ধর্ম ডেস্ক
১২ জুন ২০২৫, ০৬:৫৫ পিএম
মহামারি বা সংক্রামক ব্যাধি আবারও ছড়িয়ে পড়ার কথা বিভিন্ন মাধ্যমে বলাবলি করছে মানুষ। এতে আতংকিত নয়; বরং সচেতনতা ও সাবধানতাই ইসলামের নির্দেশনা। ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, যেখানে ব্যক্তিগত ও সামাজিক স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। করোনা বা যেকোনো মহামারি মোকাবেলায় হাদিসে বর্ণিত সতর্কতামূলক পদক্ষেপগুলো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
কোনো রোগ ছড়িয়ে পড়লে মানুষের মধ্যে অকারণে আতঙ্ক ছড়ানো, গুজব রটানো, মনগড়া তথ্য ছড়ানো ইসলামে অনুচিত। কোরআনে বলা হয়েছে— ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের কাছে যদি কোনো ফাসেক ব্যক্তি সংবাদ নিয়ে আসে, তা যাচাই করো।(সুরা হুজরাত: ৬)
যেকোনো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে মুসলিম সমাজের উচিত তাতে মজে না যাওয়া এবং প্রসারে সহযোগিতা না করা। বরং যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যমে প্রকৃত খবর ও সে সম্পর্কে সচেতন থাকা ও সচেতন করাই কর্তব্য। কোনো সংবাদ যাচাই-বাছাই না করে প্রচার করলে ইসলামের দৃষ্টিতে সে ব্যক্তি একজন মিথ্যুক। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘সব শোনা কথা প্রচার, ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৯২)
আরও পড়ুন: বাড়ছে করোনার সংক্রমণ, ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ২৮
আল্লাহ তাআলা গুজব রটানোকে শয়তানের কাজ বলেও অভিহিত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তাদের কাছে নিরাপত্তা বা ভয়ের কোনো সংবাদ পৌঁছে, তখন তারা তা প্রচার করে। যদি তারা তা (সংবাদটি) রাসুল বা তাদের দায়িত্বশীল ব্যক্তির দৃষ্টিগোচর করত, তবে তাদের (দায়িত্বপ্রাপ্ত) অনুসন্ধানকারীরা তার যথার্থতা নির্ণয় করতে পারত। তোমাদের প্রতি যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত না থাকত, তবে সামান্যসংখ্যক ব্যতীত সবাই শয়তানের অনুসরণ করত।’ (সুরা নিসা: ৮৩)
নবী করিম (স.) সংক্রামক রোগে আক্রান্ত এলাকায় অযথা যাতায়াত না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ‘যখন তোমরা কোনো এলাকায় প্লেগ (মহামারি) হতে শুনো, সেখানে প্রবেশ করো না। আর যদি সেখানে থাকো, তবে সেখান থেকে বাইরে যেও না।’ (সহিহ বুখারি: ৫৭২৮, মুসলিম: ২২১৮)
এটি বর্তমানকালের কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশনের অনুরূপ সুন্নাহনীতি।
আরও পড়ুন: ঘরের ভেতরে কীভাবে গড়ে তুলবেন ভাইরাস-বিরোধী সুরক্ষা বলয়?
ইসলামে প্রতিদিন পাঁচবার অজু করা, হাত ধোয়া, নখ কাটা, মুখ ধোয়া, নাক পরিষ্কার করা ইত্যাদি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত সুন্নাহ, যা স্বাস্থ্যবিধি মানারই অংশ। নবী কারিম (স.) বলেছেন— ‘পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক।’ তাই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সন্দেহজনক যেকোনোকিছুর সম্মুখীন হলে তা এড়িয়ে চলতে হবে। নবীজি বলেছেন -‘তোমার যা সন্দেহজনক তা ছেড়ে দাও, সেই জিনিস গ্রহণ করো যা সন্দেহমুক্ত।’ (তিরমিজি: ২৫১৮)
এ হাদিসে প্রমাণিত অসুস্থ ব্যক্তি বা সংক্রমণের আশঙ্কাজনক স্থান থেকে দূরে থাকা শরিয়তসম্মত সাবধানতা।
ওমর (রা.) একবার সিরিয়ার এক অঞ্চলে যাচ্ছিলেন, শুনলেন সেখানে প্লেগ (মহামারী) ছড়িয়েছে। তিনি সে এলাকা থেকে ফিরে আসেন। তখন সাহাবি আবু উবাইদা (রা.) বললেন, ‘আপনি কি আল্লাহর নির্ধারিত তাকদির থেকে পালাচ্ছেন?’ ওমর (রা.) জবাব দেন- ‘হ্যাঁ, আমরা আল্লাহর এক তাকদির থেকে আরেক তাকদিরের দিকে ফিরে যাচ্ছি।’ এরপর তাকদিরের ব্যাখ্যা দিয়ে ওমর (রা.) বললেন- তোমার উটকে যদি একটি সবুজ মাঠে চরাও তাহলে তা আল্লাহর তাকদির অনুযায়ীই চরিয়েছ। আর যদি শুষ্ক মাঠে চরাও, তাহলে তাও আল্লাহর তাকদির অনুযায়ীই চরিয়েছ। (সহিহ বুখারি: ৫৭২৯)
আরও পড়ুন: নবীজি ঝাড়-ফুঁকের সময় যে দোয়া পড়তেন
মহামারীতে আতঙ্ক নয়, বরং আল্লাহর ওপর নির্ভর করা ও দোয়া করা মুসলমানের কাজ। নবী করিম (স.) বলতেন— اللهم إني أعوذ بك من البرص والجنون والجذام ومن سيئ الأسقام উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাসি, ওয়াল জুনু-নি, ওয়াল জুজামি, ওয়া মিন সাইয়িইল আসকাম।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কুষ্ঠরোগ, মস্তিষ্কের বিকৃতি ও সব ধরনের দুরারোগ্য থেকে মুক্তি চাচ্ছি।’ (আবু দাউদ: ৫৪৯৩)
ইসলাম কোনো রোগ বা মহামারী নিয়ে ভয় বা গুজব ছড়াতে উৎসাহ দেয় না। বরং তা মোকাবেলায় বাস্তবধর্মী ও সচেতনতামূলক নির্দেশনা দিয়েছে। তাই বর্তমান সময়ে মুসলমানদের দায়িত্ব হলো আতঙ্ক নয়, বরং ইসলামি বিধান অনুসারে সচেতন থাকা এবং স্বাস্থ্যবিধি মানা।