ধর্ম ডেস্ক
২৫ জুন ২০২৫, ০৭:৩৮ পিএম
সৌদি আরব ১১ মাসের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর অবশেষে উন্মোচন করতে যাচ্ছে কাবার নতুন গিলাফ, যা ইসলামি কারুশিল্পের এক অপূর্ব নিদর্শন। ৪৭টি হাতে তৈরি রেশমি প্যানেল, সোনালি ও রূপালী সুতো দিয়ে বোনা ৬৮টি কোরআনিক আয়াত এবং ১৪০০ কেজিরও বেশি ওজন—এই নতুন কিসওয়া একটি ভিন্ন মাত্রার পবিত্রতা এবং সৌন্দর্য উপস্থাপন করে।
এই বছরের কিসওয়া তৈরি হয়েছে কিং আবদুল আজিজ কমপ্লেক্স ফর দ্য কিসওয়া অব দ্য কাবা-তে। গত জুলাই মাসে এর উৎপাদন শুরু হয়, যেখানে ডিজাইনার, শিল্পী, ক্যালিগ্রাফার এবং বয়ন বিশেষজ্ঞরা একত্রিত হয়ে কোরআনিক আয়াত এবং অলঙ্করণের পরিকল্পনা করেন। এই প্রক্রিয়াটি ১১ মাসব্যাপী ছিল, যেখানে সাত ধরনের উন্নত মানের কাপড় ব্যবহৃত হয়েছে।
এবারের কিসওয়াতে ৪৭টি প্যানেল তৈরি হয়েছে সোনালি সূচিকর্মসহ, যা কাবার বিখ্যাত ‘হিজাম’ বা বেল্টের মতো। প্রতিটি প্যানেল, কাপড়ের রঙ এবং সূচিকর্ম অত্যন্ত যত্নের সাথে নির্বাচিত হয়েছে, যাতে কাবার পবিত্রতার সাথে মিল রেখে তা প্রস্তুত হয়। বাইরের স্তর কালো রেশম দিয়ে তৈরি, যা দীপ্তিময় এবং টেকসই। ভিতরের স্তরে রয়েছে সবুজ রেশম, যা ঐক্য ও শান্তির প্রতীক, এবং সাদা সুকারি কাপড়, যা কাঠামোগত দৃঢ়তা নিশ্চিত করে।
আরও পড়ুন: কাবা শরিফ সম্পর্কে অবাক করা কিছু ঐতিহাসিক তথ্য
প্রতি বছরের মতো এবারও কিসওয়াতে ৬৮টি কোরআনিক আয়াত বোনা হয়েছে সোনালি রুপার সুতো দিয়ে, যা আল্লাহর নাম, ঈমানের ঘোষণা, কাবার মাহাত্ম্য এবং একত্ববাদের বার্তা বহন করে। এসব আয়াতের মধ্যে রয়েছে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব, দয়া, ঐক্য এবং ভক্তির বিষয়বস্তু।
আজ, ২৫ জুন ২০২৫ (১ মহররম, ১৪৪৭ হিজরি), এশার নামাজের পর পবিত্র কাবার গায়ে নতুন কিসওয়া পরানো হবে। হারামাইন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, এই শুভক্ষণে কাবার প্রাঙ্গণ আলোর সাজে সজ্জিত থাকবে। মুসল্লিদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং লাইভ সম্প্রচারের আয়োজন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: হজের গুরুত্ব ও ফজিলত
কিসওয়ার পরিবর্তন কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়; এটি মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, পবিত্রতা এবং নববর্ষের শুরুতে আত্মশুদ্ধির প্রতীক। কাবার নতুন গিলাফের এই শুভ মুহূর্ত বিশ্ব মুসলিমদের হৃদয়ে এক বিশেষ স্থান দখল করে নেয়। প্রতি বছর হিজরি নববর্ষ উপলক্ষে এই মুহূর্তটি মুসলমানদের কাছে গভীর আধ্যাত্মিক এবং আবেগপ্রবণ হয়ে থাকে।
এবারও যেমন, চোখ ভিজে যাবে কোটি কোটি মুসলমানের—যারা সরাসরি এই মহামুহূর্ত দেখতে না পারলেও, হৃদয়ে তা ধারণ করে নেবেন। কাবার নতুন রূপে সবসময় মুসলমানদের আত্মশুদ্ধির, ভালোবাসার এবং পবিত্রতার প্রতীক হয়ে থাকবে।