ধর্ম ডেস্ক
২৬ মে ২০২৫, ০৫:২৮ পিএম
হজ পালনশেষে অধিকাংশ হাজিই মদিনা সফর করেন। যদিও এটি হজের অংশ নয়, তবুও নবীজি (স.)-এর রওজা জিয়ারত এবং তাঁর শহরে ইবাদতের অসাধারণ ফজিলত রয়েছে। তাই মদিনায় অবস্থানকালে নিচের গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো পালন করা উচিত।
হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘যে আমার ওফাতের পর আমার (রওজা) জিয়ারত করল, সে যেন আমার জীবদ্দশায় আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করল।’ (দারাকুতনি: ২৬৯৪)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, মসজিদুল হারাম (কাবা) ছাড়া আমার এ মসজিদে সালাত আদায় করা অন্যান্য মসজিদের তুলনায় এক হাজার গুণ বেশি সওয়াব। (বুখারি: ১১৯০)
নবীজি (স.) বলেছেন, ‘আমার ঘর (বর্তমান দাফনের স্থান) ও মিম্বরের মাঝের জায়গা জান্নাতের বাগানগুলোর একটি আর আমার মিম্বর আমার হাউজের উপর অবস্থিত। (বুখারি:১১৯৬, ১১২০; মুসলিম: ২৪৬৩)
ইয়াজিদ ইবনে আবু উবাইদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি সালামা বিন আকওয়ার সঙ্গে আসতাম এবং মুসহাফের নিকটবর্তী পিলারের কাছে নামাজ পড়তাম। অর্থাৎ রিয়াজুল জান্নাতে। আমি বললাম, হে আবু মুসলিম, আপনাকে দেখি এ পিলারের কাছে নামাজ পড়তে বেশি আগ্রহী? তিনি বলেন, আমি নবী (স.)-কে এ পিলারের কাছে নামাজ পড়তে আগ্রহী দেখেছি। (বুখারি: ৫০২; মুসলিম: ৫০৯)
আরও পড়ুন: রিয়াজুল জান্নাহ: যে স্থানকে জান্নাতের বাগান বলেছেন নবীজি
মদিনায় অবস্থানকালীন সময় জুমার দিন পেলে জুমার নামাজও মসজিদে নববিতে আদায় করা ভালো। নবীজি বলেছেন, ‘কেউ যদি আমার মসজিদে চল্লিশ ওয়াক্ত নামাজ একাধারে আদায় করে, এর মধ্যে কোনো নামাজ না ছুটে যায়, তাহলে তার জন্য লেখা হয়, জাহান্নাম থেকে মুক্তি, শাস্তি থেকে পরিত্রাণ এবং সে হয় নিফাক মুক্ত।’ (মুসনাদে আহমাদ: ১২১৭৩; তাবরানি: ৫৪৪)
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো।’ (সুরা আহজাব: ৪১)
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব থেকে একটি অক্ষর তেলাওয়াত করল তার বিনিময়ে সে একটি নেকি পাবে, আর একটি নেকির বিনিময় হবে ১০ গুণ। এ কথা বলছি না যে আলিফ-লাম-মিম একটি অক্ষর, বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর, মিম একটি অক্ষর।’ (তিরমিজি: ২৯১০)
জাবালে উহুদ ও শহীদদের কবর : উহুদযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন হামজা (রা.)-সহ তাঁদের অনেকেই উহুদ প্রান্তরেই শায়িত আছেন। সম্ভব হলে তাঁদের কবর জিয়ারত করবেন। রাসুলুল্লাহ (স.) শহিদদের কবর জিয়ারত করতে যেতেন। (দ্র. সহিহ বুখারি: ৩৬৪৭)
মসজিদে কুবায় নামাজ: রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, যে ব্যক্তি নিজের বাড়িতে পবিত্রতা অর্জন করলো অর্থাৎ অজু করলো, এরপর মসজিদে কুবায় এসে নামাজ আদায় করলো, তার জন্য একটি ওমরার সমান সওয়াব রয়েছে।’ (ইবনু মাজাহ: ১৪১২; নাসায়ি: ৬৯৯, আত-তারগিব: ১১৮১)
আরও পড়ুন: হজের সময় পিরিয়ড শুরু হলে করণীয়
রাসুল (স.) বলেন, ‘তোমরা জুমার দিনে বেশি বেশি আমার ওপর দরুদ পাঠ করো। কারণ, তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।’ (আবু দাউদ: ১৫৩১)
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা বলে, ‘আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ’, তারপর তারা অবিচল থাকে—তাদের কোনো ভয় নেই, তারা চিন্তিতও হবে না।’ (সুরা আহকাফ: ১৩)
রাসুল (স.) বলেন, ‘সাবধান! দেহে একটি মাংসপিণ্ড আছে, যদি তা ঠিক থাকে, গোটা দেহ ঠিক থাকে…।’ (সহিহ বুখারি: ৫২; সহিহ মুসলিম: ১৫৯৯)
মদিনা হলো নবীপ্রেমিকদের ভালোবাসার শহর। এ শহরে অবস্থানকালে প্রতিটি মুহূর্ত যেন ইবাদত, দোয়া, দরুদ ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে পূর্ণ হয়। আল্লাহ আমাদের মদিনা সফরকে কবুল করুন এবং রাসুলুল্লাহ (স.)-এর প্রেমে আমাদের অন্তর ভরে দিন। আমিন।