ধর্ম ডেস্ক
২৯ জুন ২০২৫, ০৪:৪০ পিএম
অজু ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা নামাজের চাবিকাঠি। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে অজুর ফজিলত সম্পর্কে বহু বর্ণনা রয়েছে। এই প্রতিবেদনে আমরা অজুর ধর্মীয় গুরুত্ব, ফজিলত ও আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে এর উপকারিতা তুলে ধরব।
আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নামাজের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন মুখমণ্ডল ও হাত কনুইসহ ধৌত কর...।’ (সুরা মায়েদা: ৬)
রাসুল (স.) বলেন- ‘যে ব্যক্তি অজু করে এবং অজু সুন্দরভাবে করে, তার গুনাহগুলো তার দেহ থেকে বের হয়ে যায়, এমনকি নখের নিচ থেকেও।’ (সহিহ মুসলিম: ২৪৫)
নবীজি আরও বলেছেন, ‘অজু করার পর শাহাদা পাঠকারীর জন্য জান্নাতে ৮টি দরজা খোলা হবে, সে যেকোনো দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে।’ (সহিহ ইবনে খুজাইমা: ১৭৩)
আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘কেয়ামতের দিন আমার উম্মতকে এমন অবস্থায় ডাকা হবে যে তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অজুর প্রভাবে উজ্জ্বল থাকবে।’ (সহিহ বুখারি: ১৩৬)
আরও পড়ুন: অজুর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যেসব দোয়া পড়বেন
আধুনিক বিজ্ঞান অজুর নিম্নোক্ত স্বাস্থ্যগত সুবিধা নিশ্চিত করেছে-
ক. শারীরিক উপকার
রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি: অজুর সময় হাত-পা ধোয়ার মাধ্যমে ক্যাপিলারি রক্তপ্রবাহ বাড়ে।
ব্যাকটেরিয়া দূরীকরণ: মুখ ও নাক পরিষ্কার করলে ৮০% জীবাণু দূর হয় (WHO গবেষণা)।
ত্বকের স্বাস্থ্য: নিয়মিত অজু ত্বকের রোমকূপ পরিষ্কার রাখে।
খ. মানসিক উপকার
স্ট্রেস কমায়: পানি স্পর্শ মানসিক চাপ ৩৫% কমাতে পারে (Journal of Behavioral Medicine)।
মনোযোগ বৃদ্ধি: অজুর পর মস্তিষ্কের আলফা তরঙ্গ বৃদ্ধি পায়, যা ধ্যানের সমতুল্য।
আরও পড়ুন: টয়লেট বাথরুম একসঙ্গে, অজু শুদ্ধ হবে?
ঘুম থেকে উঠে: ‘শয়তান তোমাদের ঘুমানোর সময় মাথার পিছনে ৩টি গিঁট লাগিয়ে দেয়, অজু করলে তা খুলে যায়।’ (সহিহ বুখারি: ৩২৬৯)
গোসলে: গোসলের আগে অজু করলে তা সমস্ত গুনাহ মোচন করে (সুনানে নাসায়ি)।
কোরআন স্পর্শ: পবিত্র ও অজু অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াতের সওয়াব অনেকগুণ বেশি। এমনকি গ্রহণযোগ্য ফুকাহায়ে কেরামের মতে, অজু ছাড়া কোরআন স্পর্শ জায়েজ নেই।
১. পায়খানা ও পেশাবের রাস্তা দিয়ে কিছু বের হওয়া। যেমন বায়ু, পেশাব-পায়খানা, পোকা ইত্যাদি। (হেদায়া: ১/৭)
২. শরীরের কোনো স্থান থেকে রক্ত, পুঁজ, বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া। (হেদায়া : ১/১০)
৩. মুখ ভরে বমি করা। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১২২১)
৪. থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ১৩৩০)
৫. চিৎ বা কাত হয়ে হেলান দিয়ে ঘুম যাওয়া। (মুসনাদে আহমদ: ২৩১৫; সুনানে আবু দাউদ: ২০২)
৬. পাগল, মাতাল ও বেহুঁশ হলে। (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক: ৪৯৩; বুখারি: ৬৪৬; তিরমিজি: ৭২)
৭. নামাজে উচ্চৈঃস্বরে হাসি দিলে। (দারা কুতনি: ৬১২)
অজু শুধু ধর্মীয় বিধান নয়, এটি পূর্ণাঙ্গ পরিচ্ছন্নতার উৎকৃষ্ট প্রক্রিয়া। যারা নিয়মিত অজু করে, আল্লাহ তাদের জন্য রেখেছেন অগণিত ফজিলত। আসুন আমরা এই সহজ ইবাদতকে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ করি। ‘আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা তাওবা: ১০৮)
তথ্যসূত্র: সহিহ বুখারি ও মুসলিম; WHO-এর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গবেষণা; Journal of Behavioral Medicine (2018); তাফসির ইবনে কাসির