ধর্ম ডেস্ক
১০ জুন ২০২৫, ১২:১২ পিএম
প্রতি বছর ঈদুল আজহার সময় শোনা যায়—‘এই গরুটি আমার মা-বাবার নামে কোরবানি করছি’, ‘এই কোরবানি আমার দাদার নামে’—এভাবে মৃতদের উদ্দেশ্যে কোরবানি করার প্রথা সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত। কেউ করেন দোয়ার নিয়তে, কেউবা ফরজ কোরবানির বিকল্প ভেবে। কিন্তু ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে এটি কি অনুমোদিত, নাকি বিদআত?
আল্লাহ তাআলা বলেন- فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ ‘আপনার রবের জন্য সালাত আদায় করুন এবং কোরবানি করুন।’ (সুরা কাওসার: ২) এই আয়াতে কোরবানিকে সরাসরি ব্যক্তিগত ইবাদতেরূপে উল্লেখ করা হয়েছে, যা জীবিত মানুষের পক্ষ থেকেই আদায় করা ওয়াজিব।
রাসুলুল্লাহ (স.)-ও জীবিতদের জন্যই কোরবানি করতেন। যেমন হাদিসে এসেছে- হজরত আয়েশা ও আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রাসুল (স.) কোরবানির ইচ্ছা করলে দুটি মোটাতাজা, মাংসল, শিংযুক্ত, ধুসর বর্ণের ও ছিন্নমুষ্ক মেষ ক্রয় করতেন। এর একটি নিজের উম্মতের যারা আল্লাহর একত্বের সাক্ষ্য দেয় এবং তাঁর নবুয়তের সাক্ষ্য দেয় তাদের পক্ষ থেকে এবং অপরটি মুহাম্মদ (স.) ও তাঁর পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে কোরবানি করতেন। (সুনানে ইবনে মাজা: ৩১২২)
উপরে বর্ণিত হাদিসে দলিল রয়েছে যে, নবীজি নিজের ইচ্ছায় উম্মতের পক্ষ থেকে নফল কোরবানি করেন। তাই ফকিহদের বক্তব্য হলো- মৃতদের পক্ষ থেকেও কোরবানি করা যাবে। এটি জায়েজ। এতে বিদআতের আশংকা নেই।
মৃত ব্যক্তি জীবদ্দশায় কোরবানির ওসিয়ত করে গেলে, তার ত্যাজ্য সম্পদের তিন ভাগের এক ভাগ থেকে কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব এবং এর গোশত নিজেরা খেতে পারবেন না; বরং গরিব-মিসকিনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। কিন্তু যদি কেউ নিজ থেকে মৃত আত্মীয়ের নামে কোরবানি করে, তবে তা নফল ইবাদত বা সদকারূপে গণ্য হবে; ফরজ বা ওয়াজিব নয়। এই গোশত স্বাভাবিক গোশতের মতোই নিজেরা খেতে পারবে এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দেওয়া যাবে। (মুসনাদ আহমদ: ০১/১০৭; ইলাউস সুনান: ১৭/২৬৮; রাদ্দুল মুহতার: ৬/৩২৬; কাজিখান: ০৩/৩৫২)
নিজের ওয়াজিব কোরবানিই ইসলামের মূল বিধান। এটি দিতে হবে। পরে মৃত ব্যক্তির নামে নফল কোরবানি করা যাবে। চাইলে নিজের ওয়াজিব কোরবানি আদায়ের সময়ও মৃত ব্যক্তিকে সওয়াব পৌঁছানোর নিয়ত করা যাবে। এতে করে নিজের কোবানিও আদায় হবে, আবার মৃতকে সওয়াবও পৌঁছানো হবে। এটা নিরাপদ পদ্ধতি।
মৃত ব্যক্তির নামে (ওসিয়ত না করলেও) কোরবানি করা শরিয়তসম্মত, তবে তা নফল ইবাদত হিসেবে, ফরজ বা ওয়াজিব মনে করলে বিদআত হবে।
সবচেয়ে নিরাপদ পন্থা হলো—নিজের ফরজ কোরবানি করে, তারপর সদকার নিয়তে মৃতের নামে আলাদা কোরবানি করা। এতে সওয়াবও হবে, বিদআত থেকেও বাঁচা যাবে।
(হিন্দিয়া: ৫/২৯২; রাদ্দুল মুহতার: ৬/৩২৬, ৯/৪৭১; মুসনাদে আহমদ: ১/১০৭; ইবনে মাজাহ: ৩১২২, ৩১৪৭; ইলাউস সুনান: ১৭/২৬৮; আল-মুহিতুল বুরহানি: ৮/৪৭৩; ফাতাওয়া কাজিখান, ফাতাওয়া বাযযাযিয়া, মাজমাউল আনহুর, ফাতহুল মুইন প্রভৃতি)