ধর্ম ডেস্ক
২৫ জুন ২০২৫, ০৬:৪৫ পিএম
ইসলামে সরলতা বা সহজ জীবনযাপন মানুষের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। মহানবী (স.) সরল মানুষদের বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন, যাদের অন্তর পবিত্র, চরিত্র নিষ্কলুষ এবং যাদের মধ্যে অহংকার বা হিংসা নেই। ইসলামের দৃষ্টিতে, এই ধরনের মানুষের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে। আসুন, জানি, রাসুল (স.) সরল মানুষদের সম্পর্কে কী বলেছেন।
রাসুলুল্লাহ (স.) একাধিক হাদিসে সরল, ভদ্র, এবং ন্যায়ের প্রতি আগ্রহী মানুষের গুরুত্ব ও মর্যাদা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রত্যেক বিশুদ্ধ অন্তরের অধিকারী সত্যভাষী ব্যক্তি সর্বোত্তম।’ (ইবনে মাজাহ: ৪২১৬)। সরল মানুষের চরিত্র এমন হয় যে তাদের মধ্যে গুনাহ, হিংসা, আত্মঅহংকার বা কপটতা থাকে না। তাদের অন্তর পবিত্র এবং তারা সবসময় সত্য বলার চেষ্টা করেন। এরা মানুষের প্রতি সদয়, নম্র, এবং অহংকারহীন।
রাসুল (স.) আরও বলেছেন, ‘মুমিন ব্যক্তি সরল ও ভদ্র প্রকৃতির হয়ে থাকে; কিন্তু পাপিষ্ঠ ব্যক্তি ধোঁকাবাজ ও নির্লজ্জ হয়।’ (আবু দাউদ: ৪৭৯০)। সরলতার মধ্যে রয়েছে হৃদয়ের নিষ্কলুষতা এবং বিশুদ্ধতা। এমন মানুষদের মধ্যে কোনো ঈর্ষা বা হিংসা থাকে না, তারা সহজভাবে জীবন যাপন করেন এবং নিজেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে পরিচালিত করেন।
আরও পড়ুন: সদা সত্য বলার পুরস্কার
রাসুল (স.) সরল মানুষদের জান্নাতি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি কি তোমাদের জান্নাতি মানুষের সংবাদ দেব না? আর তারা হলো সরলতার দরুণ দুর্বল প্রকৃতির লোক।’ (মুসলিম, মেশকাত: ৫১০৬)। এটি প্রমাণ করে যে সরল মানুষরা আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদা পান এবং তাদের জন্য জান্নাতের পথ সহজ হয়ে যায়।
রাসুল (স.) বলেছেন, ‘অসীম সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি সে, যে নিজের রাগ সংবরণ করতে জানে এবং মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকে।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৯)। সরল মানুষরা খুব কম রেগে যান, তারা নিজেদের ক্রোধ ধরে রাখতে সক্ষম। এর মাধ্যমে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করেন এবং জান্নাতে যাওয়ার পথে একধাপ এগিয়ে থাকেন।
রাসুল (স.) সাহাবিদের বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের কাছে সহজ-সরল, নম্রভাষী এবং সদাচারী, তার জন্য জাহান্নাম হারাম।’ (তিরমিজি: ২৪৮৮)। সহজ-সরল জীবনযাপন মানুষকে আল্লাহর প্রিয় বানায় এবং তাদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ নিশ্চিত করে।
আরও পড়ুন: জান্নাতি মানুষের কিছু বৈশিষ্ট্য
এমন সহজ-সরল মানুষরা আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি সহানুভূতিশীল ও শ্রদ্ধাশীল থাকে। তারা কখনও অন্যদের হেয় করতে চায় না, বরং তাদের মাঝে একে অপরের প্রতি সদয় মনোভাব থাকে। সরলতা হলো এক ধরনের বৈশিষ্ট্য যা মানুষের চরিত্রকে আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় করে তোলে।
রাসুল (স.) সরলতার গুরুত্ব এতটাই বেশি দিয়েছেন যে তিনি বলেন, ‘তোমরা (জান্নাতে) একে অপরের সঙ্গে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করবে না। পরস্পর শত্রুতা করবে না। পারস্পরিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করবে না। তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে থাকবে।’ (সহিহ মুসলিম: ৬৪২৪)। এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, জান্নাতে একে অপরের সঙ্গে কোন ধরনের শত্রুতা বা বিদ্বেষ থাকবে না, বরং সব কিছু হবে একদম সরল, খাঁটি ও পরিষ্কার।
শেষ কথা, রাসুল (স.) সরলতার বিষয়ে যা বলেছেন, তা আমাদের জন্য একটি আদর্শ। সরলতা আমাদের অন্তরকে পরিষ্কার ও পবিত্র রাখে। যখন আমরা সরলতা ও বিনয়কে জীবনের মূলমন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করি, তখন আমাদের জীবনে শান্তি, স্বাচ্ছন্দ্য এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সহজ হয়ে যায়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সরলতা, পবিত্রতা এবং নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।