ধর্ম ডেস্ক
৩০ মে ২০২৫, ০৪:৫০ পিএম
ইসলামে কোরবানি শুধু একটি সামাজিক অনুষ্ঠান নয়; এটি ত্যাগ, তাকওয়া ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক মহান ইবাদত। কোরবানির পশু জবাই করার সময় একজন মুসলমানের হৃদয়ে আল্লাহর জন্য ত্যাগের যে স্পৃহা জাগে, তা তার ঈমান ও খোদাভীতিকে আরও দৃঢ় করে তোলে। ইসলামি শিক্ষায় নিজ হাতে কোরবানির পশু জবাই করার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, যার বহু হাদিস ও সাহাবায়ে কেরামের আমলের প্রমাণ পাওয়া যায়।
হাদিসে এসেছে, হজরত আনাস রা. বলেন, ‘রাসুল (স.) এক ঈদে ধূসর রঙের শিংওয়ালা দুটি দুম্বা কোরবানি করলেন। তিনি সেগুলো নিজ হাতে জবাই করলেন এবং জবাইকালে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর’ বললেন।’ (বুখারি: ৫৬২৪)
রাসুল (স.) উট, গরু ও ভেড়া—সবই কোরবানি করতেন। এক্ষেত্রে তিনি নিজেই জবেহ করতেন। প্রখ্যাত তাবেয়ি হজরত নাফে (রহ.) ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ঈদগাহে (কোরবানির পশু) জবেহ করতেন ও নাহর (উটের কোরবানি) করতেন। (বুখারি: ৫৫৫২)
এসব হাদিস থেকে বোঝা যায়, রাসুল (স.) নিজ হাতে কোরবানি করাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন এবং সাহাবারা তাঁর এ আমল অনুসরণ করতেন। তাই কোরবানির পশু নিজে জবাই করা উত্তম। তবে অন্যকে দিয়েও জবাই করাতে পারবে। এক্ষেত্রে কোরবানিদাতা পুরুষ হলে জবাইস্থলে তার উপস্থিত থাকা ভালো। (ফাতোয়ায়ে শামি: ৫/২৭)
আরও পড়ুন: কোরবানি করলে দুনিয়া-আখেরাতে যে প্রতিদান পাবেন
আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিজে জবাই করলে তাকওয়া প্রকাশ পায়। এই তাকওয়াই কোরবানির মূল উদ্দেশ্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং তোমাদের তাকওয়াই পৌঁছে।’ (সুরা হজ: ৩৭) তাই নিজে কোরবানির পশু জবাই করার মাধ্যমে অন্তরকে আল্লাহর স্মরণমুখর রাখা ও আত্মাকে জাগ্রত রাখা উত্তম।
যে ব্যক্তি নিজে জবাই করতে অক্ষম, সে যেন জবাইয়ের সময় পাশে উপস্থিত থাকে। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে দোয়া পড়ে। আন্তরিকভাবে তাকওয়া ও ত্যাগের অনুভূতিকে মনে ধারণ করে। এতে তার সওয়াব লাভ হবে। ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘হে ফাতিমা, ওঠো, তোমার কোরবানির পশুর কাছে যাও। কেননা তার রক্তের প্রথম ফোঁটা প্রবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তোমার কৃত সব পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। আর বলো, ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বিজালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন।’ (সুনানুল কুবরা: ১৯১৬২; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ৫৯৩৫)
আরও পড়ুন: কোরবানির অংশীদারদের কি সমমনা হতে হয়?
ঈদুল আজহার দিনের আমলসমূহের মধ্য থেকে পশু কোরবানি করার চেয়ে কোনো আমল আল্লাহ তাআলার নিকট অধিক প্রিয় নয়। কেয়ামতের দিন এই কোরবানিকে তার শিং, পশম ও ক্ষুরসহ উপস্থিত করা হবে। আর কোরবানির রক্ত জমিনে পড়ার আগেই আল্লাহ তাআলার নিকট কবুল হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা সন্তুষ্টচিত্তে কোরবানি কর। (জামে তিরমিজি: ১৪৯৩)
কোরবানির পশু নিজে জবাই করা রাসুলুল্লাহ (স.)-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত, যা তাকওয়া ও আল্লাহর সন্তুষ্টির বহিঃপ্রকাশ। এটি শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং নিজের আত্মা ও ঈমানকে শুদ্ধ করার একটি উপায়। তাই, শারীরিকভাবে সক্ষম হলে নিজ হাতে কোরবানির পশু জবাই করা উত্তম এবং ফজিলতপূর্ণ।