দিয়েছিলেন বিশেষ গুরুত্ব।
দলিল: ‘পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক।’ (মুসলিম: ২২৩) নিয়মিত মিসওয়াক ব্যবহার (বুখারি: ৮৮৭)
বাস্তব প্রয়োগ: দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পূর্বে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা
আরও পড়ুন: ইসলাম ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে, নবীজির ভবিষ্যদ্বাণী
দানশীলতায় তিনি ছিলেন সবচেয়ে উদার।
দলিল: রমজান মাসে সাধারণ সময়ের চেয়ে অনেক গুণ বেশি দান করতেন। ‘দানকারীর হাত গ্রহীতার হাতের উপর উত্তম।’ (বুখারি: ১৪২৬)
বাস্তব প্রয়োগ: মাসিক আয়ের ২.৫% সদকা দেওয়া এবং গরিব প্রতিবেশীদের সাহায্য করা
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান তাঁর নীতি।
দলিল: মদিনা সনদ (ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলিমদের মধ্যে শান্তিচুক্তি); হুদাইবিয়ার সন্ধি (১০ বছর মেয়াদী যুদ্ধবিরতি)
বাস্তব প্রয়োগ: অমুসলিম প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, মতপার্থক্যেও শান্তিপূর্ণ সমাধান খোঁজা
নারীকে অধিকারবঞ্চিত করার যুগে তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন নারীর মর্যাদা।
দলিল: ‘তোমাদের মধ্যে সে উত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম।’ (তিরমিজি: ১১৬২) ‘নারীদের সাথে উত্তম আচরণ কর।’ (বুখারি: ৩৩৬৯)
বাস্তব প্রয়োগ: স্ত্রীর মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া, কন্যাশিশুদের শিক্ষায় বিশেষ মনোযোগ এবং পরিবারে নারীর সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিতকরণ
আরও পড়ুন: নবীজির জীবনী পড়ার উপকারিতা
প্রতিটি মুমিনের কষ্টে ব্যথিত হতেন বিশ্বনবী (স.)।
দলিল: ‘তোমাদের জন্য এসেছেন এমন রাসুল যিনি তোমাদের কষ্টে কষ্ট পান।’ (সুরা তাওবা: ১২৮)
বাস্তব প্রয়োগ: মুসলিম উম্মাহর দুঃখ-কষ্টে অংশীদার হওয়া এবং বিপদগ্রস্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসা
প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর ওপর ছিল তাঁর অগাধ ভরসা।
দলিল: গুহার মধ্যে আবু বকর (রা.)-কে সান্ত্বনা: ‘চিন্তা করো না, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন’। ‘যদি তোমরা আল্লাহর ওপর ভরসা কর, তিনি তোমাদের অপরিমিত রিজিক দেবেন।’ (তিরমিজি: ২৩৪৪)
বাস্তব প্রয়োগ: সকল কাজে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা এবং প্রচেষ্টার পর ফলাফল আল্লাহর ওপর ছেড়ে দেওয়া।
১. পরিবার জীবনে: স্ত্রী-সন্তানের সাথে নম্র আচরণ এবং পারিবারিক সিদ্ধান্তে সবার মতামত নেওয়া
২. সমাজ জীবনে: প্রতিবেশীর হক আদায় এবং গরীব-দুঃখীর সাহায্যে এগিয়ে আসা
৩. আত্মিক উন্নয়নে: দৈনিক কোরআন অধ্যয়ন এবং নামাজে খুশু-খুজু অর্জনের চেষ্টা
৪. অর্থনৈতিক জীবনে: হালাল রুজি অর্জন এবং হারাম থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা।
শেষ কথা, নবীজি (স.)-এর শিক্ষা বাস্তবায়নই পারে আমাদের ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে। আসুন এই মহামূল্যবান শিক্ষাগুলোকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করি।
সূত্র: কোরআনুল কারিম, সহিহ বুখারি ও মুসলিম, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, সিরাতে ইবনে হিশাম, ফিকহুস সিরাহ