ধর্ম ডেস্ক
০৭ জুন ২০২৫, ০৬:২৭ পিএম
২০২৫ সালের হজ গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়ে অনুষ্ঠিত হলেও তুলনামূলকভাবে স্বস্তিদায়ক ও নিরাপদ ছিল। গত বছরের চরম গরমে ১,৩০০-এর বেশি মুসল্লির মৃত্যুর করুণ স্মৃতি থেকে যেন ভালোভাবেই শিক্ষা নিয়েছে সৌদি সরকার। দেশটির আগাম প্রস্তুতি, কঠোর ব্যবস্থাপনা, পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা ও সচেতনতা কার্যক্রমের কারণে এবারের হজকে ঘিরে ব্যাপক প্রশংসা এসেছে দেশি-বিদেশি মুসল্লিদের কাছ থেকে।
শুক্রবার সৌদির হজ ও ওমরা বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তীব্র গরম থাকা সত্ত্বেও এবারের হজে গরমজনিত কারণে কোনো হজযাত্রীর মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়নি। গরমজনিত অসুস্থতার হারও গতবারের তুলনায় প্রায় ৯০ শতাংশ কম ছিল।
২০২৪ সালের হজে সরকারি নিবন্ধনের বাইরে প্রায় অর্ধলক্ষ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেছিলেন। কড়াকড়ির ঘাটতির কারণে তারা হজে এলেও কোনো ধরনের স্বাস্থ্যসেবা বা আনুষ্ঠানিক তত্ত্বাবধায়নের আওতায় ছিলেন না। ফলে অপ্রতিরোধ্য গরমে মৃত্যুহার ছিল আশঙ্কাজনক। অসংখ্য মানুষ বেহুঁশ হয়ে রাস্তায় পড়ে ছিলেন—সেই করুণ চিত্র বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছিল।
এবার সে অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সৌদি সরকার ছিল সর্বোচ্চ সতর্ক। হজের প্রতিটি ধাপে নেওয়া হয়েছিল সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা।
আরও পড়ুন: গাজার মুসলমানদের ঈদ কাটলো যেভাবে
চলতি বছরের হজে মিনায় হাজিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হজ কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট সময়ের আগে তাঁবুর বাইরে বের হতে দেয়নি। তীব্র গরমের সময় যেন হাজিরা খোলা আকাশের নিচে না বের হন—এ জন্য কঠোর নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হয়। তাঁবুগুলোর ভেতরে কুলিং সিস্টেম, ছায়াযুক্ত পরিবেশ এবং চিকিৎসা সহায়তার ব্যবস্থা রাখা হয়। তাওয়াফের সময়ও তীব্র গরম থেকে রক্ষা পেতে এবং হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হাজিদের ছাতা ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে এবার।
হজ ও ওমরা মন্ত্রণালয় জানায়, হাজিদের জন্য ছায়াযুক্ত পথ ও বিশ্রামের স্থান বাড়ানো হয়। পানির ব্যবস্থা, চিকিৎসাসেবা, প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক এবং হটলাইনের মতো সুবিধা এবার আগের যেকোনো বছরের চেয়ে বেশি বিস্তৃত ছিল।
বিবৃতিতে বলা হয়— ‘ভিশন ২০৩০-এর অংশ হিসেবে স্বাস্থ্যসেবা ও ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। এবারের হজ আমাদের সেই পরিকল্পনার বাস্তব ফলাফল।’
আরও পড়ুন: তীব্র রোদে ছাতা মাথায় তাওয়াফ করছেন হাজিরা (ভিডিও)
সৌদি পরিসংখ্যান সংস্থা গাস্তাত (GASTAT) জানায়, ২০২৫ সালের হজে অংশ নিয়েছেন ১৬ লাখ ৭৩ হাজার ২৩০ জন হজযাত্রী। এদের মধ্যে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬৫০ জন সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ হজযাত্রী, আর বাকি সবাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন।
চলতি বছরের হজ প্রমাণ করেছে, সুপরিকল্পিত ও সচেতন ব্যবস্থাপনা থাকলে হাজার হাজার মানুষের সমাগমেও নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব। গরমের মতো প্রাকৃতিক চ্যালেঞ্জও দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছে সৌদি সরকার। হজ ব্যবস্থাপনায় সৌদির এই তৎপরতা ভবিষ্যতের হজ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি প্রশংসনীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল।