ধর্ম ডেস্ক
২৬ মে ২০২৫, ০৬:২৫ পিএম
পবিত্র জিলহজ মাসে কোরবানির ইবাদতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত ও মোস্তাহাব আমল রয়েছে। এর একটি হলো—কোরবানির ইচ্ছা থাকা ব্যক্তির জন্য চুল, নখ ও শরীরের অন্যান্য পশম না কাটা। এটি নবীজি (স.)-এর গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত বা মোস্তাহাব আমল।
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরবানির ইচ্ছা রাখে, সে যেন জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে কোরবানি করা পর্যন্ত তার চুল ও নখ না কাটে।’ (সহিহ মুসলিম: ১৯৭৭, আবু দাউদ: ২৭৮২)
এ হাদিসে প্রতীয়মান হচ্ছে, কোরবানির নিয়তকারীর জন্য কোরবানি পর্যন্ত চুল, নখ, গোঁফ ও অন্যান্য পশম না কাটা মোস্তাহাব বা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত।
তবে, এই বিধান তখনি প্রযোজ্য হবে যখন অবাঞ্ছিত পশম ও নখ না কাটার সময় ৪০ দিন থেকে বেশি না হয়। কেননা, সহিহ হাদিসে আছে, আনাস (রা.) বলেন, গোঁফ কর্তন করা, নখ কাটা, বগল পরিষ্কার করা ও নাভির নিচের পশম পরিষ্কার করার বিষয়ে আমাদের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল যে, আমরা যেন ৪০ দিনের বেশি বিলম্ব না করি। (সহিহ মুসলিম: ১/১২৯; হাশিয়াতুত তহতাবি আলালমারাকি: ২৮৭; আহসানুল ফতোয়া: ৪/৪৯৬)
যদিও এই বিধান কোরবানিদাতার জন্য, তবে যারা কোরবানি দিতে পারছেন না, তারাও ইচ্ছা করলে এই আমল অনুসরণ করতে পারেন। এই সুন্নত পালনে রয়েছে বড় ফজিলত ও সওয়াব। রাসুল (স.) নিজেই এক সাহাবিকে বলেন— ‘তুমি চুল, নখ ও মোঁচ কাটবে (ঈদের দিন) এবং নাভির নিচের পশম পরিষ্কার করবে। এটাই আল্লাহর দরবারে তোমার পূর্ণ কোরবানি বলে গণ্য হবে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ২৭৮৯; সুনানে নাসায়ি: ৪৩৬৫)
আরও পড়ুন: তাকবিরে তাশরিক পড়ার নিয়ম ও ফজিলত
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) জিলহজ মাসে একজন মহিলার সন্তানকে চুল কাটতে দেখে বলেন- ‘ঈদের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করলে ভালো হতো।’ (মুস্তাদরাকে হাকেম: ৭৫২০) মুতামির ইবনে সুলাইমান আততাইমি বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, ইবনে সিরিন (রহ) জিলহজের দশকে চুল কাটা অপছন্দ করতেন। এমনকি এই দশকে ছোট বাচ্চাদের মাথা মুণ্ডন করাকেও অপছন্দ করতেন। (আল মুহাল্লা, ইবনে হাজম: ৬/২৮)
চুল-নখ না কাটার এই নিষেধাজ্ঞা কেবল সেই ব্যক্তির জন্য, যিনি নিজের অর্থ দিয়ে কোরবানির পশু কিনেছেন। অন্যদের ওপর তা আরোপিত নয়। শাইখ বিন বায (রহ) বলেন, আলেমগণের বিশুদ্ধ মতানুযায়ী, ‘তারা চুল কাটা ও নখ কাটার নিষেধাজ্ঞার আওতায় নেই। হুকুমটি কোরবানিকারীর জন্য খাস, যিনি তার সম্পদ থেকে কোরবানির পশুটি ক্রয় করেছেন।’ (ফতোয়ায়ে ইসলামিয়্যা: ২/৩১৬)
সুতরাং, কোরবানি করার নিয়ত থাকলে জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে চুল, নখ ও অন্যান্য ক্ষৌরকর্ম থেকে বিরত থাকা মোস্তাহাব আমল বা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। আর যাঁরা কোরবানি দিতে পারছেন না, তাঁরাও সওয়াবের আশায় এ আমলটি করতে পারেন।
পরিশেষ বলা যায়, চুল-নখ না কাটার এই ছোট সুন্নতটি একটি বড় সওয়াবের দরজা খুলে দিতে পারে। ঈমানদার মুসলমানের উচিত, কোরবানির সময় হুবহু নবীজির (স.) নির্দেশনা অনুযায়ী নিজেকে পরিচালিত করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুন্নতের ওপর চলার তাওফিক দিন। আমিন।